শেষ আপডেট: 19th June 2023 13:38
দ্য ওয়াল ব্যুরো: জন্মলগ্নে পৃথিবীতে (Earth) কি জল ছিল?
বিজ্ঞানীদের উত্তর, না।
পৃথিবী তৈরির ধাপে ধাপে জলও এসে যায় আশ্চর্যজনকভাবে। মহাজাগতিক পাথর, শিলাখণ্ড আর জল নিয়ে তৈরি হয় আমাদের বাসযোগ্য গ্রহ। পৃথিবীর তৈরির পরে ভরে যায় এর নদী-নালা-হ্রদ। জলে টইটম্বুর হয়ে ওঠে সাগর-মহাসাগর।
এখন প্রশ্ন হল পৃথিবীতে জল এল কোথা থেকে?
‘নেচার’ সায়েন্স জার্নালে গবেষণার খবর ছেপেছেন ব্রিটেন, আমেরিকা ও অন্যান্য দেশের বিজ্ঞানীরা। গবেষকরা বলছেন, পৃথিবী যখন তৈরি হচ্ছে তখন তা ছিল পাথুরে গ্রহ। ভেতরে গরম লাভা বা ম্যাগমার স্রোত বইছে। উথাল পাথাল হচ্ছে ভূস্তর। পৃথিবীর কিন্তু নিজস্ব জলের ভাণ্ডার ছিল না। পাথুরে গ্রহতে কীভাবে জল এল সেটাই ছিল বিস্ময়। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন, পৃথিবীর জলের উৎসই হল মহাকাশ। অর্থাৎ ভিনদেশি জলেই টইটম্বুর হয় পৃথিবী। সুদূর অতীতে মঙ্গল ও শুক্র গ্রহতেও জল ছিল বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। দুই গ্রহেই মৃত নদীর ফসিল, পাথরে জলের চিহ্ন মিলেছে যা প্রমাণ করে একসময় পৃথিবীর কাছাকাছি ওই দুই গ্রহতেও জলের অস্তিত্ব ছিল। কিন্তু সে জলও বা এল কোথা থেকে?
আকাশ ছেঁচে জল এল পৃথিবীতে?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, আজ থেকে ৪৪০ কোটি বছর আগেই জলে ভরে গিয়েছিল পৃথিবীতে। যতটুকু তথ্যপ্রমাণ বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন, তাতে অনুমান পৃথিবীতে জলের ধারা এনেছিল কোনও ভিনদেশি উল্কাপিণ্ড। জন্মলগ্নে সব গ্রহই তেড়েপুড়ে যাচ্ছিল। সেই সময় যেসব উল্কাপিণ্ড, মহাজাগতিক বস্তুরা আছড়ে পড়েছিল পৃথিবীতে, তাদের ভেতরে জলের সবটাই প্রচণ্ড উত্তাপে বাষ্পীভূত হয়ে গিয়েছিল। এই বাষ্প জমতে জমতে পেল্লায় মেঘ তৈরি করেছিল পৃথিবীর আকাশে।
কোটি কোটি বছর পর পৃথিবী ঠান্ডা হলে তখন সেইসব বিশাল মেঘ ঘণীভূত হয়ে বৃষ্টির আকারে নেমে আসে পৃথিবীর মাটিতে। পৃথিবীপৃষ্ঠের বড় বড় গর্ত, গিরিখাতগুলো তখন জলে টইটম্বুর হতে শুরু করে। জন্ম হয় নদী-নালা, সাগর-মহাসাগরের।
পৃথিবী ৮০ সেন্টিমিটার হেলে গেছে! এর জন্য দায়ী কি ভারত
বিজ্ঞানীদের দাবি, ওইসব উল্কাপিণ্ড হল সুপ্রাচীন মহাজাগতিক বস্তু। এদের বলা হয় কার্বনেশিয়াস মেটিওরাইট’। এদের জন্ম হয়ছিল সোলার-ক্লাউড বা সৌর মেঘ থেকে। ওই কার্বনে গড়া উল্কাগুলোই জল এনেছিল পৃথিবীতে।
উল্কাগুলোর মাটিতে মিশে থাকা খনিজ পদার্থ ও নানা ধরনের জৈব পদার্থ থেকেই জল তৈরি হয়েছিল বলে অনুমান। বিজ্ঞানীদের দাবি, উল্কায় থাকা জলে ছিল অফুরন্ত হাইড্রোজেনের আইসোটোপ- ‘ডয়টেরিয়াম’। যাকে আমরা ‘ভারী জল’ বলে জানি। আমাদের এই তিন ভাগ জলের গ্রহে ডয়টেরিয়াম ও হাইড্রোজেনের অনুপাত যতটা, ওই উল্কাগুলোতেও সেই অনুপাত ততটাই মিলেছে। এর থেকেই বিজ্ঞানীরা ধারণা করেছেন, উল্কাগুলোয় ডয়টেরিয়াম ছিল প্রচুর পরিমাণে। আর সেটাই ছিল পৃথিবীতে জলের উৎসের অন্যতম কারণ।