Advertisement
মিঠুন চক্রবর্তী (জাত গোখরো) এবং অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (গোখরো / চন্দ্রবোড়া?) - প্রতিকী ছবি।
Advertisement
শেষ আপডেট: 10 April 2024 13:36
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলায় ভোট এলেই দেখা যাচ্ছে সাপ-খোপ বেরিয়ে পড়ছে। বাস্তবে নয়। রাজনৈতিক আঘাত-প্রত্যাঘাত ও হুঁশিয়ারির মাত্রা বোঝাতে হিস হিস করে বেরিয়ে পড়ছে জলঢোরা, বেলেবোড়া, গোখরো, কেউটে, চন্দ্রবোড়ারা।
একুশের ভোটে মিঠুন চক্রবর্তী দাবি করেছিলেন তিনি জাত গোখরো। আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি ইঙ্গিতপূর্ণভাবে বলেছেন,‘ওদের মুখোশ দেখছেন তো! কেউটের চেয়েও ভয়ঙ্কর। চেয়ারে বসেছিল কেউটে, বাইরে গোখরো’। মমতা কারও নাম করেননি। তবে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বুঝে নিয়েছেন তাঁর কথাই বলা হচ্ছে। তাই জবাবে বলেছেন, ‘হ্যাঁ, খুব বিষাক্ত। চাইলে চন্দ্রবোড়াও হয়ে যেতে পারি’।
কৌতূহল হতে পারে, সত্যিই কে বেশি বিষাক্ত? জাত গোখরো নাকি চন্দ্রবোড়া? এক ছোবলে কে আগে ছবি করে দিতে পারে?
সারা পৃথিবীতে প্রায় ৬০০ প্রজাতির বিষধর সাপ আছে যাদের মধ্যে অন্তত দুশো প্রজাতির ছোবলে মানুষের মৃত্যু হতে পারে। তবে ভারতে অন্তত ২৩৬ প্রজাতির সাপ আছে যাদের বেশিরভাগেরই বিষ নেই। কিন্তু ১৫টি প্রজাতির এমন বিষধর সাপ আছে যারা মারাত্মক। এরা এক ছোবলেই ছবি করে দিতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গে গোখরো, কেউটে, কালাচ, শঙ্খচূড় ও চন্দ্রবোড়ার কামড়েই বেশিরভাগ মৃত্যু হয়। সাধারণত ছয় প্রজাতির বিষধর সাপ বেশি দেখা যায় বাংলায়।
এখন প্রশ্ন হল, গোখরোর বিষ বেশি নাকি চন্দ্রবোড়ার? কোন সাপের কেমন বিষ সে নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন ক্যানিং হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সমরেন্দ্রনাথ রায়। সমরবাবুকে প্রায় নিয়মিত সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা করতে হয়। তাই তাঁর ব্যবহারিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দুই রয়েছে।
ডাক্তারবাবু বলছেন, কোন সাপের বিষ কত তীক্ষ্ণ তা তেমনভাবে বলা যায় না। সাপের বিষকে সাধারণত দু’ভাগে ভাগ করা যায়। এক, নিউরোটক্সিক এবং দুই, হেমোটক্সিক।
নিউরোটক্সিক বিষ থাকে কেউটে, গোখরো, শঙ্খচূড়ের। নিউরোটক্সিক বিষের আবার কয়েকটি ধরন আছে, যেমন ক্রেট, কালাচ ও শাঁখামুটির বিষের ধরন নিউরোটক্সিক। এই ধরনের বিষ শরীরের মাংসপেশিকে অসাড় করে দেয়। আমাদের শরীরের যেসব স্নায়ু শ্বাসপ্রশ্বাসে সাহায্য করে তাদের অবশ করতে শুরু করে। ফলে সেই নার্ভগুলো অকেজো হয়ে যায়। মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলে নিউরোটক্সিক বিষ।
পিট ভাইপার, স-স্কেলড ভাইপারে ( saw-scaled (carpet) vipers) এই ধরনের বিষ থাকে। আমাদের এখানে চন্দ্রবোড়ার বিষ হেমোটক্সিক। চন্দ্রবোড়ার অপর নাম ‘রাসেল’স ভাইপার’। এটি ‘ভাইপারিডি’ পরিবারভুক্ত বিষধর সাপ। হেমোটক্সিক বিষ প্রভাবিত করে রক্তের লোহিত কণিকাকে। এটি রক্তকণিকা ভেঙে দেয়। শরীরের কোষগুলিকে আক্রমণ করে।
সাপের বিষ হলুদ ও কালো রঙের এক প্রকার তরল। এটি তাদের চোখ এবং মুখের কোণের মাঝের অংশের উপরে চোয়ালের উভয় পাশে অবস্থিত বিষথলিতে উৎপন্ন হয় ও সঞ্চিত থাকে। এই বিষ নানা প্রকার প্রোটিন ও উৎসেচকের সংমিশ্রণ। যখন এরা কোনও কিছুকে কামড়ে ধরে তখন বিষথলি থেকে বিষনালির মধ্যে দিয়ে তা বিষদাঁতে এসে পৌঁছায়। এদের বিষদাঁতগুলি অনেকটা ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জের মতো কাজ করে। এই বিষ তাড়াতাড়ি আক্রান্তের রক্ত ও লসিকার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সারা দেহে। এক একটি বিষধর সাপ একবারের ছোবলে প্রায় ২৭ থেকে ৭৫ শতাংশ বিষ বের করতে পারে।
চন্দ্রবোড়া বা রাসেল ভাইপার যদি একবার ছোবলে ৪২ মিলিগ্রামও বিষ ঢালে তাহলে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি, যদি না তাকে সঠিক সময় চিকিৎসা করানো হয়। এদের বিষথলিতে ৩৫০ থেকে ৪০০ মিলিগ্রাম বিষ থাকে। পশ্চিমবঙ্গে ফি-বছর বহু মানুষের মৃত্যু হয় এই চন্দ্রবোড়ার ছোবলে। এদের বিষ হেমোটক্সিক।
স-স্কেলড ভাইপার (আমাদের এখানে দেখা যায় না) প্রচণ্ড বিষধর। এই সাপের মাত্র ৫ মিলিগ্রাম বিষেই মৃত্যুর সম্ভাবনা বহুগুণে বেড়ে যায়।
গোখরো, কেউটের বিষ নিউরোটক্সিক। সাধারণত দেখা যায় এই কোবরা প্রজাতির সাপেদের বিষথলিতে প্রায় ২৫০ মিলিগ্রাম বিষ থাকে। যদি এক ছোবলে গোখরো বা কেউটে তাদের বিষথলি থেকে মাত্র ১৫ মিলিগ্রাম বিষও ঢালে, তাহলেও একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
এশিয়ার সবচেয়ে বিষধর সাপ হল কালাচ। অর্থাৎ ‘কমন ক্রেট’। এই সাপের মাত্র ১ মিলিগ্রাম বিষে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ মারা যেতে পারে। কালাচের বিষথলিতে প্রচুর পরিমাণে বিষ থাকে। বলা যায় বিষের ভাণ্ডার। কালাচ কিন্তু একবারে ১০ জনকে কামড়াতে পারে। তার বিষ এমনই যে প্রতিটা মানুষেরই মৃত্যু হতে পারে।
চুম্বকে, মিঠুন চক্রবর্তী যে জাত গোখরোর কথা বলছেন, তার বিষ নিউরোটক্সিক। আর অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যে চন্দ্রবোড়ার কথা বলেছেন, তার বিষ হেমোটক্সিক। গোখরোর মাত্র ১৫ মিলিগ্রাম বিষ এক ছোবলে ছবি করার ক্ষমতা রয়েছে। তুলনায় চন্দ্রবোড়া বা রাসেল ভাইপারকে প্রায় তিনগুণ তথা ৪২ মিলিগ্রামের মতো বিষ ঢালতে হয়।
Advertisement
Advertisement