শেষ আপডেট: 30th May 2024 12:00
দ্য ওয়াল ব্যুরো: লোকসভা ভোটের প্রচার শেষ আজ। আগামী শনিবার দেশে সপ্তম ও শেষ দফার ভোট হতে চলেছে। সেই লড়াইয়ে নির্ধারিত হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরও ভাগ্য। কী ঘটতে চলেছে 'কাশীপুত্র' মোদীর কপালে! অতি বড় তাত্ত্বিক, রাজনৈতিক বিজ্ঞানী, ভোটকুশলী বা বিরোধীদের কোনও নেতারই মোদীর জয় নিয়ে সংশয় নেই। তবে চুলচেরা অঙ্কের বিচার চলছে নবপ্রজন্মের নতুন ভোটার, মহিলা ও সংখ্যালঘু ভোটারদের মনোবাঞ্ছা কী, তা নিয়ে।
বারাণসীর মোট ভোটার ১৯ লক্ষ ৬২ হাজার ৬৯৯ জন। তার মধ্যে প্রথম ভোটদাতা অর্থাৎ নতুন প্রজন্মের ভোটার রয়েছেন ৩১ হাজার ৫৩৮। তাঁদের ভোটদানে উৎসাহিত করতে মোদী একটি খোলা চিঠি লিখেছেন। বিজেপি কর্মীরা সেই চিঠি বিলি করছেন একেবারে শেষ মুহূর্তেও।
চিঠিতে মোদী লিখেছেন, আপনাদের প্রধান সেবক এবং সাংসদ হিসেবে সকলকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। সম্পূর্ণ গর্ব এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এই চিঠি লিখছি। জাতি ও দেশ গঠনে আপনারা যে সুযোগ পেতে চলেছেন তার জন্য আপনাদের শুভেচ্ছা জানাই। ভোটদান হল একটি গণতান্ত্রিক অধিকার যার দ্বারা শুধু সরকার গঠন হয় না, ভোট হল আমাদের স্বাধীনতার 'আধারশিলা'।
চিঠিতে গত ১০ বছরে বারাণসীর উন্নয়নের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে ভোলেননি প্রধানমন্ত্রী। আমাদের প্রয়াস যুব সমাজের জন্য আদর্শ উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা। আপনাদের মতো তরুণরাই দেশ, সমাজ গঠনের চাবি। শক্তিশালী ও সমৃদ্ধশালী ভারত গড়ে তুলতে ও দেশের ভবিষ্যৎকে সাকার করতে আপনাদের ভোটে অংশ নেওয়া জরুরি বলে চিঠিতে লিখেছেন মোদী।
তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ের মতোই বারাণসীতেও জয়ের হ্যাটট্রিকের লক্ষ্যে রয়েছেন মোদী। কিন্তু, সেই পথে সামান্য হলেও কাঁটা বিছিয়ে রেখেছে পাঁচ বছরের দূরত্ব। তার সঙ্গে রয়েছে বিরোধী জোটের মিলিত ভোটের অঙ্ক। ২০১৪ সালের ভোটে মোদীর বিরুদ্ধে প্রার্থী ছিলেন মোট ৪১ জন। তার মধ্যে ১৯ জন নির্দল। ২০১৯ সালে সেই সংখ্যা কমলেও ২৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, নির্দল ৮ জন। কিন্তু, এবারের ভোটে তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছেন মাত্র ৬ জন।
প্রথমবারের ভোটে বারাণসী থেকে মোদী জিতেছিলেন ৩ লক্ষ ৭২ হাজার ভোটে। প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ৫৬.৩৭ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়াল। গতবার প্রধানমন্ত্রীর জয়ের মার্জিন বেড়ে হয় ৪ লক্ষ ৫৯ হাজার ভোট। ৬৩.৬ শতাংশ ভোট পড়েছিল মোদীর পক্ষে। সমাজবাদী পার্টির শালিনী যাদব দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। ফলে বিরোধী ভোট ভাগ হওয়ার সম্ভাবনা এবার কিন্তু খুবই কম। যদিও তা নিয়ে মোদী কিংবা বিজেপি শিবির মোটেই ভাবিত নয়, তাদের মাথায় ঘুরছে জয়ের মার্জিন নিয়ে।
বারাণসীর সংখ্যাগুরু ভোট হল উচ্চবর্ণের হিন্দু। রয়েছে ব্রাহ্মণ, ভূমিহার এবং জয়সওয়াল ভোট। এরপরেই রয়েছে মুসলিম এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির ভোট। বিজেপির প্রবীণ নেতা মণীশ দীক্ষিতের দাবি, এবার আমরা চাইছি জয়ের মার্জিন ৬ লক্ষের উপর রাখতে। এই দাবির প্লাস পয়েন্ট হল বহুজন সমাজ পার্টির ভোট কাটার অঙ্ক। কারণ, মায়াবতীর প্রার্থী নিম্নবর্গের অনেকটা ভোটই পকেটে পুরতে পারেন। সেক্ষেত্রে ইন্ডিয়া জোট প্রার্থী প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অজয় রাইয়ের দিকে মুসলিম ও পিছড়েবর্গ, দলিত ভোট কতটা পড়বে তা নিয়েও সিঁড়ি ভাঙা হিসাব চলছে।
পাটিগণিত বলছে, ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালে মোদীর পক্ষে ১৬.১১ শতাংশ ভোট বৃদ্ধি ঘটেছিল। কিন্তু, এবার বিরোধীরা জোট বাঁধায় যদি মোদীর ভোট পার্সেন্টেজ কমে সেটাই হবে বিরোধীদের জিত, জানালেন স্থানীয় সাংবাদিক রমেশ সিং। তাঁর মতে, গত ১০ বছরে বারাণসীর মানুষের মধ্যে মোদী সম্পর্কে অনেক মোহভঙ্গ হয়েছে। তার মাশুল দিতে হতে পারে প্রধানমন্ত্রীকে।
তার প্রথম বাধাই আসতে পারে মহিলা ভোটারদের কাছ থেকে। মোদীকে ভোট দেওয়া নিয়ে এখনও দোলাচলে আছেন শহরের মহিলা ভোটাররা। কেউ বলেছেন, নারী সুরক্ষার কথা তো কেউ বলছেন উন্নয়নের। কিন্তু, অধিকাংশেরই মোটের উপর মোদীর গ্যারান্টি নিয়ে কোনও সংশয় নেই। প্রধানমন্ত্রীর শক্ত হাতে সরকার পরিচালন ক্ষমতার উপর আত্মবিশ্বাসী কাশীর একাংশ মহিলা।
বারাণসী হল দেশের এমন একটা শহর যেখানে হিন্দিভাষী ছাড়াও মারাঠি, গুজরাতি, তামিল, কেরল, অন্ধ্র, তেলঙ্গানা ও কর্নাটকের অজস্র মানুষ বাস করেন। বংশপরম্পরায় তাঁরা এখানে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। এঁদের বেশিরভাগই উচ্চবর্ণের হিন্দু। জনসঙ্ঘের আমল থেকেই তাঁরা নিষ্ঠাবান হিন্দু ভোটার। বিজেপির ভোটশক্তির মূল আধারও বলা চলে তাঁদের। এদের মিলিত ভোটকে পঞ্চদ্রাবিড় বলা হয়। প্রায় দেড় লক্ষ পঞ্চদ্রাবিড় ভোটার রয়েছেন কাশীতে। এর সঙ্গে বাঙালি, সিন্ধ্রি এবং পাঞ্জাবি জুড়লে সংখ্যাটা ২ লক্ষ পেরিয়ে যাবে।
ফলে বারাণসীতে মোদীর জয় নিয়ে প্রায় কোনও পার্টিরই সন্দেহ নেই। মার্জিন নিয়ে লড়াইটাই এই অবস্থায় মুখ্য হয়ে উঠেছে। এরপর ১ জুন কী ঘটতে চলেছে, তা একমাত্র মা গঙ্গাই জানেন।