জমে উঠেছে গণতন্ত্রের উৎসব - দ্য ওয়াল ফাইল । ছবিঃ (বাঁ থেকে) কীর্তি আজাদ, লকেট চট্টোপাধ্যায়, সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া এবং রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: 13th April 2024 17:27
শ্যামশ্রী দাশগুপ্ত
এই তো সেদিন। রাজ্যে প্রথম পর্বের ভোট শুরু হওয়ার ঠিক এক মাস আগে। ১৯ মার্চের ভরা বসন্তে পোলবার রাজহাট পঞ্চায়েত এলাকায় প্রচারে গিয়েছিলেন লকেট চট্টোপাধ্যায়। ওলাবিবিতলায় তখন ভক্তদের ভিড়। চলছে বহু প্রাচীন রান্নাপুজো উৎসব। কোমরে শাড়ির আঁচল জড়িয়ে লকেটকে দেখা গেল বসে পড়েছেন রান্না করতে। গ্রামের মহিলাদের কেউ এগিয়ে দিলেন জল, কেউ এগিয়ে দিলেন মশলা। পরে লকেট জানালেন, ফুলকপির তরকারি রেঁধেছেন তিনি।
লকেট যেদিন ওলাবিবিতলায় ফুলকপির তরকারি রাঁধছেন, সেদিন চন্দননগরের স্বাগতম লজে হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখা গেছিল দলের কর্মীদের ভাত বেড়ে খাওয়াতে। তাঁকে পরিবেশন করতে দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছিলেন দলের কর্মীরা। ভাত একটু বেশি খেয়েছিলেন কিনা তা অবশ্য জানা যায়নি। পরবর্তীতে প্রচারে বেরিয়ে সিঙ্গুরের দই খেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠতে দেখা গেছে রচনাকে। তাঁর ব্যাখ্যায় ঝড়ও উঠেছিল হুগলির রাজনীতি। পাণ্ডুয়ায় প্রচারে গিয়ে পথের ধারে গরম ঘুগনি বিক্রি হতে দেখে সবাইকে নিয়ে সেই ঘুঘনি খেয়েও আহ্লাদিত হতে দেখা গেছে রচনাকে।
আরও পড়ুনঃ লকেট রান্না করছেন, ভাত বেড়ে দিচ্ছেন রচনা, হুগলিতে দুই সেলিব্রিটি প্রার্থীকে ঘিরে উচ্ছ্বাস
আরও পড়ুনঃ 'মিমি-নুসরতের কেরিয়ার খতম', রচনাকে সতর্ক করলেন লকেট
এ পর্যন্ত পড়ে যাঁদের মনে হচ্ছে, মেয়েরা ভোটে দাঁড়ালেও পিছু ছাড়ে না সেই শতাব্দীপ্রাচীন ছড়া 'এক কন্যা রাঁধেন বাড়েন, এক কন্যা খান'- তাঁদের বলি একটু দাঁড়ান। মাত্র দু'দিন আগেই বুধবার বড়শুলে প্রচার সেরে শক্তিগড় গিয়েছিলেন বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী কীর্তি আজাদ। ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে সার সার ল্যাংচার দোকানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালির অন্য আবেগ। সেখানেই একটি দোকানে ঢুকে পড়ে বেশ অনেকক্ষণ ধরে ল্যাংচা ভাজলেন কীর্তি আজাদ । তাতে যারপরনাই খুশিও হলেন দোকানের মালিক সুব্রত দত্ত। বললেন, "আমার বেশ ভাল লেগেছে ব্যাপারটা। এখানে কোনও দোকানে উত্তমকুমার এসেছেন, কোনও দোকানে প্রসেনজিৎ এসেছেন। এবারে আমিও বলতে পারব কীর্তি আজাদ এসেছিলেন। আমার দোকানে ল্যাংচাও ভেজেছেন।"
আসানসোল কেন্দ্রের বহু প্রতিক্ষিত বিজেপি প্রার্থী এসএস আলুওয়ালিয়া। শেষবেলায় নেমে প্রচারের ময়দান মাতালেন আলুওয়ালিয়াও । শুক্রবার প্রচারে বেরিয়ে তিনি গিয়েছিলেন আসানসোলের ঘাঘরবুড়ি মন্দিরে। সেখানে উপস্থিত মানুষদের খিচুড়ি বেড়ে খাওয়ালেন তিনি। ভোটের মতো একটা গুরুগম্ভীর বিষয়ে রান্না-খাওয়াটা কি তবে কমিক রিলিফ? না কি জন-সংযোগে এর থেকে ভাল কোনও উপায় এখনও জানা নেই প্রার্থীদের।
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট অনিন্দিতা মুখার্জি মনে করেন বিষয়টা একদমই তাই। তাঁর কথায়, "খাবার হচ্ছে মানুষের একদম প্রিমিটিভ প্লেজার। একটা সদ্যোজাত শিশুও প্রথম কেঁদে ওঠে খাবারের জন্য। খাবার একদিকে যেমন প্রয়োজন, তেমনই মানুষের আদিম আনন্দও বটে। দ্বিতীয়ত, খাবার যেহেতু বেঁচে থাকার রসদ, তাই সমাজের সব স্তরের মানুষকেই এটা করতে হয়। তাই সেলফি তুলে যত মানুষকে ছোঁয়া যায়, তার থেকে অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছনো যায় রান্না বা খাবারের মাধ্যমে। গ্রামাঞ্চলের প্রান্তিক মানুষদের কাছে খাবার একটা ইতিবাচক ধারণাও বহন করে আনে। খাবারের মাধ্যমে যত তাড়াতাড়ি মানুষকে কানেক্ট করা যায় অন্য কিছু দিয়ে তা হয় না।"
শরীরতত্ত্বে খাওয়া আর ঘুম মানুষের বেঁচে থাকার একেবারে প্রাথমিক চাহিদা। অনিন্দিতার কথায়, "মানুষের সঙ্গে কানেক্ট করার জন্য আপনি প্রচারে গিয়ে খাটিয়ায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়তে পারবেন না। কিন্তু রাঁধতে পারবেন। লোককে খাওয়াতে পারবেন। মানুষের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার প্রথম শর্ত যেহেতু জন-সংযোগ, তাই আমাদের দেশে প্রার্থীরা সব থেকে মোক্ষম এই উপায়টাই বেছে নেন।''
মার-দাঙ্গা-রক্তপাত এ রাজ্যের ভোট সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু আদতে তো ভোট মানে গণতন্ত্রের উদযাপন। রসনা তৃপ্তি ছাড়া কি উৎসব জমে? তাই ভোটের দিন যাই হোক প্রচার পর্ব অন্তত স্বাদে-আহ্লাদে জাড়িত থাক ।