শেষ আপডেট: 13th May 2024 15:23
পাঁচ বছর আগে বহরমপুরে ভোটের ছবিটা মনে পড়ে? ভোটের দিন বহরমপুরের এক বুথ থেকে অন্য বুথে ছুটে বেরিয়েছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরী। দৃশ্যত গলদঘর্ম অবস্থা তাঁর। গায়ের জামা ঘামে ভিজে সপ সপ করছে। বুথ জ্যাম ও ভোটারদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে বার বার নির্বাচন কমিশনকে সেদিন ফোন করেছিল কংগ্রেস। সেই সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন অধীরবাবু। তবে বিকেল পাঁচটায় ভোট গ্রহণ শেষ হতেই দ্য ওয়ালকে ফোনে জানিয়েছিলেন, ‘জিতছি’।
পাঁচ বছর পর বহরমপুরে সেই ভোটের ছবিটা দৃশ্যত উধাও। অধীর চৌধুরী এদিনও বুথে বুথে ঘুরেছেন ঠিকই। তবে খোশ মেজাজে। কপালের চিন্তার ভাঁজ নেই। বড় কোনও অভিযোগ নেই তাঁর। বরং সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলছেন, "ভাল ভোট হচ্ছে। তবে কোথাও কোথাও ছাপ্পা মারার চেষ্টা হচ্ছে। আমরা যথাসম্ভব রুখে দেওয়ার চেষ্টা করছি”। অধীরের এও অভিযোগ, “পুলিশের নিচুতলার লোকজন এখনও তৃণমূলের দলদাসের মতো কাজ করছে। সেন্ট্রাল ফোর্সও ওদের নিয়ে নাজেহাল হয়ে যাচ্ছে”।
এদিন বহরমপুর লোকসভায় বিক্ষিপ্ত ভাবে অভিযোগ উঠেছে ঠিকই। যেমন দয়ানগর এলাকায় একটি বুথের বাইরে তৃণমূলের যে ক্যাম্প ছিল, সেখানে এত পতাকা লাগানো হয়েছে যা ভোটারের মাথায় পর্যন্ত ঠেকছে। এ নিয়ে কমিশনের কাছে অভিযোগ করেন অধীর। তিনি বলেন, এটা কেমন ব্যাপার যে ভোটাররা তৃণমূলের পতাকা ছুঁয়ে ভোট দিতে যাচ্ছেন! কমিশনের জেলা পর্যবেক্ষককে কংগ্রেস জানিয়েছে, অবিলম্বে যেন পতাকা খোলার ব্যবস্থা করা হয়।
ওই দয়ানগরেই এদিন অধীরবাবুর গাড়ি আটকায় পুলিশ। তাঁর কনভয়ে তিনটি গাড়ি ছিল। যে গাড়িতে তিনি চড়ছেন তার সঙ্গে ছিল একটি এসকর্ট ভ্যান ও তাঁর নিরাপত্তা রক্ষীদের গাড়ি। কিন্তু পুলিশ জানায়, কেবল দুটি গাড়ি নিয়ে যাওয়ার অনুমতি রয়েছে। একটি গাড়ি ছাড়তে হবে। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে সামান্য বচসাও হয় অধীরের। পরে দেখা যায়, অধীর চৌধুরীকে তিনটি গাড়ি নিয়ে ‘মুভ’ করার অনুমতি দিয়ে রেখেছে নির্বাচন কমিশন। তাই তাঁর সব গাড়িই ছেড়ে দেওয়া হয়।
অধীর তোফা মুডে ঘুরছেন বহরমপুরের বুথে বুথে, উনিশের তুলনায় চেহারা ছবিতে ফারাক স্পষ্ট#TheWallBangla #AdhirRanjanChowdhury #baharampur pic.twitter.com/Lw9rQSdI4a
— The Wall (@TheWallTweets) May 13, 2024
এ বার ভোটের আগে থেকেই অধীর চৌধুরী বলছিলেন, একটা বুথও দখল করতে দেব না। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কোন প্রত্যয় থেকে তিনি এ কথা বলছেন। অধীরবাবু বলেন, প্রতিটি বুথে কংগ্রেসের এজেন্ট থাকবেন। তা ছাড়া কমিশনেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, মুর্শিদাবাদে ভোটের আগে এ কথা বলছিলেন বাম প্রার্থী মহম্মদ সেলিমও। ভোটের দিন সকালে একটি বুথ থেকে ভুয়ো ভোটারকে বেরও করেছিলেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক। তারপর ভোট গ্রহণ মিটতেই বলেছিলেন ‘ভাল ভোট হয়েছে’।
রাজনৈতিক সূত্রের মতে, মুর্শিদাবাদ, জঙ্গিপুর ও বহরমপুরে বুথ বাঁচাতে এবার কংগ্রেস ও সিপিএম যৌথভাবে নেমেছে। একটাই লক্ষ্য তা হল, যেন কোনও ছাপ্পা না পড়ে বা বুথ দখল না হয়ে যায়। তাঁরা মনে করছেন, মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারলেই তাদের জন্য ভাল হবে। সম্ভবত সেই কারণেই মুর্শিদাবাদে ভোট গ্রহণের পর আত্মবিশ্বাসী সেলিম। আবার বহরমপুরে তোফা মুডে দেখা যাচ্ছে অধীর চৌধুরীকে।