শেষ আপডেট: 9th March 2024 18:29
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কখনও বৃষ্টি, আবার কখনও রোদ। আবহাওয়ার ভোলবদলে নানা অসুখবিসুখ বাড়ছে। নিকাশি নালার নোংরা জল, নদী-পুকুরের জলে মিশছে পয়ঃপ্রণালীর মলবাহিত জল। ফলে নদী-পুকুরের জলেও জন্ম নিচ্ছে মারাত্মক সব পরজীবী, ব্যাকটেরিয়া। কোথাও রেলের ধোপাখানা থেকে বিষাক্ত ক্ষারমিশ্রিত জল গঙ্গায় গিয়ে পড়ছে নালা বেয়ে, কোথাও আবার শিল্প-নিঃসৃত তরল বর্জ্য-সহ নানাবিধ দূষণকারী বস্তু গিয়ে মিশছে গঙ্গার জলে। বিষাক্ত পাঁকজল এবং আর্বজনা গঙ্গায় গিয়ে পড়ছে অবিরাম। সেই বর্জ্য মেশায় গঙ্গার জলের রংটাই পাল্টে গিয়েছে কোনও কোনও জায়গায়।
পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গার বর্তমান ছবিটিও সেই সাক্ষ্য দেয়। সেখানে দূষণ শুধুমাত্র ঘাটগুলিতে সীমাবদ্ধ নেই, কলকাতা এবং হাওড়া, উভয় শহরের গঙ্গাতীর লাগোয়া বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি পরিবেশবিদরা গঙ্গার বিভিন্ন ঘাট ও তীর ঘুরে যে ভয়াবহ অবস্থা দেখেছেন তার পরিপ্রেক্ষিতেই তাঁরা পরিবেশ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। এই কিছুদিন আগেই কলকাতাতেও নোংরা জলে অ্যামিবার মত মারাত্মক পরজীবীর সংক্রমণ দেখা দিয়েছিল। পুকুরে স্নান করতে নেমে আক্রান্ত হন এক প্রৌঢ়। অ্যামিবা নাক বা কান দিয়ে ঢুকে তাঁর মগজ কুরে কুরে খাচ্ছিল। শেষে অ্যামিবা বের করে প্রৌঢ়ের প্রাণ বাঁচায় পিজি হাসপাতাল। পিজির সিসিইউ চিকিৎসকরা বলেছিলেন, অ্যাকানথ্যামিবা নামের একধরনের অ্যামিবার সংক্রমণ হয়েছিল প্রৌঢ়ের মাথায়। শিল্পাঞ্চলের কাছাকাছি এলাকায়, দূষিত জলে দেখা মেলে এদের। দ্রুত অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ড্রাগ না দিলে মস্তিষ্কের কোষ ছিঁড়েখুঁড়ে দেয় এই প্রাণীরা।
শহরাঞ্চলেও নিকাশি নালার জলে এখনও পর্যন্ত অনেকেই তাঁদের বাসনপত্র ধুয়ে নিয়ে যান। নিকাশি নালার কথা বাদ দিলে রয়েছে পুকুরের নোংরা জল। পুকুর সংস্কার করা হয় না দিনের পর দিন। এক জায়গায় আবদ্ধ জলে ক্রমাগত মিশছে পুকুরপাড়ের বর্জ্য পদার্থ, মানুষের মল মূত্র, গৃহপালিত গরুর মল মূত্র। পুকুরের সেই আবদ্ধ জলেই আবার হাত ধোওয়া থেকে গৃহস্থালির বাসন মাজা বা ঘষা বা ধোওয়ার কাজ করছেন গ্রামের অনেক মহিলাই। এমন ছবি গ্রাম বাংলার আনাচে-কানাচে। ইউনেস্কো বছরের পর বছর কোটি কোটি টাকা খরচ করে এখনও পর্যন্ত মানুষকে ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতন করতে পারেনি। মানুষদের এখনও বোঝানো যায়নি নালার জলে হাত ধোয়া, বাসন মাজা, গৃহস্থালির কাজ করা, পুকুরের জল বা নদীর জল ব্যবহার করা বিপজ্জনক।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবাহিত রোগে আক্রান্তদের মধ্যে শিশুদের আধিক্য বেশি। কলেরা, আমাশয়, টাইফয়েড প্রভৃতি রোগ নোংরা, অপরিষ্কার জল থেকেই হয়। এখন শহরাঞ্চলেও জলবাহিত নানা রোগ বাড়ছে।
জলবাহিত কী কী রোগ ছড়াতে পারে
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সময় পেটের রোগ (waterborne diseases) একটি অন্যতম সমস্যা। এ সমস্যা হলেই আগেই চিকিৎসকের কাছে যান। তার পরামর্শ নিয়ে কাজ করুন। কারণ, অযথা রোগ ফেলে রাখলে হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে। সাধারণত এই সময় ইঁদুর, ছুঁচো বা বেজি ইত্যাদি প্রাণীর বর্জ্য পদার্থ থেকেও রোগ ছড়ায়।
সাধারণত এই সব প্রাণীরা মাটিতেই তাদের বর্জ্য ত্যাগ করে। বর্ষার সময় তা জলে মিশে যায়। ফলে জমে থাকা জল থেকেই এই রোগ বেশি ছড়ায়। পায়ের ফাটা অংশ বা কাটাছেঁড়ার জায়গা দিয়েই এই জল শরীরে প্রবেশ করে। ফলে মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়। তাই যদি জমা জলের ওপর দিয়ে কোথাও যেতে হয়, তা হলে খালি পায়ে নয়, জুতো পরেই জল পারাপার করুন। জমা জল যত এড়িয়ে চলা যায় ততই ভাল।
জল বাহিত রোগের মধ্যে সবচেয়ে সাঙ্ঘাতিক হল কলেরা। আগে গ্রামের পর গ্রাম মহামারী লেগে যেত। এর কারণ হল অনেক জায়গাতেই যে পুকুরে স্নান করা হয়, কাপড় কাচা হয়, বাসন মাজা হয় সেই পুকুরের জলই পানীয় হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
বেসিলারি ও এমিবয়েড নামক দু’রকমের জীবাণুর সংক্রমণে হয় আমাশয়। রোগের সংক্রমণের জীবাণু মানুষের শরীরে প্রবেশ করে, বাড়াবাড়ি হলে মলের সঙ্গে রক্তপাত হয়।
জলবাহিত রোগের মধ্যে পড়ে টাইফয়েডও। সালমানেলা টাইফি নামক এক প্রকার জীবাণু সংক্রমণে এই রোগ হয়। মানুষের মল মূত্র কফের মধ্যে এই রোগের জীবাণু থাকে। দূষিত জল থেকে জীবাণু ছড়ায়।