শেষ আপডেট: 21st September 2023 11:26
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আগে ডিপ্রেশন, স্কিৎজোফ্রেোনিয়া, বাই-পোলার ডিসঅর্ডার, পারকিনসন্স এইরকম বহু রোগের সঙ্গে অ্যালঝাইমার্স (Alzheimer's Disease) রোগীদেরও ‘পাগল’ বলে চিহ্নিত করা হত। কিন্তু এখন অ্যালঝাইমার্সের মতো ভয়ঙ্কর মানসিক ব্যধি নিয়ে নানারকম গবেষণা চলছে। এই রোগ সারানো যেতে পারে এমন নানারকম থেরাপি আনছেন গবেষকরা। আসছে টিকাও। পাশাপাশি, রোজকার জীবনযাপনে এমন কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস রপ্ত করার কথা বলা হচ্ছে যাতে অ্যালঝাইমার্সের ঝুঁকি অনেক কমে যাবে। ডায়েটও হওয়া চাই তেমনই।
শুধু ভারত বলেই নয়, গোটা বিশ্ব জুড়েই বাড়ছে এই রোগের প্রকোপ। অ্য়ালঝাইমার্সের (Alzheimer's Disease) রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। ওষুধ, কাউন্সেলিংয়ে রোগীর মানসিক স্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় মাত্র। স্মৃতি পুরোপুরি ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। অ্যালজাইমার্সের চিকিৎসায় এখন একাধিক নতুন পদ্ধতির প্রয়োগ শুরু করেছেন বিজ্ঞানীরা। আজ ২১ সেপ্টেম্বর বিশ্ব অ্যালঝাইমার্স দিবস। চলুন জেনে নেওয়া যাক অ্যালঝাইমার্স রোগটি কী, কেন হয়, কী কী উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। এই বিষয়ে বিস্তারিত বলেছেন আইএলএস হাসপাতালের কনসালট্যান্ট নিউরোলজিস্ট ডক্টর নদী চৌধুরী।
মানুষের মস্তিষ্ক রাসায়নিক বা কেমিক্যালে ভরা। ধীরে ধীরে মস্তিস্কের সেলগুলি নষ্ট হতে থাকে। মগজের কোষে যদি অস্বাভাবিকভাবে কোনও প্রোটিন জমা হতে থাকে তাহলে স্মৃতির পর্দাটা ঝাপসা হতে শুরু করে। জেনেটিক কারণে এই রোগ হতে পারে, আবার এর জন্য পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, সামাজিক অবস্থাও দায়ী হতে পারে। স্মৃতির পাতা ঝাপসা হতে শুরু করলে কোনও মানুষ বা জায়গা চিনতে পারা যায় না। মস্তিস্কের সংরক্ষণ প্রণালী নষ্ট হয়ে যায়।
ডাক্তারবাবু বলছেন, অ্যালঝাইমার্সে (Alzheimer's Disease) মহিলারা পুরুষদের থেকে বেশি ভোগেন। সাধারণত ৫৫ বছর বয়সের পর থেকে অ্যালঝাইমার্সের রোগের প্রকোপ দেখা দিতে থাকে। কোনও দুরারোগ্য বা ক্রনিক অসুখ থাকলে যেমন হার্টের রোগ, হাইপারটেনশন, ক্রনিক কিডনির রোগ, ডায়াবেটিস, ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিনাশ হলে তার থেকেও পরবর্তী সময়ে অ্যালঝাইমার্সের (Alzheimer's Disease) প্রকোপ শুরু হতে পারে। বংশে কারও এই রোগ থাকলে তার থেকেও পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে অসুখ ছড়াতে পারে।
কী কী উপসর্গ দেখে সতর্ক হতে হবে?
বয়স বাড়লে শরীরের কলকব্জার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দুর্বল হতে থাকে স্মৃতিও। অনেক সাধারণ বিষয়ও বেমালুম ভুলে যান অনেকে। মনে রাখতে পারেন না। আপাত ভাবে এই সমস্যা তুচ্ছ মনে হলেও ভুলে যাওয়ার সমস্যা সব সময়ে মজার বিষয় না-ও হতে পারে। বেশির ভাগ সময়েই স্মৃতিভ্রংশের সমস্যার সূচনা হয় এ ভাবেই। শুরুর দিকে অ্যালঝাইমার্স রোগে আক্রান্তরা সদ্য ঘটা কথোপকথন কিংবা ঘটনাগুলি ভুলে যেতে পারেন। জিনিসপত্র ভুল জায়গায় রাখা, স্থান এবং বস্তুর নাম ভুলে যাওয়া, সঠিক শব্দটি ভাবতে সমস্যা হওয়া এবং বার বার একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে থাকা— কোনও ব্যক্তির এই উপসর্গগুলি (Alzheimer's Disease) দেখা দিলে সতর্ক হতে হবে।
রোগের মাত্রা বাড়লে ধীরে ধীরে কথা বলতে সমস্যা হবে রোগীর। চেনা মুখ, নাম এমনকী নিজের পরিচয়ও ভুলে যেতে পারেন। ঘন ঘন মনের অবস্থার বদল হয়। মাঝপথ থেকে কোনও কাজ ফেলে উঠে যাওয়ার প্রবণতা অ্যালঝাইমার্সের উপসর্গ। রান্না হোক কিংবা বাজারের ফর্দ করা— কোনও কাজ শেষ না করে হঠাৎ উৎসাহ হারিয়ে ফেলাও অ্যালঝাইমার্সের উপসর্গ। এই রোগে মনের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না, তাই একই কথা বার বার বলে যাওয়াও রোগের লক্ষণ হতে পারে।
কোন বয়স থেকে রোগের সূত্রপাত হতে পারে?
অ্যালঝাইমার্স মূলত বার্ধক্যজনিত রোগ। সাধারণ ৫৫-৬০ বছরের পর থেকে এই রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তবে যদি জেনেটিক কারণে অ্যালঝাইমার্স দেখা দেয়, তাহলে ৩৫ বছরের পর থেকেই উপসর্গ একটু একটু করে দেখা দিতে থাকে।
অ্যালঝাইমার্স রোগ কী সারানো যায়?
অ্যালঝাইমার্স (Alzheimer's Disease) সাধারণ সারে না। সঠিক চিকিৎসা হলে এর উপসর্গগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তবে এখন অনেক আধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতি বেরিয়ে গেছে যাতে অ্যালঝাইমার্স রোগীও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।
চিকিৎসা কী?
ঘুম সঠিক হলে নিয়ন্ত্রণে থাকে অনেক কিছু। রক্তচাপ থেকে, রক্তে শর্করার মাত্রা হোক কিংবা ওজন। এসবেরই ভারসাম্য বজায় রাখা যায় সঠিক ঘুমের মাধ্যমে। বয়স বাড়তে থাকলে ঘুমের (Sleep) সময় কমতে থাকে। বিশেষ করে ৩০ থেকে ৪০ বছর বা তার বেশি বয়সীদের ৭ ঘণ্টা ঘুমই আদর্শ।
প্রাথমিক ভাবে নিজেকে সচেতন হতে হবে। আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় স্ট্রেস থাকবেই। কিন্তু তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। রোজকার জীবনে শরীরচর্চার সঙ্গে খাদ্য তালিকায় জাম, মাশরুম, ব্রকোলি মস্তিষ্কের জন্য প্রয়োজন। আলাদা আলাদা ঘরে আলাদা আলাদা রঙের ব্যবহার বাসস্থানের একঘেঁয়েমি কাটিয়ে তুলবে। নিয়মিত ভাল গান শোনাও এক ধরনের মানসিক চর্চা।
আরও পড়ুন: বন্ধ্যত্বের সমাধান লুকিয়ে ডায়েটেও, সুস্থ সন্তান চাইলে কোন কোন বিষয়ে অবহেলা নয়
নিয়মিত শরীরচর্চা, ধূমপান বন্ধ করা এবং উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। বেশি করে শাকসব্জি এবং ফল খেতে হবে। তা ছাড়া বই পড়া, গান গাওয়া, ছবি আঁকা বা যে কোনও শিল্পচর্চা করা, বাগান করা, দাবা খেলার মতো বিষয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে। প্রাথমিক পর্যায় থেকেই রোগকে ঠেকিয়ে রাখতে সতর্ক হতে হবে।
প্রকৃতির মাঝে থাকার চেষ্টা করুন। গাছপালা আছে এমন জায়গায় হাঁটুন। দিনে কিছুটা সময় মেডিটেশন করার চেষ্টা করুন। এতে মন ভাল থাকে, অ্যাংজাইটি কমে যায়।