
শিশিরভেজা ঘাসে খালি পায়ে কয়েক কদম, ফুরফুরে হবে মন, পালাবে হাজারো রোগ
দ্য ওয়াল ব্যুরো: শীত আসছে। ঘাসের ডগায় শিশিরবিন্দুরা ভিড় করছে। শিশিরভেজা ঘাসে খালি পায়ে হেঁটেছেন কখনও? সবুজ ঘাসে হাঁটার মধ্যে এক অদ্ভুত রোমান্টিসিজম আছে। মটির সঙ্গে যেন সরাসরি মনের যোগাযোগ তৈরি হয়। ফুরফুরে মেজাজে আনন্দের হাওয়া বাতাস খেলে।
খালি পায়ে হাঁটা শুধু রোমান্টিকতা নয়, থেরাপিও বটে। সুস্থতার চাবিকাঠি লুকিয়ে এর মধ্যেই। খালি পায়ে হাঁটা মানেই মাটির সঙ্গে শরীরে সরাসরি সংযোগ তৈরি হওয়া। শরীরে স্নায়ুর মাধ্যমে এই বার্তা পৌঁছয় মস্তিষ্কেও। মাটি বা ভূমির উপাদান ত্বকের কোষে এমন এক শিহরণ জাগিয়ে তোলে যা সারা শরীরে নাড়া দিয়ে যায়। আসলে জুতো পরে হাঁটাই অভ্যাস মানুষজনের। বাড়িতে বা ছাদে খালি পায়ে হাঁটলেও সেটা শক্ত মাটিতে। ডাক্তাররা বলেন, ঘাসের উপর দিয়ে হাঁটলে একই সঙ্গে মাটি ও জৈব উপাদানের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি হয় শরীরের। যার প্রভাব খুবই ভাল। স্নায়ুর উপর চাপ কমে, মাথাও স্ট্রেস ফ্রি হয়।
ঘাসের সঙ্গে ভাব বিনিময় করে পা, ব্যথা-বেদনা কমে
খালি পায়ে হাঁটার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল দেহের ভারসাম্য বাড়ে। শক্ত মাটির বদলে যদি ঘাসের উপরে পা ফেলা যায় তাহলে পায়ের পেশির রিফ্লেক্স পয়েন্টগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। ঘাসের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে যায় পায়ের। স্নায়ুর সক্রিয়তা বেড়ে। পেশির গঠন ভাল হয়। রক্ত চলাচল বাড়ে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোমর থেকে পা অবধি শরীরে ভারসাম্য ভাল থাকে। গঠনও সুন্দর হয়। পায়ে চোট লাগার সম্ভাবনা কমে। গবেষকরা বলেন, যত বেশি খালি পায়ে হাঁটা যাবে ততই ফিটনেস বাড়বে। পায়ের পেশির শক্তিও বাড়বে। পায়ের পাতায় যে ইন্ট্রিনসিক পেশি থাকে তার সঙ্গে যুক্ত স্নায়ুগুলো সরাসরি মস্তিষ্কে বার্তা পাঠায়। শক্ত মাটিতে জুতো পরে হাঁটার সময় এই পেশিতে চাপ পড়ে। বেশিক্ষণ জুতো পরে থাকলে পায়ের পেশির সঙ্গে মস্তিষ্কের যোগাযোগ ভেঙে যায়। যে কারণেই পায়ে ব্যথা, হাঁটতে গিয়ে হোঁচট খাওয়া, চোট লেগে যাওয়া ইত্যাদির সম্ভাবনা বাড়ে। খালি পায়ে নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করলে পায়ের যে কোনও ব্যথা-বেদনা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
প্রকৃতির সংস্পর্শে ফুরফুরে হয় মন, কমে মানসিক চাপ
স্ট্রেস ফ্রি হওয়ার সবচেয়ে ভাল উপায় হল ভোরবেলা খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটা। অত্যধিক মানসিক চাপ, খিটখিটে মেজাজ, যখন তখন মুড সুইং ইত্যাদির থেরাপি করার সময় ডাক্তাররা খালি পায়ে হাঁটার কথাই বলেন। ভোরের অক্সিজেন ও শিশিরভেজা ঘাসের সঙ্গে শরীরের যোগাযোগ তৈরি হলে মনের উপরেও তার ছাপ পড়ে। ক্লান্তি দূর হয়।
অবসাদ কমে, ভাল ঘুম হয়
‘দ্য জার্নাল অব অলটারনেটিভ অ্যান্ড কম্প্লিমেন্টারি মেডিসিন’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণার রিপোর্টে বলা হয়েছিল মাটি অর্থাৎ Earth এর সঙ্গে শরীরের যোগসূত্র তৈরি হলে মস্তিষ্কের ক্রিয়া সচল হয়। কারণ স্নায়ুর মাধ্যমে সেই বার্তা পৌঁছয় মস্তিষ্কে। যে কোনও রকম অবসাদ কমে। আর মন হাল্কা থাকলে ঘুমও ভাল হয়। ইনসমনিয়া বা অনিদ্রা দূর করতে অনেক সময় বিশেষজ্ঞরা খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটার অভ্যাস করতে বলেন। এতে শরীরের নানারকম অস্বস্তিও কমে যায়।
![]()
প্রদাহ কমে, জ্বালাপোড়া ব্যথা সাড়ে
মাটির এমন একটা ইলেকট্রিকাল পাওয়ার থাকে যা শরীরে শক্তি জোগাতে পারে। বিজ্ঞান বলে, খালি পায়ে হাঁটলে ভূমি থেকে নেগেটিভ আয়ন শরীরে সঞ্চালিত হয়। পায়ের সঙ্গে সরাসরি মাটির যোগাযোগ হলে ইলেকট্রনের প্রবাহ হয়। ফলে শরীরের পেশি, স্নায়ু সচল হয়ে ওঠে। রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ে। যে কোনও রকম ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ কমে। জ্বালাপোড়া ব্যথা থেকে মুক্তি মেলে।
কমে রক্তচাপ, ভাল থাকে হার্ট
খালি পায়ে হাঁটলে অনেক বেশি রিল্যাক্স হওয়া যায়। শরীরে পজিটিভ এনার্জি ঢোকে। যার ফলে রক্তচাপের ভারসাম্য থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ১৫ মিনিট খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটলে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। শরীরে রক্ত চলাচল বাড়ে। হার্টের উপর চাপ কমে। লোহিত রক্তকণিকার মাত্রা বাড়ে। ফলে হৃদপেশিতে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না। হৃদরোগের ঝুঁকিও কমে।
প্রাকৃতিক উপায় রোগ প্রতিরোধ তৈরি হয়
গবেষকরা বলেন, মাটিতে যে সব মাইক্রোবস আছে তারা মানুষের শরীরের সংস্পর্শে এলে প্রাকৃতিকভাবে ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করে। পায়ের পাতার কোষ, ত্বক, নখ ইত্যাদির মাধ্যমে বন্ধু ব্যাকটেরিয়ারা শরীরে ঢুকে পড়ে। এরাই শরীরের টক্সিক উপাদান শুষে নেয়। ভেতর থেকে শক্তি জোগায়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, খালি পায়ে হাঁটার উপকারিতা অনেক। নানারকম রোগ দূর হয়। পায়ের পাতার আকুপ্রেশার পয়েন্টে চাপ পড়ে। প্রাকৃতিক আকুপ্রেশারের কাজ করে। ত্বকের স্বাস্থ্যও ভাল রাখে। মাটির উপাদান শরীরের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে। গ্রাম বা প্রত্যন্ত এলাকার লোকজন সাবানের বদলে মাটি দিয়েই হাত, পা ধুযে থাকেন বেশি। গায়ে মাটি মেখে স্নান করার অভ্যাসও আছে। কারণ মাটির এমন গুণ আছে যা শরীরকে জীবাণুমুক্ত করতেও সাহায্য করে। ডাক্তাররা তাই বলেন, সময় বের করুন আর মন খুলে খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটুন। মন রোমান্টিকও হবে, আবার শরীরও থাকবে একেবারে চাঙ্গা।