Latest News

মহালয়ার ভোরে তর্পণ, পাখির রূপ ধরে আজও নেমে আসে পূর্বপুরুষের আত্মা?

দ্য ওয়াল ব্যুরো: আজ মহালয়া। তিথি অনুযায়ী আশ্বিন মাসের অমাবস্যা ভোর না হলেই গঙ্গার ঘাটে ঘাটে উপচে পড়েছে মানুষ। বুক জলে নেমে চলছে পিতৃতর্পণ। তিল জল হাতে কাঁপা কাঁপা সংস্কৃতে উচ্চারণ করছে- সৰ্ব্বেতে তৃপ্তিমায়ান্তু। মৃত গুরুজনের আত্মা যেন তৃপ্তি পায়। কিন্তু জানেন কি, কেন মৃত পরিজনদের উদ্দেশ্যে তিল জল দানের এই রীতি চলে আসছে বছরের পর বছর?

হিন্দুধর্মে যে কোন শুভ কাজের আগে নান্দীমুখ শ্রাদ্ধ করার বিধান রয়েছে। জগজ্জননী দুর্গার পুজো শুরু করার আগেও পূর্বপুরুষদের স্মরণ করে জল, তিল, চন্দন, তুলসীপাতা নিবেদন করতে হয়। এর মূলে রয়েছে সনাতনী বিশ্বাস— শরীর মরলেও আত্মা মরে না। আত্মার বিনাশ বা ক্ষয় নেই। তাই মাতৃ আরাধনার আগে পিতৃপুরুষের আত্মার তৃপ্তি সাধনের জন্যই মহালয়ার এই তর্পণ-শ্রাদ্ধ। (Mahalaya Tarpan)

Image - মহালয়ার ভোরে তর্পণ, পাখির রূপ ধরে আজও নেমে আসে পূর্বপুরুষের আত্মা?

মহাভারতের গল্পে আছে, মৃত্যুর পর মহাবীর কর্ণের আত্মা স্বর্গে গেলে তাঁকে খাবার হিসেবে শুধুই সোনা মণিমাণিক্য দেওয়া হয়। কর্ণ তো অবাক! জল নেই, খাবার নেই, শুধু সোনাদানা দিয়ে কী করবে সে। কৌতূহলী কর্ণ এর কারণ জানতে চাইলে বলা হয়, জীবিতকালে দানবীর কর্ণ প্রচুর সোনাদানা, মণিমাণিক্য দান করেছেন কিন্তু কখনওই পিতৃপুরুষের উদেশ্যে তিল-জল দেননি। সেই কৃতকর্মেই তার এই দশা। কিন্তু কর্ণ তো নিজের পূর্বপুরুষদের পরিচয়ই জানতেন না। যাহোক, শেষমেশ দোষ খণ্ডনের উপায় বাতলালেন দেবরাজ ইন্দ্র স্বয়ং। মর্ত্যে গিয়ে ষোলো দিন কর্ণকে পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে জল ও তিল তর্পণ করার আদেশ দিলেন। পুরাণ মতে, সেই ষোলো দিনই হল পিতৃপক্ষ।

আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের প্রতিপদ থেকে পিতৃপক্ষ শুরু হয়। এই একপক্ষকাল, মানে ১৫ দিন পরলোকগত বিদেহী আত্মার স্মরণে বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান করেন হিন্দুরা। পূর্বপুরুষদের সম্মানে শ্রাদ্ধ, তর্পণ, পিণ্ডদান করা হয়। মনে করা হয়, তর্পণের তিল-জল ঠিকমতো না পেলে রেগে যান মৃত পুর্বপুরুষেরা। তাঁদের অতৃপ্তির দীর্ঘনিশ্বাস লাগে পরবর্তী প্রজন্মের গায়ে। নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এই সংস্কার আর বিশ্বাসকে সামনে রেখেই অতীত পুরুষদের খিদে-তেষ্টা মেটাতে তাঁদের উদ্দেশ্যে করা হয় তর্পণ। (Mahalaya Tarpan)

পিতৃপক্ষের প্রথম দিন অগস্ত মুনির নামে তর্পণ করা হয়। এই দিনে অগস্ত ঋষি ও অন্যান্য ঋষিদের খুশি করা হয় তিল, ফুল আর ফল দিয়ে। শুধু মুনিঋষিরাই নয়, পিতৃ অমাবস্যার তিথিতে খুশি করতে হয় নিজের পূর্বপুরুষদেরও। জনশ্রুতি বলে, এই বিশেষ তিথিতে মৃত প্রিয়জনেরা তাদের নিকট মানুষের কাছে ফিরে আসে। (Mahalaya Tarpan)

পৌরাণিক বিশ্বাস বলে, পিতৃপক্ষের সময় পূর্বপুরুষরা পাখির রূপ ধরে নেমে আসেন পৃথিবীতে। এমন পরিস্থিতিতে তাদের কোনওভাবেই হেনস্থা করা উচিত নয়। মৃত গুরুজনদের খুশি করতে পিতৃপক্ষের এই বিশেষ সময়ে পশু-পাখিদের সেবা করার বিধানও রয়েছে হিন্দু শাস্ত্রে।

You might also like