শেষ আপডেট: 11th March 2024 17:23
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আপনি যে জল খান তাতে আয়রনের মাত্রা বেশি?
হয়ত আপনি নতুন বাড়িতে সবে উঠে এসেছেন। কিন্তু যে জল আসছে, তার স্বাদ ভাল নয়। তার উপর দেখছেন যে সাদা বেসিনে লাল দাগ পড়ছে, সাদা জামাকাপড় কাচার পরেও লাল দাগ। অর্থাৎ, আপনি বুঝলেন যে জলে আয়রন বেশি ( iron in drinking water) আছে। পানীয় জলে অতিরিক্ত আয়রন থাকলে আবার ব্যবহারিক জল যেমন স্নানের জল, কাপড়কাচার জল, বাসন মাজার জলে আয়রনের পরিমান বেশি থাকলে সাদা বেসিন, বাথটাব বা হাল্কা রঙের জামাকাপড়ে দাগছোপও পড়ে বেশি। এক্ষেত্রে নিজের স্বাস্থ্য ও গৃহস্থালিকে রক্ষা করার জন্য নানারকম পদ্ধতি মেনে চলতে পারেন।
কলকাতাতেও জলে আয়রন বাড়ছে। শহরের নানা এলাকায় এখনও রোজকার ব্যবহারের বা পানীয় জলে আয়রনের মাত্রা বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘোলা জল অপরিশ্রুত। কলকাতার চারপাশের অনেক আবাসনেই এই সমস্যা। বিশেষ করে যাদের বোরওয়েল করে বাড়িতে জল তোলা হয়, তাদের এই সমস্যা বেশি। বেসিনে বা মেঝেতে পড়া লাল দাগ না হয় ঘষে দিলে উঠে যাবে। কিন্তু এই জল যে আপনি রোজ খাচ্ছেন তাতে কতটা ক্ষতি হচ্ছে? এই সমস্যার সমাধানের জন্য কী কী করতে হবে জেনে নিন।
ডাক্তারবাবুরা বলছেন, জলে দু'ধরনের আয়রন থাকে, ফেরাস আয়রন এবং ফেরিক আয়রন, যা যথাক্রমে জলের ধাতব স্বাদ ও মরচে হিসেবে জলের লালচে রঙের জন্য দায়ী। ফেরাস আয়রন দূর করার জন্য কিনে নিন স্পেশাল আয়রন জলের ফিল্টার। আবার ফেরিক আয়রনের জন্য আপনার প্রয়োজন মেকানিকাল ওয়াটার ফিল্টার।
এখানে প্রশ্ন হতেই পারে যে ভারতে মানুষের শরীরে আয়রনের অভাব এত বেশি দেখা যায়। তাহলে যদি খাবার জলে একটু বেশি আয়রন থাকে, ক্ষতি কী? এর ফলে শরীরে তো বেশি আয়রন ঢুকতে পারবে! ডাক্তাররা বলছেন, পানীয় জলের আয়রনে লাভ খুব বেশি হয় না। এটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে থাকে ফেরিক সল্ট হিসেবে। এই সল্ট সহজে হজম হয় না। আমরা সারাদিনে যা খাবার খাই, অর্থাৎ ভাত, ডাল, সব্জি ইত্যাদি, তাতে ফাইটেট বা অক্সালেট নামক নানারকম রাসায়নিক থাকে যেগুলি এই আয়রনের সল্টের শোষণ আটকে দেয়। ফলে জলের আয়রন পেটে ঢুকলেও রক্তে আর ঢুকতে পারে না। বরং খাবার জলে অতিরিক্ত আয়রন থাকলে পাকস্থলীতে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, বমি বমি ভাব, পেটের অসুখ করতে পারে।
আয়রন সল্ট বেশি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারে। কেউ যদি দিনের পর দিন এই সমস্যায় ভোগেন, তাহলে এর থেকে অর্শ, ফিসার ইত্যাদি নতুন অসুখ দেখা দিতে পারে।
হিমোক্রোম্যাটোসিস অসুখ থাকলে যদি শরীরে অতিরিক্ত আয়রন ঢোকে তাহলে ত্বকের রঙ কালো হয়ে যেতে পারে। কঠিন লিভারের অসুখ হতে পারে।
জল শোধনের উপায় কী?
এখন হোল হাউস ওয়াটার ফিল্টার সিস্টেম অনেকটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বাজারে। এই পদ্ধতিতে আপনি খুব সহজেই জলের থেকে ফেরাস আয়রন সরিয়ে দিয়ে জল ফিল্টার করতে পারবেন। যেমন অনেক সময়ে হোল হাউস ওয়াটার সফটনার ব্যবহার করলেই কাজ হয়ে যায়। এর সাহায্যে অল্প মাত্রায় জলে আয়রন থাকলে তা খুব সহজেই ফিল্টার করে দেওয়া যায়।
যদি আয়রনের মাত্রা জলে বেশি থাকে, তাহলে হাল্কা সফটনারের বদলে আপনার প্রয়োজন হবে আয়রন ওয়াটার ফিল্টার – যাতে আপনার ব্যবহারিক জল খুব ভাল ভাবে পরিশোধন হতে পারে।
কলের জল ফিল্ট্রেশন সিস্টেম দিয়ে শোধন করার পরেও যদি দেখা যায়, জলের লালচে ভাব কমছে না এবং স্নানের সময় সেই জলের ব্যবহার করার জন্য চুল ও ত্বকের ক্ষতি হচ্ছে, তাহলে শাওয়ার ফিল্টার লাগানো যেতে পারে। এই জাতীয় ফিলটারের কাজ হল স্নানের সময় আয়রন ফিল্টার করে নেওয়া, কিন্তু এটি অবশ্যই একটি খরচসাপেক্ষ ব্যবস্থা।
তাছাড়া কেমিক্যাল অক্সিডাইজেশন, ফসফেট ট্রিটমেন্ট, অক্সিডাইজিং ফিল্টার ইত্যাদি নানা পদ্ধতি আছে জল পরিশোধনের। যেসব জায়গায় জলে আয়রনের মাত্রা বেশি, সেখানে ভাল ওয়াটার ফিল্টার সিস্টেম বসিয়ে নেওয়া যেতে পারে, এতে পানীয় জল ভালভাবে আয়রম মুক্ত হয়ে যাবে।