ঘরে ঘরে জ্বর।
শেষ আপডেট: 17th July 2024 20:13
দ্য ওয়াল ব্যুরো: দিন কয়েক আগেই খবর আসে, আম্বানির ছেলের বিয়েতে যেতে পারেননি অভিনেতা অক্ষয় কুমার। কারণ তিনি কোভিড আক্রান্ত ছিলেন। আবার এই রাজ্যেও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। বেশ কয়েকদিন ধরেই জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে ভুগছিলেন তিনি। হাসপাতালে ভর্তি হতেই রিপোর্ট আসে করোনা পজিটিভ।
দু'টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হলেও, গত কয়েক দিন ধরেই ঘরে ঘরে সর্দি-কাশি-জ্বরের খবর মিলছে। সঙ্গে দোসর গলাব্যথা। গাঁটে গাঁটে যন্ত্রণাতেও ভুগছেন অনেকে। শোনা যাচ্ছে, মুখের স্বাদেও বদল আসছে। যাঁদের আগে কোভিড হয়েছে, তাঁরা যেন অনেকেই মেলাতে পারছেন এই লক্ষণগুলো। যাঁদের হয়নি, তাঁরাও ভয় খানিকটা ভয় পাচ্ছেন বই কী। এই পরিস্থিতিতে সকলের একটাই প্রশ্ন, আবারও কি ফিরে আসবে সেই ভয়ের দিন?
এই প্রশ্নের উত্তর সময়ই দিতে পারবে, তবে এখনই আতঙ্কের কোনও কারণ নেই বলেই জানাচ্ছেন ডাক্তারবাবুরা। যদিও তথ্য বলছে, কোভিড সংক্রমণের খবর গোটা দেশের নানা প্রান্ত থেকেই আসছে। বাংলাও তার বাইরে নয়। এখনও পর্যন্ত সংখ্যায় তেমন বেশি না হলেও, কোভিডে আক্রান্ত হচ্ছেন কিছু মানুষ।
তবে আশার কথা হল, কোভিড সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে বিশেষ নতুন খবর এখনও সামনে আসেনি। ডাক্তারবাবুরা বলছেন, যে ক'টি পজিটিভ হওয়ার খবর মিলছে, তার সংখ্যাও ভয় ধরানোর মতো নয়। এমনকি সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঘটনাও ঘটেনি এখনও। তাই কোভিড মহামারীর মতো কিছু এখনই ভাবনায় আনার কোনও কারণ নেই বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা।
কিন্তু চার বছর আগের দুঃসহ স্মৃতি এখনও টাটকা বহু মানুষের মনে। সেই কারণেই বোধহয় চারিদিকে এই জ্বরজারির আবহে, কোভিড ফিরে আসা নিয়ে দুশ্চিন্তা শুরু হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ (সিনিয়র পাবলিক হেলথ স্পেশালিস্ট) ডাক্তার সুবর্ণ গোস্বামী জানালেন, বর্ষার সময়ে এই সর্দি-জ্বর প্রতিবারই হয়। তাই খুব বেশি দুশ্চিন্তার কারণ নেই, তবে সতর্ক থাকতেই হবে। তাঁর কথায়, 'এই জ্বরের বাড়বাড়ন্ত যে কোভিডের দিকে ইঙ্গিত করছে, এ কথা সরাসরি বলা যায় না। কয়েকটা কোভিড কেস আমরা পাচ্ছি ঠিকই, তবে তার মানে এই নয়, সব সর্দিজ্বরই কোভিড। সেটা নিশ্চিত হয়ে তখনই বলা যাবে, যখন কোভিড টেস্টের সংখ্যা আরও বাড়বে। এখন দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন রিপোর্ট দেখে তা বলা যাবে না।'
তিনি আরও বললেন, 'এই সময়টায় প্রতিবছরই বিভিন্ন রকম ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার দাপাদাপি বাড়ে। বাচ্চা এবং বয়স্করা বেশি করে আক্রান্ত হন, প্রায় প্রতি ঘরেই শোনা যায় সর্দিজ্বরের কথা। ফ্যারেঞ্জাইটিসও এই সময়ে খুব কমন। আবার আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গির ধরনও বদলাচ্ছে নিত্যনতুন ভাবে। ফলে জ্বরের ক্ষেত্রে সেই অপশনটিও মাথায় রাখতে হবে।'
ডক্টর গোস্বামী কোভিড নিয়ে আরও একটু আশ্বস্ত করে বললেন, 'এখন বেশিরভাগ মানুষেরই ভ্যাকসিন নেওয়া রয়েছে। ফলে কোভিড খুব দ্রুত সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাছাড়া এখনও নতুন কোনও স্ট্রেনের খবরও আসেনি। তাই কোভিডের কথা মাথায় রেখে বিশেষ কোনও আশঙ্কার কথা বলা যাচ্ছে না। তবে হ্যাঁ, জ্বর হলে সতর্ক থাকতেই হবে। জ্বরের ধরন ও সিম্পটম নিজেকে মনিটর করতে হবে। প্রয়োজন বুঝলে ডাক্তার দেখাতে হবে, তাঁর পরামর্শ নিয়ে টেস্ট করাতে হবে।'
প্রসঙ্গত, সারা বিশ্বেই ফের বাড়ছে কোভিডে আক্রান্তের সংখ্যা। গত মাসে আমেরিকায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ১ শতাংশ। এমারজেন্সিতে ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে ২৩ শতাংশ। সব মিলিয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে ১৩ শতাংশ। তবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে ২৫ শতাংশ।