শেষ আপডেট: 6th June 2023 08:04
দ্য ওয়াল ব্যুরো: প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফের মৃত্যু হয়েছে অ্যামিলয়ডোসিস (amyloidosis) রোগে। তারপর থেকেই এই অসুখ নিয়ে চর্চা শুরু হয়। আমাদের দেশেও এই অসুখে আক্রান্ত অনেকে। কমবয়সিদের মধ্যেও বাড়ছে এই রোগ। চিকিৎসকরা বলেন অত্যন্ত বিরল এই অসুখ শরীরের অঙ্গ-প্রত্য়ঙ্গগুলোকে কুরে কুরে খায়। এতদিন এই অসুখের চিকিৎসার কোনও ব্য়বস্থা ছিল না দেশে। প্রথম কেরলে অ্যামিলয়ডোসিস সেন্টার খোলা হল।
কেরলের অমৃতা হাসপাতালে অ্যামিলয়ডোসিস চিকিৎসার জন্য আলাদা বিভাগ খোলা হয়েছে। সেখানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও নার্সরা সর্বক্ষণ থাকবেন। রোগীদের পরীক্ষা, চিকিৎসা, কাউন্সেলিং-এর ব্যবস্থা থাকবে।
অ্যামিলয়ডোসিস একটি বিরল প্রকৃতির রোগ। এই রোগে জড়িত সমস্ত টিস্যু ও কোষই ক্ষতিগ্ৰস্ত হয়। কোষের মধ্যে অস্বাভাবিক পদ্ধতিতে কিছু বিশেষ প্রকৃতির প্রোটিন জমতে শুরু করে। প্রোটিনের স্তর পরতে পরতে জমা হয় বিভিন্ন অঙ্গের কোষে। ফলে সেইসব অঙ্গের স্বাভাবিক কাজ করার ক্ষমতা কমতে থাকে। প্রোটিনের প্রাচীর রক্ত চলাচলেও বাধা দেয়। ধীরে ধীরে সারা শরীরে ছড়াতে শুরু করে। একের পর এক অঙ্গ বিকল হতে শুরু করে।
কেরলের অমৃতা হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হাসিম আহমেদ বলছেন, অ্যামিলয়েড (amyloid ) নামে এক ধরনের প্রোটিনের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হয় শরীরে। প্রতি মানুষের শরীরেই প্রোটিনের নির্দিষ্ট চাহিদা আছে। এর চেয়ে বেশি হলেই গন্ডগোল শুরু হয়। এই প্রোটিন শরীরে তৈরি হয়ে কোষগুলির উপর স্তরের মতো জমা হতে থাকে। ফলে কোষগুলি কাজ করা বন্ধ করে দেয়। সবচেয়ে আগে প্রভাব পড়ে হার্টে, তারপর কিডনিতে। ধীরে ধীরে সমস্ত অঙ্গে ছড়াতে থাকে রোগ।
ডাক্তারবাবুরা বলছেন, কী থেকে এমন প্রোটিন তৈরি হয় তা এখনও অজানা। মনে করা হচ্ছে, কোনও রোগ থেকে বা বংশানুক্রমিকভাবেও এই অসুখ ছড়াতে পারে।
লাইট চেন (এএল) অ্যামিলয়ডোসিস সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। কিডনি, প্লীহাতে এটি হয়। যাদের অস্থিমজ্জা সংক্রান্ত অসুখ থাকে, তাদের এটি হতে পারে। অস্থিমজ্জার প্লাজমা কোষে এই প্রোটিনের স্তর জমতে থাকে। প্লাজমা কোষগুলি লাইট চেন এবং হেভি চেন দুই জাতীয় প্রোটিনের মাধ্যমে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। যদি প্রোটিনের মাত্রা বেড়ে যায়, তাহলে তা হার্টে প্রভাব ফেলে। হার্টবার্ন শুরু হয়ে যায়। হৃদগতির ছন্দ বদলে যেতে থাকে।
আরেকটি টাইপ হল–এএ অ্যামিলয়ডোসিস। আগে বলা হত– সেকেন্ডারি অ্যামিলয়েডোসিস। ক্রনিক সংক্রমণ জনিত অসুখ থেকে অ্যামিলয়েড প্রোটিনের মাত্রা বাড়তে পারে। যেমন রিউমাটয়েড আর্থারাইটিস, আলসারেটিভ কোলাইটিস ইত্যাদি। এই ধরনের অ্যামিলয়ডোসিস হার্ট, লিভার, পাকস্থলী, কিডনিতে সবচেয়ে আগে রোগ ছড়ায়।
ট্রান্সথিরেটিন অ্যামিলয়ডোসিস বংশানুক্রমিক। তাই এটিকে ফ্যামিলিয়াল অ্যামিলয়েডোসিস বলা হয়ে থাকে। ট্রান্সথিরেটিন এক ধরনের প্রোটিন, যাকে প্রিঅ্যালবুমিনও বলা হয়, লিভারে তৈরি হয় এটি। যা লিভার, স্নায়ুতন্ত্র, হার্ট, কিডনি নানা অঙ্গে রোগ ছড়ায়।
ছুঁলেই শিহরিত হয় গাছ, খারাপ-ভাল স্পর্শও বুঝতে পারে, আশ্চর্য খোঁজ বিজ্ঞানীদের
উপসর্গ কী কী ?
ক্লান্তি, ওজন কমে যাওয়া,পেট ফুলে যাওয়া, পা-গোড়ালি ফুলে যাওয়া এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ। অসাড়তা, ব্যথা, হাতে পায়ে কাঁপুনি ধরতে থাকে। ত্বকের রঙে বদল আসে। চোখের নীচে বা চারধারে বেগুনি স্পট দেখা দেয়। রক্ত বেরোতে শুরু করলে বেশি সময় লাগে জমাট বাঁধতে। জিভ ফুলে যায়, রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।
চিকিৎসা কী?
অ্যাবডমিনাল ফ্যাট প্যাড ও বায়োপসি করে এই রোগ নির্ণয় করা হয়। কখনও কখনও প্রাথমিকভাবে লিভার বা হাড়ের মজ্জার বায়োপসিও করা হয়।
অ্যামিলয়ডোসিসের চিকিৎসায় নানারকম হয়। রোগের ধরন দেখে কেমোথেরাপিও করা হয়। ঠিক যেভাবে ক্যানসারের চিকিৎসা হয়।
তাছাড়া অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনে রোগ সারানোর চেষ্টা হয়।
ট্রান্সথিরেটিন অ্যামিলয়ডোসিসের জন্য বেশ কয়েকটি ওষুধে অনুমতি দিয়েছে মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন।