শেষ আপডেট: 8th May 2024 10:38
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বহুজন সমাজ পার্টির সুপ্রিমো মায়াবতীর একটি সিদ্ধান্ত ঘিরে উত্তর প্রদেশের রাজনৈতিক মহলে তুমুল শোরগোল শুরু হয়েছে। ভোটের ভরা মুরশুমের মাঝে তিনি ভাইপো আকাশ আনন্দকে দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন।
আকাশ বিএসপির ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর ছিলেন। সেই সঙ্গে মায়াবতী ঘোষণা করেছিলেন আকাশই দলে তাঁর উত্তরাধিকারী। বিএসপি নেত্রী বলেছেন, আকাশকে উত্তরাধিকারী করার সিদ্ধান্তও তিনি ফিরিয়ে নিচ্ছেন। আপাতত আকাশ দলের একজন সাধারণ সদস্য মাত্র।
বছর আঠাশের আকাশ দিল্লিতে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্ব সেরে লন্ডন থেকে এমবিএ করে ২০১৭-তে দেশে ফেরেন। ধীরে ধীরে দলের কাজে যুক্ত হন। গত বছর মায়াবতী তাঁকে জাতীয় সমন্বয়ক ঘোষণা করেন। সেই সঙ্গে ভাইপোই দলে তাঁর উত্তরাধিকারী বলে জানিয়ে দেন। এবার ভোটের স্বভাবতই মায়াবতীর পর আকাশের নামই দলের স্টার ক্যাম্পেনার হিসাবে দু-নম্বরে ছিল। যদিও অসুস্থতার কারণে মায়াবতী প্রচারে যাচ্ছেন কম। হেলিকপ্টারে রাজ্য চষে বেড়াচ্ছিলেন আকাশ।
কেন আচমকা ভাইপোকে পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে কার্যত বসিয়ে দিলেন বিএসপি সুপ্রিমো। এক্স হ্যান্ডেলে মায়াবতী জানিয়েছেন, আকাশের অভিজ্ঞতা কম। তাঁর জন্য জাতীয় সমন্বয়ের পদ সামলানো কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই আপাতত তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হল। আপাতত ওই দায়িত্ব পালন করবেন তাঁর বাবা আনন্দ কুমার। তিনি মায়াবতীর সবচেয়ে ছোট ভাই।
মায়াবতী আকাশের অনভিজ্ঞতার কথা বললেও বিএসপি সূত্র এবং রাজনৈতিক মহলের খবর ভিন্ন। একাধিক সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে আকাশের তীব্র বিজেপি বিরোধিতায় রাশ টানতেই এই সিদ্ধান্ত। এখানেই পিসি-ভাইপো রাজনৈতিক বোঝাপড়ায় সমস্যা হচ্ছিল।
মায়াবতীর সিদ্ধান্ত লোকসভার এই ভোটে কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির বিরুদ্ধে সর্বশক্তি প্রয়োগ করা। ওই দুই দল এবার জোট করেছে এবং তা বেশ মজুবত বলেই এখনও পর্যন্ত খবর। আকাশ সেখানে রাহুল, প্রিয়ঙ্কা, অখিলেশ যাদবদের আক্রমণ না করে নরেন্দ্র মোদী ও যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে ভাষণে ঝড় তুলছেন। তিনি মনে করেন, বিজেপিকে আক্রমণ না করলে বিএসপির ভোট ফিরবে না। বিএসপির দলিত ভোট ফেরাতেই এই কৌশল নিয়েছেন তিনি।
রাজনৈতিক মহলের খবর, মায়াবতী সেখানে বিজেপি বিরোধিতায় লাগাম টানতে চাইছেন ইডি-সিবিআইয়ের কারণে। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির একাধিক অভিযোগে মামলা আছে। কিন্তু ইডি-সিবিআইয়ের থাবা বাঁচিয়ে চলেছেন বিএসপি সুপ্রিমো। ২০১৭-তে যোগী আদিত্যনাথ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়ানো বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি।
সেই সিদ্ধান্তের ফল যে দলের জন্য ভাল হয়নি ২০২২-এর বিধানসভা ভোটের ফলই তার প্রমাণ। বিধায়ক সংখ্যা ১৭ থেকে কমে এক হয়ে যায় তিনবারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীর দলের। ভোট কমে হয় ছয় শতাংশ।
বস্তুত, দু-বছর আগের ওই বিপর্যয়ের পরই ভাইপো আকাশকে দলের নেতৃত্ব নিয়ে আসার আভাস দেন মায়াবতী। ভোট বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ভাইপোকে পাঠান পিসি। পরের বছর আকাশকে দলের দু-নম্বর ঘোষণা করেন।
রাজনৈতিক মহলের খবর, পিসি-ভাইপোর বিরোধের সূত্রপাত হতে দেরি হয়নি। বিশ্ববিদ্যালের ডিগ্রিধারী মায়াবতী প্রায় চার দশক রাজনীতির প্রথমসারিতে থাকলেও ভাষণে অপটূ। দলের সভা, নির্বাচনী প্রচারেও তিনি লিখিত ভাষণ পাঠ করেন। সেখানে আকাশ হিন্দি, কখনও তাতে ইংরিজি জুড়ে ঝরঝরে ভাষায় ভাষণ দেন। তাই শুধু নয়, ভাষণে তিনি যথেষ্ট আক্রমণাত্মক। সেই আক্রমণ বেশিরভাগটাই বিজেপির বিরুদ্ধে হওয়ায় পিসির সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিল না আকাশের, এমনটাই খবর। পদ্ম শিবিরের সঙ্গে সমীকরণ ঠিক রাখতে ভাইপোকে রাজনৈতিকভাবে বলি দিলেন, মনে করছে বিরোধী শিবির এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।