শেষ আপডেট: 26th March 2024 18:27
দ্য ওয়াল ব্যুরো: শ্যাম বেনেগলের মান্ডি নামক সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৮৩ সালে। ছবিটি বিষয়বস্তু ছিল মান্ডি মানে বাজারে কীভাবে নারী শরীর ভোগ্যপণ্য হিসেবে বিক্রি হয়। যৌনকর্মী ও রাজনীতির মিশেলে তৈরি এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন নাসিরুদ্দিন শাহ, শাবানা আজমি, স্মিতা পাটিল প্রমুখ। আজ ৪১ বছর পর ফের মান্ডি শব্দটি নিয়ে বিজেপির অভিনেত্রী প্রার্থী কঙ্গনা রনৌতকে ব্যঙ্গ করে ফাঁপরে পড়েছে কংগ্রেস। মঙ্গলবার গেরুয়া শিবির আদাজল খেয়ে নেমে পড়ল কংগ্রেসকে কচুকাটা করতে।
ঘটনার সূত্রপাত, কংগ্রেসের মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনাতের একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্টকে কেন্দ্র করে। হিমাচলের ভূমিপুত্রী কঙ্গনাকে মান্ডি কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। আর সেই কেন্দ্রের নামকে কটাক্ষ করে কঙ্গনা রনৌতের একটি বোল্ড ছবি দিয়ে সুপ্রিয়া তলায় লিখেছেন #Mandi। সুপ্রিয়া আরও লিখেছেন, কেউ আমাকে বলতে পারবেন, মান্ডির এখন বাজারদর কত চলছে? সে নিয়েই অস্ত্র ধরেছেন ঝাঁসির রানি কঙ্গনা। সঙ্গ দিচ্ছেন বিজেপি নেতারা। জাতীয় মহিলা কমিশনও লোকসভা নির্বাচনে প্রথম দাঁড়ানো এক মহিলা প্রার্থীকে এ ধরনের অপমানজনক মন্তব্য করায় সুপ্রিয়া শ্রীনাতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
শ্রীনাতে পরে বাজার গরম দেখে নিজেই বলেন, অনেকেই এটা দেখে চরম আপত্তিজনক বলায় আমি পোস্ট সরিয়ে ফেলেছি। কিন্তু, ততক্ষণে মহিলাদের নিয়ে কংগ্রেসের মনোভাবকে আক্রমণ করে হাওয়া তাতিয়ে চলেছে বিজেপি শিবির। কঙ্গনাও এই পোস্টের ব্যাপক নিন্দা করেছেন। অন্যদিকে, কংগ্রেস ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে উর্মিলা মাতন্ডকর সম্পর্কে একদা রনৌত কী বলেছিলেন।
বিজেপির মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালা কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর স্লোগান 'লড়কি হুঁ, লড় সকতি হুঁ'-এর প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বলেন, সুপ্রিয়া শ্রীনাতে কঙ্গনা রনৌতকে নয়, দেশের নারীশক্তিকে অপমান করেছেন। তিনি সমগ্র হিমাচল প্রদেশকে নিয়ে মশকরা করেছেন। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন রাখছি, এর বিরুদ্ধে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বিজেপির এমপি মনোজ তিওয়ারি বলেন, একজন অভিনেত্রীর জীবন ও বাস্তব জীবন সম্পূর্ণ পৃথক। কংগ্রেস যে মহিলা এবং শিল্পীদের নিয়ে এরকমভাবে ভাবে, তা দেখে আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি।
এদিকে, খোদ 'কুইন' অভিনেত্রী শ্রীনাতের পোস্টের জবাবে বলেছেন, তিনি 'রাজ্জো'র মতো যৌনকর্মী থেকে 'থালাইভি'র মতো বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। গত ২০ বছরে আমি বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছি। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মেয়েদের নানান উন্নাসিকতা থেকে মুক্ত করতে হবে আমাদেরই। মেয়েদের শরীরের বিভিন্ন অংশের প্রতি কুনজরের ঊর্ধ্বে উঠতে হবে। বিশেষত যৌনকর্মীরা যে পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করেন, যে হেনস্তার মুখোমুখি হতে হয় তা সম্পর্কেও সচেতন থাকতে হবে। কোনও মন্তব্যের আগে সতর্কতা ও সংযমী হওয়া প্রয়োজন। প্রত্যেক মহিলা সম্মান প্রত্যাশা করেন।
কঙ্গনার আরও অভিযোগ, যদি কোনও যুবক ভোটে টিকিট পান, তাহলে তাঁর সঙ্গে আদর্শের লড়াই হয়। কিন্তু, কোনও যুবতী ভোটে দাঁড়ালে কেন তাঁকে যৌন হেনস্তার মুখোমুখি হতে হবে! কংগ্রেসের মতো দলও ভারতের একটি ছোট্ট শহরের নাম নিয়ে যৌন-কটাক্ষ করছে, বিস্ময় প্রকাশ করেন রনৌত।
কংগ্রেস অবশ্য সুপ্রিয়া শ্রীনাতে নিয়ে স্পষ্ট অবস্থান না জানালেও ২০২০ সালে উর্মিলা মাতণ্ডকর সম্পর্কে কঙ্গনার মন্তব্যকে ঢাল করতে চাইছে। পুরনো এক সাক্ষাৎকারে কঙ্গনা উর্মিলাকে সফ্ট পর্নস্টার বলে মন্তব্য করেছিলেন। এদিন সেই প্রশ্ন তুলে যুব কংগ্রেসের সভাপতি শ্রীনিবাস বিভি এক্সবার্তায় লিখেছেন, সুপ্রিয়াজি যে পোস্ট করেছেন, তা নিশ্চই অবমাননাকর। কিন্তু কঙ্গনাজি আপনি কী করেছিলেন? উর্মিলা মাতণ্ডকরকে তো সফ্ট পর্নস্টার বলতে ছাড়েননি, বিঁধেছেন কংগ্রেসের যুব সভাপতি।