Latest News

আচমকা হৃদরোগে মৃত্যুর খবর ঘনঘন, শীতকালে বাড়ে হার্ট অ্যাটাক! কেন ঠান্ডায় বিপন্ন হৃদয়

দ্য ওয়াল ব্যুরো: সাম্প্রতিক সময়ে উত্তরপ্রদেশের কিছু ঘটনা ঘুম উড়িয়ে দেওয়ার মতোই ছিল। শীত পড়ার পরেই উত্তরপ্রদেশে প্রায় ১০৮ জনের মৃত্যু হয় হার্ট অ্যাটাকে (Heart Attack)। কানপুরের হার্ট ডিজিজ ইনস্টিটিউটের ডাক্তাররা বলেছেন, হার্টের রোগ যাঁদের আগে থেকেই রয়েছে তাঁরা এই ঠান্ডায় বিপর্যস্ত। শরীরে নানারকম অসুখ রয়েছে যাঁদের তাঁরাও ঝুঁকিতে। প্রতিদিন ওপিডিতে অন্তত ৬০০ জন করে হার্ট অ্যাটাকের রোগী আসছেন। অনুমান করা হচ্ছে, প্রচণ্ড ঠান্ডাতেই হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে তাঁদের।

অতিরিক্ত ঠান্ডা কি হার্ট অ্যাটাকের (Heart Attack) কারণ হতে পারে?

ঠান্ডা যত বাড়ে, তার সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে শারীরিক অস্বস্তিও। ঘাড়-মাথায় যন্ত্রণা হয়, বেড়ে যায় টেনশন। যাঁরা উচ্চ রক্তচাপের (Blood Pressure) সমস্যায় ভোগেন বা অল্পেতেই টেনশন করার অভ্যাস আছে, তাঁরা অতি অবশ্যই এই ধরনের কোনও অস্বস্তি টের পেলেই ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন, প্রেশার মেপে রাখুন। ডাক্তারবাবুরা বলছেন, শীতকালে তাপমাত্রা যত কমে, তত বাড়ে রক্তচাপ। তাই শীতের জায়গায় বেড়াতে গেলেও এই ধরনের রোগীদের বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।

From the India Today archives (2011) | Heart attacks: How young Indian men  are at high risk

আসলে যত বেশি ঠান্ডা পড়ে, তত সংকুচিত হয় রক্তবাহী নালীগুলি। তার মধ্যেও রক্ত চলাচল যথাযথ রাখতে গেলে শরীরকে রক্তচাপ বাড়াতেই হয়। ফলে যাঁরা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের এই ঋতুতে একটু বেশিই সাবধানে থাকা উচিত, তা না হলে হার্ট অ্যাটাকের (Heart Attack) ঝুঁকি বেড়ে যাবে। শীতকাল এমনিতে অনেকেরই প্রিয় মরসুম। বিশেষ করে বাঙালি সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে কয়েক দিনের শীতের জন্য। কিন্তু এই সময়ে নানা রকম রোগ-ব্যাধি বেড়ে যায়। জ্বর-সর্দি-কাশি যেমন বাড়ে, তেমনই বাড়ে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও।

আরও পড়ুন: ঝাঁকে ঝাঁকে তারারা জোট বেঁধেছে, পৃথিবীর প্রতিবেশী হয়ে এসেছে নতুন গ্যালাক্সি ক্লাস্টার

Heart Attack cases increase in winter know how to take care of heart health  in winter season sscmp | Heart Attack: सर्दियों में क्यों बढ़ जाते हैं  हार्ट अटैक के मामले? ठंड

শীতে কেন হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে?

যদিও খুব নির্দিষ্ট কোনও প্রমাণ নেই, তা-ও অনেকেই মনে করেন, হঠাৎ তাপমাত্রায় হেরফের হলে, তা প্রভাব ফেলে হার্টের উপরেও। বহু সমীক্ষায় দেখা গেছে, শীতের মরসুমে হার্ট অ্যাটাক ছাড়াও হার্টের অন্যান্য সমস্যা এবং স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন অনেকেই।

Preventing Winter Heart Attacks | Medanta

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতে আমাদেরে শরীরে স্নায়ুতন্ত্রের ‘সিমপ্যাথেটিক অ্যাক্টিভেশন’ (sympathetic activity on heart) বেড়ে যায়। তাই রক্তনালী সঙ্কুচিত হওয়ার প্রবণতা বাড়ে। একে বলে ‘ভ্যাসোকনস্ট্রিকশন’। এমন হলে শরীরে রক্তচাপ বেড়ে যায়। তাই সারা শরীরে রক্ত সরবারহ করতে আমাদের হৃদ্‌যন্ত্র দ্বিগুণ জোরে কাজ করা শুরু করে। বাইরের তাপমাত্রা অনেকটা কমলে, শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে অসুবিধা হয়। তাতে হাইপোথার্মিয়া হতে পারে যাকে হৃদযন্ত্রের রক্তনালীর ক্ষতি হয়। যাঁদের এমনিতেই কোনও রকম হৃদরোগ রয়েছে, তাঁদের শরীর এই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হিমশিম খায়।

শীতে হার্টের সমস্যা হওয়ার আরও একটা গুরুতর কারণ আছে

শীতের সময় অ্যাজমা বা হাঁপানির টান বাড়ে অনেকের। নানা অ্যালার্জিজনিত সমস্যা ভোগাতে পারে। শ্বাসযন্ত্রের জটিল সংক্রমণ হলে অক্সিজেন টানতে সমস্যা হয়। তখন হৃদপেশির উপরে চাপ পড়তে পারে।

আরও পড়ুন: করোনার চেয়েও ছোঁয়াচে এই মরশুমি জ্বর! ঘরে ঘরে সর্দি-কাশিতে নাজেহাল আট থেকে আশি, কারণ কী

Can cold weather increase the risk of heart attack? Know about winter  hypertension | Can News – India TV

তাপমাত্রার পারদ যত নামে ততই যেন বুকে পাথর চেপে বসে অনেকের। কখনও চিনচিনে ব্যথা, কখনও দমবন্ধ, হাঁসফাঁস দশা। ঘুমোতে গেলেই বুকের ভেতর সাঁই সাঁই। শ্বাস নিতে গেলে কাশির দমকে অস্থির। ঘন ঘন বুকে কফ,  লাগামছাড়া হাঁচি, টান, অ্যালার্জির সমস্যা বাড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাঁপানির টান বাড়লে বা অ্যাজমা সিভিয়ার হলে তার থেকে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে। এমনকি শ্বাসের সমস্যা বাড়তে থাকলে ব্রেন স্ট্রোকের সম্ভাবনাও বাড়ে।

হাঁপানি বা অ্যাজমা (Ashthma) হয় মূলত শ্বাসনালীতে প্রদাহের কারণে। দীর্ঘকালীন প্রদাহের ফলে শ্বাসনালীর স্বাভাবিক ব্যাস কমে যায় এবং সংবেদনশীলতা বাড়ে। ফলে ফুসফুসের ভিতর বায়ু ঢোকা ও বেরনোর পথ সংকীর্ণ হয়ে যায়। শ্বাসনালীর ভেতর মিউকাসের ক্ষরণ বাড়তে বাড়তে সেটা আরও সঙ্কুচিত হতে থাকে। সঠিক চিকিৎসা না হলে শ্বাসনালী পুরোপুরি অবরুদ্ধ হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

সাবধান থাকতে কী করবেন?

১)  শীতকালে চাঙ্গা থাকতে অনেকেই অতিরিক্ত মদ্যপান করে থাকেন। কিন্তু এই সময় অতিরিক্ত মদ্যপান করলে শরীরের তাপমাত্রা আচমকাই কমে যেতে পারে। এর ফলে দেহের অভ্যন্তরীণ মূল তাপমাত্রা কমে যায়, আরও সংকুচিত হয় রক্তনালী। যার ফলে বৃদ্ধি পায় রক্তচাপ।
২)  শীতকালে বারবার কফি খাওয়াও ডেকে আনতে পারে সমস্যা। রক্তচাপের সমস্যা থাকলে দিনে দু’বারের বেশি কফি না খাওয়াই বাঞ্ছনীয়।
৩)  শীত থেকে বাঁচতে অনেকেই ভারী শীতের পোশাক গায়ে চাপান। মনে রাখবেন, একটি মোটা শীতপোশাকের বদলে তুলনামূলক ভাবে পাতলা একাধিক পোশাক পরা শরীরের পক্ষে ভাল।
৪)  উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত উপযোগী সঠিক খাদ্যাভ্যাসও। শীতকালে রক্তচাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করতে শীতকালীন বিভিন্ন শাক সব্জি খাওয়া যেতে পারে।
৫) যাঁরা নিয়মিত শরীর চর্চা করেন, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে তাদের এই সময়টুকু একটু অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে। অযথা বাড়ির বাইরে গিয়ে শরীরচর্চা না করাই ভাল। খেয়াল রাখবেন যেন অতিরিক্ত পরিশ্রমে দেহের উপর চাপ না পড়ে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় অতিরিক্ত শরীরচর্চার ফলে বাইরের তাপমাত্রা ও শরীরের অভ্যন্তরীণ গড় তাপমাত্রা মধ্যে আচমকাই ভারসাম্য হারিয়ে যায়, এই তারতম্য ডেকে আনতে পারে হার্ট অ্যাটাকের মতো বিপদ।

You might also like