শেষ আপডেট: 19th May 2024 18:06
দ্য ওয়াল ব্যুরো: শারীরিক কারণে তিনি মাঠে-ময়দানের সভা-সমাবেশে নেই। কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টের পর সংক্রমণের আশঙ্কা এখনও কাটেনি। তাই বাইরে বেরতে বারণ করেছেন চিকিৎসকেরা। ফলে পশুখাদ্য কেলেঙ্কারির মামলায় জামিন পেয়েও লালুপ্রসাদ যাদব এবার লোকসভা ভোটে হেলিকপ্টার নিয়ে ছুটছেন না। বাড়িতে বসে টিভির পর্দায় চোখ রেখেছেন। আর রোজ সন্ধ্যায় ঘনিষ্ট নেতা এবং ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে ভোটযুদ্ধের খবর নিচ্ছেন রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সুপ্রিমো।
তাই বলে ভোটের লড়াইয়ে তিনি নেই, এমনটা বলা যাবে না। বিশেষ করে সমাজ মাধমে আরজেডি সুপ্রিমোর উপস্থিতি রীতিমতো চর্চার বিষয় হয়েছে বিহারের ভোটের ময়দানে। এক্স হ্যান্ডেলে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর পোস্ট মুহূর্তে ভাইরাল হচ্ছে তাই-ই শুধু নয়, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একাধিকবার প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন।
লালু প্রসাদকে এইভাবে সময়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতে দেখে অনেকেই বিস্মিত। কারণ, বছর কয়েক আগেও তথ্য প্রযুক্তিকে খুব একটা গুরুত্ব দিতেন না বিহারের এই নেতা। তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে তাচ্ছিল্যভরে কখনও বলেছেন, ‘ছোড়ো আইটি ফাইটি’। আবার কখনও বলেছেন, ইয়ে আইটি-ফাইটি ক্যায়া হোতা হ্যায়।’
তখন তাঁর দলের ওয়েবসাইট ছিল না। ছিল না ফেসবুক অ্যাকাউন্ট। এক্স হ্যান্ডেলে অ্যাকাউন্টের কথা তো ভাবাই যেত না। তবে সবই একে একে হয়েছে। কিন্তু নিজের নামে এক্স হ্যান্ডেলের অ্যাকাউন্ট খুলেছেন অনেক পরে। আর এবার লোকসভা ভোটে সেটাই তাঁর একমাত্র প্রচার অস্ত্র। আর সেটিতে ভর করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, নীতীশ কুমারদের নিশানা করে চলেছেন লালুপ্রসাদ।
বাংলার মতো বিহারেও মোদী ঘন ঘন প্রচারে যাচ্ছেন। গত ৪৫ দিনে দশবার বিহার গিয়েছেন। প্রতি সফরে তিন-চারটি করে সভা করেছেন। আর প্রতিবারই প্রধানমন্ত্রীকে পাল্টা নিশানা করেছেন লালুপ্রসাদ। যেমন, একটি পোস্টে আরজেডি সুপ্রিমো লেখেন, ‘দেশ জুড়ে বিজেপি নেতারা বলে বেড়াচ্ছেন চারশোর বেশি আসনে জিতে সরকার গড়ে সংবিধান বদলে দেবেন। কিন্তু কাজটা অত সহজ হবে না।’ সেদিনই বিহারের মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বলতে হয়, ‘সংবিধান বদলের কোনও সম্ভাবনা নেই। এই আশঙ্কা অমূলক।’ লালুপ্রসাদের পোস্ট দেশব্যাপী ভাইরাল হওয়াতেই মুখ খুলতে বাধ্য হন প্রধানমন্ত্রী।
স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উদযাপনকে সামনে রেখে আগামী পঁচিশ বছরকে ‘অমৃতকাল’ বলে আখ্যায়িত করেছেন মোদী। তাঁর সেই ঘোষণাকে কটাক্ষ করে লালু প্রসাদ সম্প্রতি এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘দশ সাল মৃত্ কাল’। এই ভাবে মোদীর শাসনামলের দশ বছরকে মৃত পর্ব বলে কটাক্ষ করেছেন বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, মোদীকে আক্রমণ করে করা লালুর পোস্ট মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে। ফলে টিম মোদীকেও জবাব দিতে হচ্ছে। বিজেপি নেতারাও একান্তে মানছেন, গত দশ বছরের যাবতীয় নির্বাচনের মতো এবারও বিহারে সবচেয়ে নজর কাড়া লড়াই মোদী ও লালুপ্রসাদের।
দিন চারেক আগে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক বিভাজন সৃষ্টির অভিযোগ তুলে লালুপ্রসাদ একটি পোস্টে লেখেন, হিন্দিতে প্রায় এক লাখ ষাট হাজার শব্দ আছে। বিভিন্ন পেশার হিন্দি শব্দগুলি জুড়লে সংখ্যাটা ছয় লাখ ছাপিয়ে যাবে। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী জানেন শুধু মুসলিম, শ্মশান, কবরস্থান, পাকিস্তান, মন্দির, মসজিদ, মছলি, মোঘল, মঙ্গলসূত্রের কথা।
গত তিরিশ-পঁয়ত্রিশ বছরে একমাত্র ২০১৪-র লোকসভা ভোটে লালুপ্রসাদ ভোটের ময়দানে ছিলেন। সেবার ছিলেন জেলে। পরের বছর জামিনে ছাড়া পেয়ে রাজ্যে ফিরে নীতীশ কুমারকে সঙ্গী করে প্রচারে বের হন। বিজেপিকে হটিয়ে ক্ষমতায় ফেরে জেডিইউ-আরজেডি জোট। ২০১৯-এর লোকসভা এবং পরের বছর বিধানসভা ভোটের সময় লালু প্রসাদ ফের জেলে ছিলেন। স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় গত বছর জামিনে ছাড়া পেয়ে সিঙ্গাপুরে গিয়ে কিডনি প্রতিস্থাপন করিয়ে আসেন। কিডনি দাতা মেয়ে রোহিনী আচার্য এবার সারণ কেন্দ্রে প্রার্থী। লালুপ্রসাদ একদিনের জন্য সেখানে গিয়েছিলেন সারণবাসীর সঙ্গে মেয়েকে পরিচয় করিয়ে দিতে। তবে মাঠে-ময়দানের জমায়েতে না থাকলেও ভোটের লড়াইয়ে ভাল মতোই আছেন আরজেডি সুপ্রিমো। অসুস্থ লালুপ্রসাদকে উপেক্ষা করতে পারছেন না প্রধানমন্ত্রীও।