শেষ আপডেট: 9th June 2024 21:32
দ্য ওয়াল ব্যুরো: শুক্রবার থেকেই ‘নরেন্দ্র মোদী 3.0’ ট্রেন্ডিং। রবিবাসরীয় সন্ধেয় নয়াদিল্লির রাইসিনা পাহাড়ে প্রধানমন্ত্রী পদে তৃতীয়বারের জন্য শপথ নিলেন তিনি। সেই সঙ্গে শপথ নিলেন তাঁর নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। কিন্তু মোদীর নেতৃত্বে নতুন এনডিএ সরকারেও বাংলা কোনও পূর্ণ মন্ত্রী পেল না। অতীতে অটল বিহারী বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভা বা মনমোহন সিংয়ের মন্ত্রিসভার নিরিখে এ এক বৈপরীত্য বইকি।
এদিন বাংলা থেকে দুই সাংসদ শপথ নিয়েছেন। তাঁরা হলেন বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার এবং বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। তবে তাঁদের পূর্ণ মন্ত্রী করা হচ্ছে না। দুজনকেই প্রতিমন্ত্রী করা হবে। এখানে বলে রাখা ভাল, খাতায় কলমে প্রতিমন্ত্রীদের কাজের দায়িত্ব দেওয়ার কথা থাকলেও, বাস্তবে তা কার্যত হয় না। অতীতে বাজপেয়ী ও মনমোহন মন্ত্রিসভায় দেখা গিয়েছে, প্রতিমন্ত্রীদের কাছে সেই মন্ত্রকের পূর্ণ মন্ত্রীরা কোনও ফাইলই পাঠান না। ইউপিএ সরকারের আমলে প্রতিমন্ত্রীরা একবার সমষ্টিগত ভাবে মনমোহনের কাছে এ ব্যাপারে নালিশ করেছিলেন।
মোদী জমানাতেও তার কোনও বদল ঘটেনি। বরং গত দশ বছরের মোদী জমানায় বারবার অভিযোগ উঠেছে, যে ক্যাবিনেট মন্ত্রীরাই অনেক কিছু জানতে পারেন না। প্রায় সবই প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে পরিচালিত হয়। প্রতিমন্ত্রীরা তো দূরের গ্রহ। তাঁরা কেবল আলঙ্কারিক পদ নিয়ে রয়েছেন।
এখন কৌতূহলের বিষয়, কেন মোদীর তৃতীয় মেয়াদেও বাংলা কোনও পূর্ণ মন্ত্রী পেল না।
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মতে, ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিজেপি যে নেতারা সাংসদ হয়েছিলেন, তাঁদের কোনও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা ছিল না। অনেকেই প্রথমবার সংসদ ভবন দেখেছেন। তাই প্রতিমন্ত্রী করা ছাড়া উপায় ছিল না। কারণ, পূর্ণ মন্ত্রী হতে গেলে প্রশাসনিক বিষয়ে সম্যক ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয়। দেবশ্রী চৌধুরী, জন বার্লা, বাবুল সুপ্রিয়, সুভাষ সরকার, শান্তনু ঠাকুর, সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়াদের তাই পূর্ণ মন্ত্রী করা যায়নি।
এবার বাংলায় বিজেপির আসন কমেছে। ১৮ থেকে কমে হয়েছে ১২। তাই সেই অনুপাতে মন্ত্রিসভায় বাংলা থেকে প্রতিনিধিত্ব কমিয়ে চার থেকে দুই করা হয়েছে। এবার উত্তরবঙ্গ থেকে জিতেছেন বিজেপির ৬ জন সাংসদ। দক্ষিণবঙ্গেও জিতেছেন ৬ জন। আগেই ঠিক করে নেওয়া হয়েছিল যে প্রথমবার জয়ীদের মন্ত্রী করা হবে না। সেই শর্তে প্রথমেই মনোজ টিগ্গা, কার্তিক পাল, সৌমেন্দু অধিকারী, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়দের নাম বাদ গেছে।
বিজেপির ওই কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, ভোটের খারাপ ফলের পরে রাজ্য বিজেপিতে রদবদল অবধারিত। নতুন সভাপতি হবেন। সেই কারণেই সুকান্তকে মর্যাদা দিয়ে একটা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হল। তা ছাড়া সুকান্ত লড়ে জিতেছেন। তিনি জেন্টলম্যান পলিটিশিয়ান। এলাকার কাজ করার জন্য তাঁর আগ্রহ দেখা গেছে। সাংসদ হিসাবেই তিনি তাঁর নির্বাচন কেন্দ্রের জন্য নতুন ট্রেন চালু করা বা রাস্তার ব্যবস্থা করার জন্য চেষ্টা করেছেন। সুকান্তকে মন্ত্রী করলে তার প্রভাব গোটা উত্তরবঙ্গে পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে প্রতিমন্ত্রী করায়, শান্তনুরও মর্যাদা বাড়ানোর প্রশ্ন ওঠেনি। শান্তনু মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করেন। সেই ভোটব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখেই ফের তাঁকে মন্ত্রী করা হয়েছে। তবে শান্তনুূ দ্বিতীয়বার মন্ত্রী হলেও তাঁকে প্রতি মন্ত্রী করা হল।
বিজেপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার মতে, নিশীথ প্রামানিক, সুভাষ সরকার, জন বার্লা, শান্তনু ঠাকুররা যাতে তাঁদের এলাকায় বিজেপির প্রভাব বাড়াতে পারেন, সেই জন্য তাঁদের কেন্দ্রে মন্ত্রী করা হয়েছিল। কিন্তু নিশীথকে কোচবিহারের বাইরে যেতে বিশেষ দেখা যায়নি। জন বার্লাও কেবল বালুরঘাটে আটকে ছিলেন। সুভাষ সরকার গোটা পশ্চিমাঞ্চলে ঘোরেননি। শান্তনুও তথৈবচ। তাঁদের ভূমিকায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও হতাশ।
তবে এই সব সাত-সতেরোর মধ্যে একটা মোদ্দা বিষয় রয়ে গেল। তা হল, মোদীর তৃতীয় মেয়াদেও বাংলা কোনও পূর্ণ মন্ত্রী পেল না। অথচ এই শতাব্দীর শুরু থেকে বাজপেয়ী ও মনমোহন মন্ত্রিসভায় বাংলার নেতানেত্রীরা কেন্দ্রে বড় দায়িত্ব সামলেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দু’বার রেলমন্ত্রী হওয়ার সুবাদে বাংলা প্রচুর রেল প্রকল্প পেয়েছে। নতুন নতুন মেট্রো পেয়েছে।
প্রণব মুখোপাধ্যায় কেন্দ্রে প্রতিরক্ষা, বিদেশ ও অর্থমন্ত্রী ছিলেন। তার বহু সুবিধা পেয়েছে বাংলা। প্রণবের হাত ধরেই বাংলায় অনগ্রসর এলাকার উন্নয়নে একলপ্তে ৮৭৫০ কোটি টাকার অনুদানের ঘোষণা করা হয়েছে। প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সী ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার, জল সম্পদ উন্নয়ন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী। সবচেয়ে বড় কথা মন্ত্রিসভার সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কমিটি তথা ক্যাবিনেট কমিটি অফ সিকিউরিটির সদস্য ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রণব মুখোপাধ্যায়। দিল্লিতে বাংলার সেই দাপট গত ১২ বছর ধরে আর দেখা যাচ্ছে না।
বাংলা থেকে কেন্দ্রে শেষ পূর্ণ মন্ত্রী ছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। রাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী হওয়ায় ২০১২ সালের ২৬ জুন তিনি অর্থ মন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন। মন্ত্রিসভা থেকে প্রণব সরে যাওয়ার পর বাংলা থেকে অধীর চৌধুরী রেল প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন। তার পর থেকেই সেই প্রতিমন্ত্রী ছাড়া বাংলার কপালে আর কিছু জুটল না। এক টানা এক যুগ ধরে কোনও পূর্ণ মন্ত্রী পেল না বাংলা।