শেষ আপডেট: 14th September 2023 02:33
দ্য ওয়াল ম্যাগাজিন ব্যুরো: আজ কৌশিকী অমাবস্যা (Devi Kaushiki)। তারাপীঠ সহ অসংখ্য মন্দিরে আজ মা পুজো পাবেন দেবী কৌশিকী রূপে। ভাদ্র মাসের এই বিশেষ অমাবস্যা তিথিতে দেবীর পুজো করলে সাধকের কুলকুণ্ডলিনী চক্র জেগে ওঠে। ভক্তদের মনোবাসনা পূর্ণ হয়, শত্রুনাশ হয়। কৌশিকী অমাবস্যার এই তিথি অত্যন্ত শুভ। বৌদ্ধ ও হিন্দু তন্ত্রে এই বিশেষ দিনের অনেক মাহাত্ম্যকথা প্রচলিত আছে। এই দিনেই না কি খুলে যায় স্বর্গ আর নরকের পথ। শুভ ও অশুভ শক্তি দুইই প্রবল হয়। দেবী কৌশিকীর উপাসনা করে এই তিথিযোগে নানান বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী হন সাধকেরা। এখন প্রশ্ন হল কে এই দেবী কৌশিকী?
বিন্ধ্যাচলবাসিনী হলেও দেবী কৌশিকীকে দেবী চণ্ডীরই আরেক রূপ হিসাবে পুজো করা হয়। দেবী চণ্ডী আবার আদ্যাশক্তি মহামায়ার রূপ, দশমহাবিদ্যার অন্যতম দেবী। সব মিলিয়ে শিবজায়া পার্বতীর সঙ্গে দেবী কৌশিকীর একটা স্পষ্ট যোগসূত্র মেলে। আবার কংস কারাগারে আবির্ভূত হওয়া দেবী যোগমায়া আর দেবী কৌশিকীকে অভিন্ন বলে মনে করেন অনেকে। এই দেবীই কোথাও তন্ত্রমতে তারা, কোথাও বা জয়দুর্গা নামে পুজো পান ভক্তদের। অষ্টভুজা এই দেবী তাঁর আট হাতে ধরে আছেন ত্রিশূল, ঘণ্টা, তির ধনুক, শঙ্খ, চক্র, মুষল ও নরমুণ্ড।
সৃষ্টির একেবারে আদিকালে আদ্যাশক্তি মহামায়াকে নিজের কন্যা রূপে পাওয়ার আশায় কঠোর তপস্যা করেছিলেন প্রজাপতি দক্ষ। দক্ষ নিজেও ছিলেন ব্রহ্মার মানসপুত্র। তাঁর তপস্যায় তুষ্ট হলেও, একটা বেয়ারা শর্ত রেখে বসলেন দেবী। তিনি জানালেন, দক্ষের মেয়ে হয়ে জন্ম নিতে তাঁর আপত্তি নেই। কিন্তু যদি কোনওদিন পিতৃগৃহে কোনও অনাদর বা অপমান হয় তাহলে তৎক্ষণাৎ দেহত্যাগ করবেন তিনি। সেই শর্ত মেনেই দক্ষ আর প্রসূতি দেবীর কোল আলো করে জন্ম নেয় ছোট্ট ফুটফুটে এক মেয়ে। সবার ছোট, সবার আদরের সে মেয়ের নাম রাখা হয় সতী।
এই বিয়ে মেনে নিতে পারেননি দক্ষ। মূলত শিবনিন্দা করতেই বিরাট 'প্রজাপতি' যজ্ঞের আয়োজন করেন তিনি। আর সেই যজ্ঞগৃহেই ঘটে যায় চরম অঘটন। সকলের সামনে বাবার মুখে স্বামীর নিন্দা শুনে রাগে ক্ষোভে অপমানে যজ্ঞের আগুনেই প্রাণ বিসর্জন দেন দেবী সতী। দক্ষযজ্ঞ পণ্ড হওয়ার পর দেবী মহামায়া জন্ম নেন পর্বতরাজার গৃহে, তাঁর নতুন নাম হয় পার্বতী।
যজ্ঞের আগুনে প্রাণ আহুতি দেওয়ায় সতীর গৌরবর্ণ ঝলসে কালো হয়ে গেছিল। জন্মান্তরেও পার্বতীর গায়ের রং তাই শ্যামলা। আবার কেউ কেউ বলেন, মহাদেবকে স্বামী রূপে পাওয়ার জন্য নিজের চারপাশে অগ্নিকুণ্ড জ্বালিয়ে কঠোর তপস্যা করেছিলেন পার্বতী। সেই তপস্যার কষ্ট সয়েই দেবীর গায়ের রং কালো হয়ে যায়। অপরূপ সুন্দরী শ্যামবর্ণা উমাকে মহাদেব প্রায়ই আদর করে কালী বা কালিকা বলে ডাকতেন। (Devi Kaushiki)
স্কন্দপুরাণের দেবীমাহাত্ম্যম -এ, কালিকাপুরাণ ও শিবপুরাণে রয়েছে দুই রাক্ষস-ভাই শুম্ভ আর নিশুম্ভের গল্প। সেই কাহিনি অনুসারে, পুরাকালে একবার দুই অসুর ভাই শুম্ভ নিশুম্ভ, কঠোর তপস্যা করে ব্রহ্মাকে তুষ্ট করে ৷ প্রজাপতির কাছে একটা আশ্চর্য বর চেয়ে বসে দুই ভাই। সেই বর অনুসারে, ত্রিভুবনের কোনও নারী-পুরুষ-যক্ষ-দানব-মানব কেউ তাদের বধ করতে পারবে না ৷ শুধুমাত্র কোনও অযোনিসম্ভূত নারীর হাতেই তাদের মৃত্যু সম্ভব। অযোনিসম্ভূত অর্থাৎ এমন এক নারী যে কোনও মাতৃগর্ভ থেকে জন্মায়নি, তেমন কারও হাতেই মারা পড়বে এই দুই অসুর ভাই।
পৃথিবীতে এমন নারী কোথায়? এমনকি আদ্যাশক্তি মহামায়াও পর্বতরানি মেনকার গর্ভে জন্ম নিয়েছেন৷ তাই তিনিও ওঁদের নাশ করতে পারবেন না। তবু শুম্ভ নিশুম্ভের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে দেবতারা ছুটে গেলেন কৈলাশে, মহাদেব আর মহামায়ার কাছেই। তাঁদের দুর্দশার কথা শুনে মহাদেব পার্বতীকে ডেকে বললেন, "কালিকা এখন তুমিই ভরসা। তুমিই ওদের উদ্ধার কর।"
নারীর মন কীসে কখন আহত হয়, পুরুষ তা বোঝে না। সবার সামনে মহাদেবের 'কালিকা' সম্বোধনে অপমানিত হলেন দেবী পার্বতী। মনে মনে ভাবলেন তাঁর কালো গায়ের রং নিয়ে দেবতাদের সামনে মশকরা করলেন শিব। অভিমানে একা একাই দেবী চলে গেলেন মানস সরোবরের তীরে। সেখানে নির্জনে শুরু করলেন কঠোর সাধনা। তপোবলে দেবীর শরীর হয়ে উঠল ঊষ্ণ। তারপর একদিন তপস্যা শেষে চোখ মেললেন মহামায়া। স্নান করতে নামলেন মানস সরোবরের বরফঠান্ডা জলে। স্নান করে নিজের দেহের সব কালো কোষ ঝরিয়ে ফেললেন দেবী। দেখতে দেখতে পূর্ণিমার চাঁদের মতো উজ্জ্বল হয়ে উঠল তাঁর শরীর।
দেবীর শরীর থেকে ঝরে পড়া ওই কালো কোষগুলো থেকেই জন্ম নিল আর এক দেবী। সে দেবীর গাত্রবর্ণ অমাবস্যার মতো কালো। এই দেবী পার্বতীর শরীরের ঝরা কোষ থেকে জন্মেছেন, তাই তিনি কুমারী আর অযোনিসম্ভূতা। মহামায়ার এই নতুন কালো রূপই দেবী কৌশিকী। (Devi Kaushiki) ঔদ্ধত্য ও অহংকারের প্রতীক দুই দানব শুম্ভ নিশুম্ভকে হত্যা করেন তিনি।
এই কৌশিকী অমাবস্যায় প্রতি বছরই বিশেষ পুজো হয় মা তারার। লোকবিশ্বাস অনুসারে, এই অমাবস্যার রাতেই তপস্যায় সিদ্ধিলাভ করে মা তারার দর্শন পেয়েছিল সাধক বামাক্ষ্যাপা। তারাপীঠ মহাশ্মশানের শ্বেত শিমূল গাছের নিচে বসে সাধনা করেন সাধক বামদেব। ভক্তকে নিরাশ করেননি মা তারা। দেখা দেন বামদেবকে।
কৌশিকী অমাবস্যা: যেতে না পারলে ডাকযোগে পুজো দিন তারামাকে, তারাপীঠে অনলাইন নেই