শেষ আপডেট: 21st August 2024 16:54
দ্য ওয়াল ব্যুরো: 'ছোট্ট টিপ-হাল্কা লিপস্টিক' দিয়ে মেক আপ সেরে ফেলা নিয়ে যতই কথা হোক, আজকালকার মেয়েরা বলছেন, কাজল ছাড়া সাজ অসম্পূর্ণ। কেবল সাজ নয়, কাজল যেন আত্মবিশ্বাসের আর এক নাম। চোখের কিনারায় কাজলের দাগ বসলে যেন ব্যক্তিত্বই বদলে যায়। এমন অনেক মহিলা আছেন, কাজল না পরে বাড়ি থেকেই বেরোন না। কাজল যেন তাঁর চেহারার সঙ্গে একেবারে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। তবে কাজল যে কেবলই মহিলাদের প্রসাধনের জিনিস, তা নয়। অনেক পরিবারে শিশুদের চোখে এবং কপালে পরানো হয় কাজল।
তবে কাজলের সাজ যতই প্রিয় হোক না কেন, কাজল পরা চোখ নিয়ে যত প্রেমের গানই লেখা হোক না কেন, জনপ্রিয় এই কসমেটিক পণ্যের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে স্বাস্থ্যের গুরুতর ঝুঁকিও! এর মূল কারণ হল, কাজলে ব্যবহত অন্যতম উপাদান, সীসা বা লেড। একাধিক গবেষণায় নিশ্চিত করা হয়েছে এ কথা।
সম্প্রতি কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের একটি রিপোর্ট বলছে, ভারতীয় কাজলগুলিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সীসা ব্যবহার করা হয় এবং এই কারণে একাধিক শারীরিক সমস্যার ঘটনা ঘটেছে বলে প্রমাণ মিলেছে।
বেঙ্গালুরুর গ্লেনেগেলস হাসপাতালের কসমেটিক সার্জেন, ডক্টর রুচি সচদেব এ বিষয়ে বলেন, 'ভারতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কতির সঙ্গে মিশে রয়েছে কাজলের ব্যবহার। কিন্তু এখন স্বাস্থ্য-নিরাপত্তা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। কাজলগুলিতে রং ডিপ করার জন্য যে সীসা ব্যবহার করা হচ্ছে, তা চোখের এবং শরীরের আরও একাধিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বড়সড় ক্ষতি করছে।'
ভুবনেশ্বরের মণিপাল হাসপাতালের কনসালটেন্ট নিউরোলজিস্ট ডক্টর আকাশ আগরওয়াল বলছেন, 'কাজল যতই সুন্দর হোক, এটি বিষক্রিয়ার কারণ হতে পারে। বেশ কিছু কাজলে অনেক বেশি পরিমাণে সীসা থাকে। সেই কাজল নিয়মিত ত্বকে বা চোখে লাগালে, সেই সীসা রক্তে গিয়ে মিশতে পারে, যা একটু একটু করে জমতে থাকে এবং অনেক শারীরিক ঝুঁকি তৈরি করে।'
চিকিৎসকরা বলছেন, সীসার বিষ এমনই এক জিনিস, যা শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্ক উভয়কেই প্রভাবিত করতে পারে। ব্যক্তির বয়স এবং এক্সপোজারের সময়কালের উপর নির্ভর করে এই প্রভাব বাড়তে থাকে। তবে শিশুদের শরীরে সীসা অনেক সহজে শোষিত হয় এবং এটি তাদের মস্তিষ্ক বিকেশকে ব্যাহত করে।
শেখার অসুবিধা
স্মৃতির সমস্যা
বিরক্তি এবং আক্রমণাত্মক আচরণ
মস্তিষ্কের বিকাশে দেরি
এই সব সমস্যাগুলি সাময়িক নয়, দীর্ঘমেয়াদী হয়ে ওঠে কাজলের নিয়মিত ব্যবহারে। পরবর্তী কালে তাদের পড়াশোনাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এই কারণে।
পেটে ব্যথা
কিডনি ফেলিওর
উচ্চ রক্তচাপ
কার্ডিয়াক সমস্যা
স্নায়ুর অসুখ
মাথাব্যথা
পারকিনসনিজম
গর্ভপাত
স্টিলবার্থ
সমস্যাগুলি যথেষ্ট উদ্বেগজনক হলেও, প্রশ্ন হল, কাজল ব্যবহারে যে ক্ষতি হচ্ছে, বা সীসা যে শরীরে ঢুকে ক্ষতি করছে, তা বোঝা যাবে কীভাবে?
দ্রুত ওজন কমে যাওয়া
পেটে ব্যথা
বমি
মাথাব্যথা
ফ্যাকাশে বা রক্তশূন্যতা
খিটখিটে হয়ে যাওয়া
অল্পে আগ্রাসী হয়ে ওঠা
ক্রমাগত ক্লান্তি
স্মৃতিশক্তি হ্রাস
জয়েন্ট এবং পেশিতে ব্যথা
হজমের সমস্যা
ডক্টর রুচি সচদেব বলছেন, দেখে শুনে, নামকরা ব্র্যান্ডের কাজল বেছে নিতে হবে, যারা পুরোপুরি সীসা-মুক্ত। ভাল করে প্যাকেটের গায়ে লেখা সব উপাদান পড়ে নিতে হবে কাজল কেনার আগে। কাজলের গায়ে উপাদান তালিকা স্পষ্ট লেখা না থাকলে তা এড়িয়ে যেতে হবে। ডেট এক্সপায়ার হয়ে যাওয়া কাজলও পরা চলবে না।
এখানে মনে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সীসার ভয় পেয়ে কেউ যদি বাড়িতে বানানো কাজল পরার কথা ভাবেন, তাহলে সেটা একেবারেই করা চলবে না। কারণ মাটির পাত্রের তলায় মোমবাতি ধরে যে কালি তথা কাজল তৈরি করা হয়, তাতেও সীসা থাকতে পারে অনেকটা পরিমাণে। এটি বরং আরও বেশি ক্ষতি করতে পারে চোখের তথা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের।