শেষ আপডেট: 18th August 2023 10:27
নব্বইয়ের দশক তখন সবে শুরু হয়েছে। ১৯৮০ সালে মুক্তি পেয়েছিল বলিউডের বেতাজ বাদশা অমিতাভ বচ্চনের (Amitabh Bachchan) সিনেমা শান, ইয়ারানা, বরসাত কি এক রাত (অনুসন্ধান), নসিব, লাওয়ারিস, সিলসিলা ও কালিয়া। ১৯৮২ সালে সাত্তে পে সাত্তা, বেমিসাল, দেশপ্রেমী, নমকহালাল, খুদ্দার ও শক্তি। ১৯৮৩ সালে নাস্তিক, অন্ধাকানুন, মহান, পুকার, কুলির মত ব্লকব্লাস্টার সিনেমা।
অমিতাভের 'অ্যাংরি ইয়ংম্যান' ইমেজকে কাজে লাগিয়ে একের পর এক সুপারহিট ছবি দিয়ে যাচ্ছিলেন মনমোহন দেশাই, প্রকাশ মেহরা, যশ চোপড়া ও রমেশ সিপ্পিরা। অমিতাভ বচ্চন হয়ে উঠেছিলেন রুপালি পর্দার রবিনহুড। বিশ্বের কোণে কোণে পৌঁছে গিয়েছিল অমিতাভ বচ্চনের নাম।
কুলি সিনেমার শ্যুটিং চলাকালীন একটি অ্যাকশন দৃশ্যে আহত হয়েছিলেন অমিতাভ। গোটা মুম্বই শহর ভেঙে পড়েছিল ব্রিচ ক্যান্ডি হসপিটালের সামনে। স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল সারা দেশ। প্রার্থনা শুরু হয়েছিল মন্দির মসজিদ, চার্চ ও গুরুদ্বারে। মৃত্যুকে হারিয়ে ফিরে এসেছিলেন অমিতাভ। মৃত্যুর সঙ্গে যুঝতে যুঝতে অমিতাভ বুঝতে পেরেছিলেন, নিজের অজান্তেই ফ্যানেদের কাছে তিনি হয়ে উঠেছেন অতিমানব। যিনি কখনও হারতে পারেন না।
ইন্ডিয়ান বুক হাউসের 'মুভি ম্যাগ নামে একটি সিনেমা পত্রিকার সম্পাদিকা ছিলেন পাম্মি বক্সি। ১৯৮৩ সাল, বাড়ির বারান্দায় একদিন পাম্মি দাঁড়িয়েছিলেন। বারান্দার ঠিক নিচেই খেলা করছিল তিনটি শিশু। একটি শিশু বলেছিল, সে সুপারম্যানের মত আকাশে উড়তে পারে। দ্বিতীয় শিশুটি বলেছিল, সে ব্যাটম্যানের মত উড়ে গিয়ে যেকোনও বহুতলের ছাদে নামতে পারে। তৃতীয় শিশুটি বলেছিল, সে অমিতাভ বচ্চনের মত এক হাতে দশ দশটি বদমাশকে ঠান্ডা করে দিতে পারে।
[caption id="attachment_2315122" align="aligncenter" width="295"] পাম্মি বক্সী[/caption]
চমকে উঠেছিলেন পাম্মি। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মাথায় এসে গিয়েছিল এক অবিশ্বাস্য পরিকল্পনা। তাঁর বন্ধু এবং বিখ্যাত লেখক-গীতিকার-চিত্রনাট্যকার গুলজারকে ফোন করেছিলেন পাম্মি। বলেছিলেন তাঁর পরিকল্পনার কথা। সুপারম্যান, অরণ্যদেব, স্পাইডারম্যান, ব্যাটম্যান , ফ্ল্যাশ গর্ডনের মত অমিতাভ বচ্চনকেও সুপারহিরো হিসেবে কমিকসের পাতায় আনতে চান পাম্মি।
তাঁর কমিকসের পাতায় দেখা দেবেন স্বয়ং অমিতাভ এবং তাঁর দ্বিতীয় একটি সত্ত্বা। যে সত্ত্বাটির প্রভাবে সমাজের প্রয়োজনে অমিতাভ হয়ে উঠবেন এক অপ্রতিরোধ্য সুপারহিরো। সেই সুপারহিরোর কোনও অলৌকিক ক্ষমতা থাকবে না। শক্তি ও বুদ্ধির সঠিক মিশেলে সে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করবে। শত্রুদের হাত থেকে সমাজকে রক্ষা করে আবার ফিরে আসবে শ্যুটিং ফ্লোরে, বাস্তবের অমিতাভ বচ্চন হয়ে।
পাম্মি বলেছিলেন অমিতাভ বচ্চনের এই নতুন অবতারের কাহিনি লিখতে হবে গুলজারকেই। ইংরেজি ও হিন্দি, দুটি ভাষাতেই প্রকাশিত হবে কমিকসগুলি। পাম্মির পরিকল্পনাটি গুলজারের মনে ধরেছিল। প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলেন গুলজার।
[caption id="attachment_2315131" align="aligncenter" width="600"] গুলজার[/caption]
দরকার অমিতাভ বচ্চনের সম্মতি
কিন্তু কমিকস লেখা শুরু করলেই হবে না। সবার আগে দরকার অমিতাভ বচ্চনের সম্মতি। অমিতাভ তখন পুকার ছবির শ্যুটিং করছিলেন গোয়ায়। শ্যুটিং স্পটে পৌঁছে গিয়েছিলেন পাম্মি। অমিতাভ বচ্চনকে বলেছিলেন তাঁর পরিকল্পনার কথা। হেসে ফেলেছিলেন অমিতাভ বচ্চন। রাজি হয়েছিলেন, তবে দিয়েছিলেন একটি শর্ত। কমিকসের কিছু বই বিনামূল্যে দান করতে হবে হাসপাতাল ও অনাথাশ্রমে থাকা শিশুদের। কারণ সেখানকার জীবন ভীষণ একঘেয়ে। শর্তটি সঙ্গে সঙ্গে মেনে নিয়েছিলেন পাম্মি।
পাম্মি যখন অমিতাভের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন কাছেই ছিলেন 'পুকার' ছবির সহ অভিনেতা রণধীর কাপুর। তিনি অমিতাভকে ডেকেছিলেন অদ্ভুত একটি নামে। সেই নামেই তিনি অমিতাভকে ডাকতেন। রণধীরের 'সুপ্রিমো' ডাক শুনে উঠে গিয়েছিলেন অমিতাভ। তিনি ফেরার পর পাম্মি বলেছিলেন, "আমার সুপারহিরোর নাম হবে 'সুপ্রিমো'।" এবারও হেসে ফেলেছিলেন অমিতাভ। রাজি হয়েছিলেন কমিকসের পাতায় সুপারহিরো 'সুপ্রিমো' হতে।
[caption id="attachment_2315140" align="aligncenter" width="600"] তাঁর সুপ্রিমোর সঙ্গে রণধীর কাপুর।[/caption]
কে আঁকবেন সুপ্রিমো!
একরাশ উত্তেজনা নিয়ে মুম্বইয়ে ফিরে এসেছিলেন পাম্মি। খুঁজতে শুরু করেছিলেন এক দক্ষ চিত্রশিল্পীকে। অমিতাভ বচ্চনের দ্বিতীয় সত্ত্বাকে তুলি দিয়ে ফুটিয়ে তুলবেন। পাম্মি যোগাযোগ করেছিলেন অমর চিত্রকথার প্রবাদপ্রতিম চিত্রশিল্পী প্রতাপ মল্লিকের সঙ্গে। কিন্তু প্রতাপ মল্লিক ফিরিয়ে দিয়েছিলেন পাম্মিকে। কারণ তিনি সেযুগের হিন্দি সিনেমা একদম পছন্দ করতেন না।
প্রতাপ মল্লিক পাম্মিকে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি আঁকবেন না। তাছাড়া অমিতাভ বচ্চনের একটা সিনেমাও তিনি দেখেননি। হাল ছাড়ার পাত্রী ছিলেন না পাম্মিও। তিনি ও গুলজার আদা জল খেয়ে লেগে পড়েছিলেন প্রতাপ মল্লিককে রাজি করানোর জন্য। একসময় রাজি হয়েছিলেন প্রতাপ মল্লিক।
[caption id="attachment_2315146" align="aligncenter" width="600"] প্রতাপ মল্লিক[/caption]
সুপ্রিমোর কস্টিউমের দশটি ছবি এঁকেছিলেন প্রতাপ মল্লিক। ছবিগুলি নিয়ে অমিতাভ বচ্চনের কাছে গিয়েছিলেন পাম্মি। ছবিগুলির মধ্যে থেকে একটা কস্টিউম পছন্দ করে নিয়েছিলেন অমিতাভ। সেই ছবিতে সুপ্রিমোর পরনে ছিল গোলাপি রঙের স্কিনটাইট স্যুট। কোমর ঘিরে ছিল কোঙ্কন উপকূলের জেলেদের মত খাটো লুঙ্গি। কোমরে ছিল চওড়া বেল্ট ও পিস্তলের খাপ। বুকের কাছে ঝুলছিল চক্রের আকারের একটি বড় লকেট। পায়ে ছিল প্রায় হাঁটু পর্যন্ত উঠে আসা গামবুট। পরিচয় গোপন করার জন্য সুপ্রিমোরূপী অমিতাভ বচ্চনের চোখে ছিল বড় চশমা। যেটি দেখতে অনেকটা ঝালাই শ্রমিকদের চশমার মত।
[caption id="attachment_2315147" align="aligncenter" width="600"] সুপ্রিমো অমিতাভ[/caption]
গুলজারের কল্পনায় তৈরি হয়েছিল 'সুপ্রিমো' চরিত্র
সাধারণ মানুষের মতোই খুব হাসিখুশি এবং সহজ সরল ছিল 'সুপ্রিমো'। বাদাম খেতে খুব ভালবাসত। গান শুনতে ভালবাসত। তাই সুপ্রিমোর কাছে সবসময় থাকত একটি 'ওয়াকম্যান'। এই সহজ সরল সুপ্রিমোই শত্রুর সামনে হয়ে উঠত হয়ে উঠত ভয়ঙ্কর। কারণ অনান্য সুপারহিরোর মত সুপ্রিমোরও মন্ত্র ছিল 'দুষ্টের দমন এবং শিষ্টের পালন'।
সুপ্রিমোর দু'জন শাগরেদ ছিল। পালিত বালকদুটির নাম বিজয় ও অ্যান্টনি। অমিতাভের বেশিরভাগ সিনেমাতেই তাঁর অভিনীত চরিত্রটির নাম হত 'বিজয়' এবং 'অমর আকবর অ্যান্টনি' সিনেমায় তাঁর অভিনীত চরিত্রের নাম ছিল 'অ্যান্টনি'। তাই গুলজার ও পাম্মি এই নাম দু'টি বেছে নিয়েছিলেন।
[caption id="attachment_2315157" align="aligncenter" width="600"] সুপ্রিমোর সঙ্গে অ্যান্টনি ও বিজয়[/caption]
নব্বইয়ের দশকের ভারতীয় কমিকসে অরণ্যদেবের একাধিপত্ব ছিল। সুপ্রিমোর চরিত্রেও পড়েছিল অরণ্যদেবের প্রভাব। অরণ্যদেবের মত সুপ্রিমোরও অধীনে ছিল সমুদ্রে ভাসা নির্জন এক দ্বীপ। দ্বীপে ছিল শেরু নামের একটি সিংহ। দ্বীপ লাগোয়া সমুদ্রে ছিল সোনালি নামের এক ডলফিন। সুপ্রিমোর সর্বক্ষণের সঙ্গী হিসেবে ছিল 'শাহিন' নামের এক বাজপাখি। সুপ্রিমোকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতে সদা তৎপর শাহিনকে কমিকসে আনা হয়েছিল, অমিতাভের কুলি সিনেমার 'আল্লারাখা' নামের বাজপাখিটির অনুকরণে।
দ্য অ্যাডভেঞ্চার অফ অমিতাভ বচ্চন
ইন্ডিয়া বুক হাউসের 'স্টার' কমিকসের ব্যানারে ১৯৮৩ সালেই প্রকাশিত হয়েছিল 'দ্য অ্যাডভেঞ্চার অফ অমিতাভ বচ্চন'। সিরিজটি শুরু হয়েছিল 'দ্য লস্ট আইডল' গল্পটি দিয়ে। সমুদ্রের জল হঠাৎই ফুটতে শুরু করেছিল। 'শাহিন' বিপদ সংকেত নিয়ে এসেছিল সুপ্রিমোর কাছে। সমুদ্রের নীচে নেমেছিল সুপ্রিমো। সমুদ্রের নীচে নেমে সুপ্রিমো দেখেছিল, একদল দস্যু বিশাল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভেঙে ফেলছে ডুবে যাওয়া একটি জাহাজ।
কারণ সেই জাহাজে ছিল একটি বিগ্রহ। যেটি দক্ষিণ ভারতের একটি মন্দির থেকে ১৬৬০ সালে চুরি করা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে যেটির দাম কোটি কোটি টাকা। এরপর শুরু হয়েছিল সুপ্রিমোর সঙ্গে দস্যুদলের লড়াই। নানা ঘটনার পর, দস্যুদের পরাজিত করে সুপ্রিমো উদ্ধার করেছিল ঐতিহাসিক বিগ্রহটি। ফিরিয়ে দিয়েছিল দেশের সরকারকে।
এভাবেই একের পর এক আসতে শুরু করেছিল 'দ্য অ্যাডভেঞ্চার অফ অমিতাভ বচ্চন' সিরিজের কমিকসগুলি। প্রতিটি কমিকস শুরু হত অমিতাভ বচ্চনের হাতে লেখা একটি চিঠি দিয়ে। চিঠিতে লেখা থাকত, শিশু পাঠকদের একটি কথা গোপন রাখতে হবে। কী সেই গোপন কথা, চিঠিতে তাও জানিয়ে দিয়েছিলেন অমিতাভ। চিঠিটির শেষ লাইনে অমিতাভ লিখেছিলেন, "কাউকে বোলো না, আমিই সুপ্রিমো।"
[caption id="attachment_2315169" align="alignnone" width="600"] অমিতাভের লেখা সেই চিঠি[/caption]
সিরিজের প্রত্যেকটি অভিযান শুরু হত অমিতাভের কোনও শ্যুটিংয়ের দৃশ্য দিয়ে। শ্যুটিং চলাকালীন শ্যুটিংয়ের সেটে বিপদের খবর নিয়ে আসত 'শাহিন'। শ্যুটিংয়ের সেট থেকে সরে গিয়ে, সবার অলক্ষ্যে অমিতাভ বচ্চন পরে নিতেন সুপ্রিমোর কস্টিউম। তারপর শাহিনকে নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন নতুন অভিযানে।
প্রথমদিকের কাহিনিগুলি গুলজার লিখলেও, পরের কাহিনিগুলি গুলজারের নির্দেশনায় লিখতেন অভিনেত্রী সুধা চোপড়া ও কিছু ফ্রিল্যান্স রাইটার। চিত্রনাট্যগুলি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হত অমিতাভ বচ্চনের কাছে। অমিতাভ পড়তেন, কিন্তু কোনওদিনই চিত্রনাট্য বা আঁকার ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করতেন না।
[caption id="attachment_2315217" align="aligncenter" width="600"] কমিকসের শ্যুটিং দৃশ্যে অমিতাভ[/caption]
সুপ্রিমোর কিছু বিখ্যাত অভিযান
সিরিজের একটি বিখ্যাত বই ছিল 'ইনভেসন'( হিন্দিতে 'হামলা')। পৃথিবী দখল করার চেষ্টা করেছিল এলিয়েনরা। কিন্তু পৃথিবীতে মাধ্যাকর্ষণ থাকায় পৃথিবী ছিল এলিয়েনদের বসবাসের পক্ষে অনুপযুক্ত। তাই তারা পৃথিবীতে এসে মাধ্যাকর্ষণকে নষ্ট করে দেওয়ার মেশিন তৈরি করছিল। এলিয়েনদের দেখে ফেলেছিল একটি গ্রামের বাসিন্দারা। গ্রামটিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছিল এলিয়েনরা। পৃথিবীকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সুপ্রিমো। অসামান্য সাহস ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে পরাস্ত করেছিল এলিয়েনদের। রক্ষা পেয়েছিল পৃথিবী।
সুপ্রিমোর আরও একটি বিখ্যাত কমিকসের নাম ছিল 'দ্য ডিস্যাপিয়ারিং ফ্লোর।' গল্পে দেখানো হয়েছিল, গুলিতে আহত এক পাইলট একটি ম্যাপ ফেলে দিয়েছিল। ম্যাপটি ছিল অবন্তীপুরের। সেখানকার জঙ্গলে ছিল একটি পরিত্যক্ত সোনার খনি। ম্যাপ দেখে সেখানে পৌঁছে সুপ্রিমো আবিষ্কার করেছিল এক ভয়ঙ্কর চক্রান্ত। একটি আন্তর্জাতিক অপরাধচক্র সোনার খনির মধ্যে বন্দি করে রেখেছিল কয়েকজন পরমাণুবিজ্ঞানীকে। খনিটিকে বানিয়ে ফেলেছিল পরমাণু বোমার ল্যাবরেটরি। ল্যাবরেটরিতে তৈরি পরমাণু বোমাগুলিকে তারা বিক্রি করতে চলেছিল স্বেচ্ছাচারী রাষ্ট্রনায়কদের কাছে। অপরাধচক্রটিকে ধ্বংস করে বিজ্ঞানীদের মুক্তি দিয়েছিল সুপ্রিমো। ভয়ঙ্কর পরমাণু যুদ্ধের হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল পৃথিবীকে।
'দ্য লস্ট সিটি' (বিলুপ্ত নগর) অভিযানে সাগরের তলায় 'সুপ্রিমো' আবিষ্কার করেছিল হারিয়ে যাওয়া নগর 'আটলান্টিস'। যেখানে বাস করত এক উন্নত জাতি। যেখানকার শিশুরা কিন্ডারগার্টেনে পড়া শুরুই করত হাইড্রোডাইনামিক্সের মত কঠিন বিষয় দিয়ে। তবে 'আটলান্টিস' আবিষ্কার করে বিপদে পড়তে হয়েছিল সুপ্রিমোকে। ডুবোনগরীর বিজ্ঞানী রাজা আমান্দ, বন্দি করতে চেয়েছিল সুপ্রিমোকে। কারণ স্থলে বাস করা সুপ্রিমোর ওপর আমান্দ ভয়ানক কিছু এক্সপেরিমেন্ট চালাতে চেয়েছিল। শুরু হয়েছিল রাজা আমন্দ ও সুপ্রিমোর মধ্যে লড়াই। যে লড়াইয়ে জিতেছিল সুপ্রিমো।
এভাবেই সুপ্রিমো হ্যাইজ্যাকারদের হাত থেকে বিমানে বন্দি থাকা শিশুদের মুক্ত করেছে। ধ্বংস করেছে দত্তক দেওয়ার নামে শিশুদের বিক্রি করে দেওয়ার এক আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্র। আরও অনেক অভিযান চালিয়ে পৃথিবী থেকে নির্মূল করতে চেয়েছে অপরাধ। তবে 'সুপ্রিমো অ্যান্ড দ্য ডেকইট কুইন' গল্পটি ছিল সিরিজের সব অভিযানের থেকে আলাদা। কমিকসটি পড়ে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল পাঠকদের।
কমিকসটিতে দেখানো হয়েছিল, শহর ও গ্রাম থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে শিশুরা। রহস্যের কুয়াশা সরাতে নেমেছিল সুপ্রিমো। সে জানতে পেরেছিল, শিশু অপহরণের মত ঘৃণ্য কাজে জড়িত দস্যুরানি মালান দেবী। এবং একটি পাহাড়ি ঝর্নার পিছনে থাকা গুহায় মালান দেবী শিশুদের বন্দি করে রেখেছে। এরপর দস্যুরানি মালান দেবীর দলের সঙ্গে হয়েছিল সুপ্রিমোর লড়াই।
পরাজিত দস্যুরানির কাছ থেকে সুপ্রিমো জেনেছিল চোখে জল এনে দেওয়ার মত এক ঘটনা। অকালে প্রাণ হরিয়েছিল মালান দেবীর শিশু সন্তান। সন্তানের মৃত্যুশোক ভোলার জন্যেই দস্যুরানি মালান শিশুদের অপহরণ করে নিজের কাছে রাখত। মানুষ করত সন্তানের স্নেহে। সেই প্রথম কোনও অপরাধীকে শাস্তি দেয়নি সুপ্রিমো। মালান দেবীকে ফিরিয়ে এনেছিল সমাজের মূলস্রোতে।
আচমকাই বন্ধ হয়ে গেছিল সুপ্রিমোর অভিযান
মাত্র দু'বছর চলার পর, ১৯৮৪ সালে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সুপ্রিমো কমিকস। এর মূল কারণ পাম্মি বক্সী বিয়ে করে চলে গেছিলেন আমেরিকায়। 'সুপ্রিমো' কমিকসের হাল ধরার মত দক্ষ কেউ ছিলেন না। সুপ্রিমোকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তামিলনাড়ুতে শুরু হয়েছিল রজনীকান্তের কমিকস, কেরালায় মামুট্টির কমিকস। এমনকি পরবর্তীকালে টিভি পর্দার শক্তিমানকেও কমিকসের পাতাতে নিয়ে এসেছিল ডায়মন্ড কমিকস। কিন্তু কমিকসের পাতা থেকে চিরকালের মত হারিয়ে গিয়েছিলেন অমিতাভ বচ্চনের দ্বিতীয় সত্ত্বা 'সুপ্রিমো'।
তবুও যাঁরা 'দ্য অ্যাডভেঞ্চার অফ অমিতাভ বচ্চন' পড়েছেন। আজও তাঁরা বইগুলি খোঁজেন। পুরোনো বইয়ের দোকানে কিংবা অনলাইনে। চাতকের মত অপেক্ষায় থাকেন যদি কেউ পুরোনো কপি বিক্রি করেন। ইন্টারনেটে মাঝে মধ্যে এরকম বিক্রেতার খোঁজ মেলে। দাম শুনে চমকে ওঠেন পাঠক। চার টাকা দামের কমিকস আজ তাঁকে কিনতে হবে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে।