শেষ আপডেট: 13th March 2024 21:26
দ্য ওয়াল ব্যুরো: এ রাজ্যে একসময় যা ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে, এখন সেই অসাধ্য সাধনই হচ্ছে কলকাতায়। কিডনি প্রতিস্থাপন বা ট্রান্সপ্লান্টের জটিল অপারেশন এখন হচ্ছে সহজে ও খুব কম সময়ে। যন্ত্রণাহীন নিখুঁত অস্ত্রোপচারে প্রাণ সংশয়ের ঝুঁকিও কম। রোবোটিক্সের সাহায্য রোগীর নিখুঁত সার্জারি করে নজির গড়েছে নায়ায়ণা হেলথ-আরএন টেগোর হাসপাতাল। পূর্ব ভারতের প্রথম রোবোটিক্স সার্জারিতে কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে এই হাসপাতালেই।
নারায়ণা হেলথ আরএন টেগোর হাসপাতাল আবারও অঙ্গ প্রতিস্থাপনে নজির গড়েছে। কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের মতো জটিল অপারেশনে এখন রোবোটিক্সেরই সাহায্য নিচ্ছেন চিকিৎসকরা। নারায়ণা হেলথ-আরএন টেগোর হাসপাতাল সেখানে নতুন মাইলফলক তৈরি করেছে।
একটা সময় পর্যন্ত কিডনির কঠিন অসুখ করা মানেই যেন কিডনি বাদ দিয়ে দেওয়াই ছিল চিকিৎসা। এখন প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতির ফলে বদলে গেছে সেই ধারণা। মিনিম্যালি ইনভেসিভ সার্জারির (Kidney Surgery) কল্যাণে যে কোনও জটিল অপারেশনই এখন কম সময়ে ও কম ঝুঁকিতে করা সম্ভব। অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মতো জটিল ও সময়সাপেক্ষ অপারেশনেও ডাক্তারবাবুরা রোবোটিক্সেরই প্রয়োগ করছেন। নারায়ণা হেলথ-আরএন টেগোর হাসপাতালে এক রোগীর কিডনি প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া রোবোটিক্সের সাহায্যে নির্ভুলভাবেই হয়েছে বলে জানা গেছে।
আরএন টেগোর হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. দীপক শঙ্কর রায় ও তাঁর টিম এই অপারেশন করেছেন। মেডিক্যাল টিমে ছিলেন নারায়ণা হেলথ-আরএন টেগোর হাসপাতালের ডা. দীপক শঙ্কর রায়, ডা. তারশিদ আলী জাহাঙ্গীর, ডা. সত্যদীপ মুখোপাধ্যা এবং ডা. রবি রঞ্জন, প্রযুক্তিবিদ নূর হাসান-সহ অন্যান্যরা।
ডাক্তারবাবুরা বলছেন, কিডনি রোগে ভুগছিলেন রোগী। দীর্ঘসময় ধরে সংক্রমণজনিত রোগের কারণে কিডনিতে গভীর ক্ষত হয়ে গিয়েছিল। পাশাপাশি, প্রদাহজনিত রোগেও ভুগছিলেন রোগী। ডাক্তারবাবুরা বলছেন, অত্যধিক স্থূলতা বা ওবেসিটির কারণে প্রধাগত প্রক্রিয়ায় ওপেন সার্জারি করা সম্ভব ছিল না। তাতে বিপদ বাড়ত। অথচ কিডনির অবস্থা এমনই ছিল যে তা প্রতিস্থাপন করা প্রয়োজন ছিল। তাই রোবোটিক ট্রান্সপ্লান্টেরই সিদ্ধান্ত নেন ডাক্তারবাবুরা।
আরএন টেগোরের নেফ্রোলজিস্টরা বলছেন, রোগীর ওজন ছিল ১১০ কেজি, বিএমআই (BMI) ৩৬.৫। ডাক্তারবাবুরা বলছেন, কিডনি প্রতিস্থাপন এমনিতেও খুব জটিল প্রক্রিয়া। দাতার কিডনি গ্রহীতার শরীরের সঙ্গে মিলমিশ খাবে কিনা বা গ্রহীতার শরীর সেই ‘ফরেন বডি’ গ্রহণ করবে কিনা সেটা নিয়েই বেশি চিন্তা থাকে। আর রোগীর ওজন যদি বেশি হয় তাহলে অপারেশনের প্রক্রিয়া আরও জটিল হয়ে যায়। বিপদের ঝুঁকিও থাকে। কিন্তু রোবোটিক্স সার্জারিতে সেই ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। কিডনির শিরা, ধমনী থেকে ইলিয়াক শিরা ও ধমনীতে সুর্নিদিষ্ট অ্যানাস্টোমোসিস, সবই নিখুঁতভাবে হয়েছে রোবোটিক্সের সাহায্যে।
রোবোটিক কিডনি সার্জারি হলো একটি অনেক উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি যা কিডনি অপারেশনকে সহজে ও এবং নির্ভুলভাবে সম্পন্ন করে। । এখানে সার্জার একটি রোবোট ব্যবহার করে, যা অপারেশনের সময় কঠিন অংশগুলো সহজে সম্পন্ন করতে সাহায্য করে। এটি রোগীদের জন্য একটি দ্রুত এবং সুস্থ চিকিৎসা পদ্ধতি।
পেটের মধ্যে ছোট ফুটো করে সেখান দিয়ে মাইক্রো ক্যামেরা ও সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতির অতি ক্ষুদ্র সংস্করণ বা সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি রোগীর শরীরের মধ্যে প্রবেশ করানো হয়। রোবটের ৪টি রোবোটিক বাহু বা আর্মে এই সূক্ষ্ম যন্ত্রগুলো লাগানো থাকে। সার্জিক্যাল যন্ত্র ও ক্যামেরা শরীরে প্রবেশ করার পর সার্জেন চলে যান কনসোলে এবং রোবোটের বাহু বা আর্মে লাগানো প্রতিটি যন্ত্রকে আলাদা আলাদা করে নির্দেশ দেন কীভাবে কাজ করতে হবে।
শরীরের মধ্যে প্রবেশ করানো হাই ডেফিনেশন থ্রি-ডাইমেনশনাল ক্যামেরা ছবি পাঠিয়ে সার্জেনকে সাহায্য করে ও দিকনির্দেশে সহায়তা করে। রোবোটিক সার্জারিতে রোবটে লাগানো সূক্ষ্ম ফ্লেক্সিবেল যন্ত্রগুলো সার্জেনের নির্দেশ অনুযায়ী আমাদের হাতের কব্জির মতো বিভিন্ন দিকে মুভ করতে পারে। ফলে নিখুঁত ও নির্ভুল অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়।
এনএইচ আরএন টেগোর হাসপাতাল মুকুন্দপুরের নেফ্রোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. দীপক শঙ্কর রায় জোর দিয়ে বলেছেন, "দুরারোগ্য কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য কিডনি প্রতিস্থাপন দিবাস্বপ্ন হিসাবে রয়ে গেছে। তবে, অস্বাভাবিক মেদবহুলতা অপারেশনকে আরও জটিল করে তুলেছিল। কিন্তু এক্ষেত্রে রোগীকে আমরা সবচেয়ে উন্নত ও আধুনিক পরিষেবা দিয়েছি।"
এনএইচ আরএন টেগোর মুকুন্দপুরের রেনাল ট্রান্সপ্লান্ট অ্যান্ড রোবোটিক সার্জন বিভাগের কনসালট্যান্ট জিআই ডা. তারশিদ আলী জাহাঙ্গীরের কথায়, “একটি দল হিসেবে, আমরা স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে কী কী সম্ভব তা নতুন করে বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করি। প্রতিটি রোগীকে শ্রেষ্ঠ চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য। রোবোটিক কিডনি প্রতিস্থাপন সফলভাবে করে আমরা শুধু একটি জীবনই বাঁচাইনি বরং নিখুঁত ও নির্ভুল অপারেশন পদ্ধতির দৃষ্টান্ত তৈরি করেছি।”
রোবোটিক কিডনি প্রতিস্থাপন পূর্ব ভারতের এই প্রথম, এমনটাই জানিয়েছেন মুকুন্দপুরের নারায়ণা হাসপাতাল আরএন টেগোর হাসপাতালের ফেসিলিটি ডিরেক্টর অভিজিৎ সিপি। তিনি বলছেন, রোগীদের এই হাসপাতালে বিশ্বমানের পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। এই কৃতিত্ব দলের সকলের। নারায়ণা হেলথ গ্রুপের সিওও আর ভেঙ্কটেশও একই কথা বলেছেন। তিনি বলছেন, আগে রোবোটিক্স সার্জারি করাতে ভিন রাজ্যে যেতে হত রোগীদের। কিন্তু এখন এ রাজ্যেই উচ্চমানের ও আধুনিক চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে। রোগীদের যত্নআত্তিতেও কোনও খামতি রাখা হচ্ছে না।