শেষ আপডেট: 8 April 2024 16:40
দ্য ওয়াল ব্যুরো: রাস্তায় বের হলেই ঝাঁ ঝাঁ রোদে প্রাণ ওষ্ঠাগত। প্যাচপ্যাচে গরম, গনগনে রোদের তেজ। তেতেপুড়ে যাচ্ছে ত্বক। আর কিছুদিন পরেই গরমের তেজ ভালভাবেই মালুম হবে। তখন রোদে পোড়া ত্বকের ট্যান তুলতে কালঘাম ছুটবে। রোদে তেতেপুড়ে গেলে আমরা বলি সানবার্ন। কিন্তু তার থেকেও মারাত্মক কিছু আছে, যাকে ডার্মাটোলজিস্টরা বলছেন 'সান পয়সনিং'। সানট্যানও চিন্তার ব্যাপার। এইসবের জন্যই দায়ী সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি। এই গরমে ত্বকের সুরক্ষা কীভাবে নেবেন, তার টিপস দিলেন হাওড়া আইএলএস হাসপাতালের জেনারেল মেডিসিন বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. অর্ণব কর।
প্রখর রোদে ত্বকের কী কী সমস্যা হতে পারে?
ডাক্তারবাবু বলছেন, সূর্যের তেজ ততক্ষণ ভাল যতক্ষণ তা সহনসীমার মধ্যে থাকবে। সূর্যের আলোতেই ত্বক পুষ্ট হয়, ভিটামিন ডি তৈরি হয়। তার জন্য ১৫-২০ মিনিট রোদে থাকা দরকার প্রতিদিনই। কিন্তু রোদের তেজ যদি মারাত্মক হয় এবং তীব্র তাপপ্রবাহ চলতে থাকে তখন রোদে বেশিক্ষণ থাকা একেবারেই ঠিক নয়। কারণ ঝলসানো রোদ ত্বকও ঝলসে দিতে থাকে। চামড়া পুড়ে যায়, কালচে ছোপ পড়ে যায়, ত্বকে লাল ঘামাচি, চুলকানি, ব়্যাশ হয়।
রোদ লাগলেই ত্বকে জ্বালাপোড়া শুরু হয়ে যায়। রোদে পোড়া জায়গায় অথবা সারা শরীরে অ্যালার্জি বেরিয়ে যেতে পারে। বড় বড় লাল দাগ বা র্যাশ হতে পারে। অনেক সময় রোদে পোড়া জায়গায় ত্বকের রঙ ফ্যাকাশে হয়ে গিয়ে চামড়া উঠতেও শুরু করে অনেকের। মানে হল, রোদের তেজ একেবারেই সহ্য হয় না ত্বকের। অনেক সময় দেখা যায় দীর্ঘ সময় রোদে থাকার কারণে চামড়া জ্বলে গেছে। হাত-পা বা পিঠ ইত্যাদি খোলা জায়গায় লালচে বা কালো প্যাচের মতো দাগ হয়ে গেছে। একে বলে সানবার্ন। তখন র্যাশ, অ্যালার্জি, চুলকানি, জ্বালা করতে থাকে ত্বক।
সকলের ত্বক সমান হয় না। তাই সূর্য রশ্মি ত্বকে লাগলে তার বিভিন্ন রকম প্রভাব হতে পারে। অতিবেগুনী রশ্মি ত্বকের সংক্রমণ ঘটায় অনেকের। এতবেশি র্যাশ, ত্বকে জ্বালাপোড়া ব্যথা হতে শুরু করে যে তার থেকে অন্যান্য সমস্যা শুরু হয়ে যায়। অত্যধিক মেলানিন তৈরি হতে থাকে তখন ত্বকের রং গাঢ় হয়ে যায়। একে বলে সানট্যান।
ত্বকের ক্যানসারের জন্যও অনেকাংশে দায়ী সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি (Ultraviolet Rays)। এর ফলে স্কোয়ামাশ সেল কার্সিনোমা বা ত্বকের ক্যানসার হতে পারে। ত্বকের রং বদলাতে শুরু করে। এই বদল যে মুখ বা শরীরের বিশেষ কোনও অংশ জুড়ে সমান ভাবে হয়, তা নয়। বরং বলা যায়, একটি বড় অংশের খানিকটা জায়গার রং বদলাতে থাকে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই সেই বদলে যাওয়া রঙের বিশেষ অংশটি আলাদা করে নজরে পড়ে। ছিটছিট দাগের মতো দেখা যায় ত্বকে। পিগমেন্টেশন দেখা দিতে থাকে। স্কিন টোন যখন গাঢ় হতে শুরু করে, তাকে বলে হাইপার-পিগমেন্টেশন। তা গোটা শরীরে ছড়াতে পারে কিংবা হতে পারে কোনও নির্দিষ্ট অংশে। অনেক সময়ে মুখে ফুটে ওঠা দাগ, যা এজ স্পট বা লিভার স্পট নামেই বেশি পরিচিত, তা কিন্তু আদতে হাইপার-পিগমেন্টেশনই।
অতিরিক্ত ঘামে রোমকূপগুলো বন্ধ হয়ে মিলারিয়া হতে পারে। এতেও ত্বক জ্বালাপোড়া করে। বেশি গরমে শরীরের জল শুকিয়ে যেতে থাকে। ডিহাইড্রেশন বেশি হয়ে গেলে তার থেকে হিটস্ট্রোক হয়। এই গরমে হিট ক্র্যাম্প হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। শরীরে জলের পরিমাণ কমে গেলে রক্ত ঘন হতে থাকে। মাথায় রক্তচাপ বাড়ে। শরীরের স্বাভাবিত তাপমাত্রা আর রক্তচাপের মধ্যেও সামঞ্জস্য থাকে না। যার কারণেই স্ট্রোক হয়। বয়স্কদের ক্ষেত্রে হিট স্ট্রোকের (Heat Stroke) ঝুঁকি বেশি। যাদের হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, কিডনির রোগ রয়েছে তাঁদের ক্ষেত্রে বিপদের ঝুঁকি বেশি।
রোদে শরীরে জল কমে গেলে হিট ক্র্যাম্প হতে পারে। এতে পেশিতে টান ধরে, মাথা ঘুরে জ্ঞান হারাতে পারেন। পাশাপাশি ১০২ ডিগ্রির কাছাকাছি জ্বর আসতে পারে। শরীরে নানা জায়গায় হিট র্যাশ হতে পারে বা ফুলে যেতে পারে।
সমাধান কীসে?
ডাক্তারবাবু বলছেন, চড়া রোদে বেশিক্ষণ রাস্তায় থাকবেন না। বেলা ১১টার পর থেকে বিকেল ৪টে অবধি সময়টা রাস্তায় না থাকার চেষ্টা করুন।
প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে। কারণ এ সময় ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে প্রচুর লবণ বেরিয়ে যায়।
চড়া রোদে দুপুরের দিকে রাস্তায় না বেরনোই ভাল। যদি বেরতে হয় তাহলে ছাতা, টুপি সঙ্গে রাখতে হবে। পা ঢাকা জুতো হলে ভাল হয়। হাল্কা, ঢিলাঢালা সুতির পোশাক পরুন। স্কিন টাইট বা সিন্থেটিক কিছু পরবেন না।
বেশিক্ষণ রোদে থাকবেন না। যাঁদের পেশার জন্য রাস্তায় রোদে থাকতেই হবে, তাঁরা কিছুটা সময় অন্তর ছায়া বা ঠান্ডায় থাকার চেষ্টা করুন।
গর্ভবতী মহিলা, বয়স্করা রোদ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। যাঁদের অন্যান্য অসুখ রয়েছে তাঁরা এই সময় বাইরে বের হবেন না।
যাঁরা বেশি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে থাকেন, কনকনে ঠান্ডা জল খাওয়ার প্রবণতা থাকে, গরম থেকে বেরিয়েই দীর্ঘ সময় এসি ঘরে কাটান তাঁদের অসুখ চট করে ধরে নেবে। প্রচণ্ড গরম থেকে এসে এসি ঘরে ঢোকার আগে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। আবার এসি থেকে বেরিয়েও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে।
হিট স্ট্রোক ও হিট ক্র্যাম্প এড়াতে শরীর ঠান্ডা রাখতে হবে। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ছায়ায় বা অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা জায়গায় নিয়ে যান। চোখেমুখে জলের ঝাপটা দিন। পারলে ঠান্ডা জলে গা স্পঞ্জ করিয়ে দিন। বিপদ অনেক কেটে যাবে।