Latest News

দেবী লক্ষ্মীর আট অবতার, তাঁরাই শাস্ত্র ও পুরাণে পরিচিতা অষ্টলক্ষ্মী নামে

দ্য ওয়াল ম্যাগাজিন ব্যুরো: সনাতন ধর্ম অনুযায়ী দেবী লক্ষ্মী হলেন জাগতিক ও আত্মিক সম্পদ, সৌভাগ্য, সৌন্দর্যের দেবী। তিনি সর্বমঙ্গলা ও ষড়রিপুবর্জিতা। তিনিই স্বর্গধামে বিষ্ণুপ্রিয়া স্বর্গলক্ষ্মী, গৃহস্তের গৃহে গৃহলক্ষ্মী এবং রাজগৃহে রাজলক্ষ্মী রূপে পূজিতা। তবে দেবী লক্ষ্মী ভীষণ চঞ্চলা। তাঁকে পাওয়া যতটা কঠিন, তাঁকে ধরে রাখা তার থেকে বেশি কঠিন। জীবনে সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে কণামাত্র অসদুপায় অবলম্বন করলে তাঁর কৃপা হারাতে হবে। অন্যদিকে সৎভাবে জীবিকানির্বাহ এবং শুদ্ধমনে নিয়মিত আরাধনা করলে দেবী লক্ষ্মীকে স্বগৃহে ধরে রাখা সম্ভব।দেবী দুর্গা যেমন নিজেকে নয় অবতার বা নবদুর্গায় প্রকাশ করেন, দেবী লক্ষ্মীও নিজেকে প্রকাশ করেন তাঁর আট অবতারের মাধ্যমে। শাস্ত্রে যাঁদেরকে বলা হয়েছে অষ্টলক্ষ্মী। তাঁরা হলেন আদিলক্ষ্মী, ধনলক্ষ্মী, ধান্যলক্ষ্মী, গজলক্ষ্মী, সন্তানলক্ষ্মী, বীরলক্ষ্মী, বিদ্যালক্ষ্মী ও বিজয়লক্ষ্মী। দেবী লক্ষ্মীর এই আট অবতার তাঁরই বিভিন্ন শক্তির প্রতীক। আমাদের গৃহে সাধারণত দেবী লক্ষ্মীর একটি রূপের পূজা হলেও, প্রতিষ্ঠিত মন্দিরগুলিতে অষ্টলক্ষ্মীই একযোগে পূজিতা হন। এবার জেনে নেব সেই অষ্টলক্ষ্মীর উপাখ্যান।

আদি লক্ষ্মী
দেবী লক্ষ্মীর আদি ও প্রধান রূপ হলেন দেবী আদি লক্ষ্মী। এই দেবী মহালক্ষ্মী, শ্রী ও ভার্গবী নামেও পরিচিতা। ইনিই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রতিপালক ভগবান নারায়ণের সহধর্মিনী। বৈকুণ্ঠে নারায়ণের পাশে সর্বদা এই দেবীকেই বিরাজ করতে দেখা যায়। কোনও শাস্ত্রে ইনি ঋষি ভৃগুর কন্যা ভার্গবী, আবার কোনও শাস্ত্রে ইনি সমুদ্ররাজের কন্যা। কারণ সমুদ্র মন্থনের সময় আবির্ভূতা হয়েছিলেন দেবী আদিলক্ষ্মী।
ইনিই আদ্যাশক্তির রূপান্তর।
ইনিই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির মূল শক্তি। সৃষ্টিযজ্ঞের মূল অগ্নিহোত্রী। এমনকি দেবদেবীদের সৃষ্টিও তাঁর হাতে। জগতের সমস্ত সম্পদের তিনিই আধার। দেবী আদি লক্ষ্মী চতুর্ভুজা। রক্তিম অথবা পীতবসনা এবং কমলাসনা দেবী আদি লক্ষ্মীর দুই হাতে থাকে পদ্ম ও শ্বেত পতাকা। দেবীর অপর দুই হাত থাকে অভয় ও বরদা মুদ্রায়। দেবী আদি লক্ষ্মীর অনির্বচনীয় রূপ দর্শন করলে জীবন সার্থক হয়ে যায়।কিন্তু এই দেবী আদিলক্ষ্মীই অশুভ শক্তির দমনে অসুরবিনাশিনী রূপ ধারণ করেছিলেন। হাতে তুলে নিয়েছিলেন মারণাস্ত্র। একবার দেবতারা অসীম বিপাকে পড়েছিলেন অত্যাচারী অসুররাজ কোলাসু্রের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে। তখন পূর্বদিক থেকে রণাঙ্গনে অবতীর্ণ হয়েছিলেন অষ্টাদশভুজা এবং উগ্ররূপা মহালক্ষ্মী ‘মা অম্বানি’। আশ্বিনের শুক্ল পঞ্চমীতে দেবী আদিলক্ষ্মী ‘মা অম্বানি’ রূপে বধ করেছিলেন কোলাসুরকে। এভাবেই দেবী তাঁর শান্ত ও উগ্ররূপের সাহায্যে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে শান্তি বজায় রাখেন।
পরিচ্ছন্ন ও কোলাহলহীন স্থানে থাকতে ভালোবাসেন দেবী আদিলক্ষ্মী। তিনি বিবাহিতা, তাই দেবী আদিলক্ষ্মীর পূজায় সাদা ফুল দেওয়া হয় না। কারণ সাদা রং বৈধব্যের পরিচায়ক। নিষ্ঠাভরে নিম্নলিখিত মন্ত্রটি উচ্চারণ করলে দেবী আদিলক্ষ্মী সম্পদ, সুখ ও সফলতা লাভের বরদান করেন-
‘সুমনস বন্দিত সুন্দরি মাধবি চন্দ্র সহোদরি হেমমযে।
মুনিগণ বন্দিত মোক্ষপ্রদায়িনী মঞ্জুল ভাষিণী বেদনুতে।
পঙ্কজবাসিনী দেবসুপূজিত সদ-গুণ বর্ষিণী শান্তিনুতে।
জয় জয় হে মধুসূদন কামিনী আদিলক্ষ্মী পরিপালয় মাম্।’

দেবী ধনলক্ষ্মী
অর্থের গুরুত্ব নিয়ে একবার ভগবান নারায়ণের সঙ্গে দেবী আদিলক্ষ্মীর মতপার্থক্য হয়েছিল। নারায়ণ অর্থকে গুরুত্ব দিতে চাননি। কিন্তু দেবী বলেছিলেন মানবজীবনে অর্থেরও প্রয়োজন আছে। মতানৈক্য চরমে ওঠার পর, দেবী লক্ষ্মী বৈকুণ্ঠ ছেড়ে মানুষের রূপ ধারণ করে চলে এসেছিলেন মর্ত্যে। দেবী লক্ষ্মী ছাড়া নারায়ণ অস্তিত্বহীন, তাই নারায়ণও বনবাসী কাঠুরের রূপ ধারণ করে চলে এসেছিলেন মর্ত্যে।
কাঠুরেরূপী নারায়ণ ছিলেন হতদরিদ্র। অরণ্য থেকে সংগ্রহ করা কাঠ বাজারে বেচে যা আয় হত, তা দিয়ে তাঁর নিজেরই গ্রাসাচ্ছাদন হত না। ঘটনাচক্রে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল মনুষ্যরূপ ধারণ করা দেবী লক্ষ্মীর। কিন্তু লক্ষ্মীকে বিবাহের মতো অর্থ নারায়ণের কাছে ছিল না। অগত্যা নারায়ণ অর্থ ধার করেছিলেন কুবেরের কাছ থেকে। বিবাহ হয়েছিল মনুষ্যরূপী নারায়ণ ও লক্ষ্মীর মধ্যে।
কিন্তু বিবাহের পর দীর্ঘকাল কেটে গেলেও কুবেরের ঋণ মেটাতে পারেননি নারায়ণ। কুবের নারায়ণকে বলেছিলেন মনুষ্যজন্মের ঋণ মিটিয়ে তবেই নারায়ণকে ফিরতে হবে বৈকুণ্ঠে। ঋণে জর্জরিত নারায়ণ সেই দিন অনুধাবন করেছিলেন অর্থের গুরুত্ব। দেবী লক্ষ্মীর স্মরণাপন্ন হয়েছিলেন নারায়ণ। দেবী উজাড় করে দিয়েছিলেন তাঁর অক্ষয় ধনভাণ্ডার। কুবেরের ঋণ মিটিয়ে বৈকুণ্ঠে ফিরে গিয়েছিলেন নারায়ণ, দেবী লক্ষ্মীকে নিয়ে। এই লক্ষ্মীই হলেন দেবী ধনলক্ষ্মী

দেবী উজাড় করে তাঁর অক্ষয় ধনভাণ্ডার

ষড়ভুজা, রক্তবসনা দেবী ধনলক্ষ্মীর চারটি হাতে থাকে শঙ্খ, চক্র, পবিত্র কলস ও তির-ধনুক। পঞ্চম হাত থাকে অভয় মুদ্রায়। ষষ্ঠ হাত থেকে ঝরে পরে সোনার মোহর। দেবী ধনলক্ষ্মী বৈষয়িক সুখ ও সমৃদ্ধির দেবী। নিঃস্বার্থ ও দয়ালু ব্যক্তির প্রতি দেবী ধনলক্ষ্মী সর্বদা সদয়। অসদুপায়ে সম্পদ আহরণ করা ব্যক্তির সম্পদ স্থায়ী হয় না তাঁরই অভিশাপে।নিষ্ঠাভরে নিম্নলিখিত মন্ত্রটি উচ্চারণ করলে দেবী ধনলক্ষ্মীর আশীর্বাদ পাওয়া যায়-
‘ধিমিধিমি ধিন্ধিমি ধিন্ধিমি দিন্ধিমী দুন্দুভি নাদ সুপূর্ণময়ে।
ঘুমঘুম ঘুঙ্ঘুম ঘুঙ্ঘুম ঘুঙ্ঘুম শঙ্খনিনাদ সুবাদ্যনুতে।
বেদ পুরাণেতিহাস সুপূজিত বৈদিক মার্গ প্রদর্শযুতে।
জয় জয় হে মধুসূদন কামিনী ধনলক্ষ্মী রূপেণ পালয় মাম্।’

দেবী ধান্যলক্ষ্মী
অজ্ঞাতবাসে থাকাকালীন পাণ্ডবেরা একবার উপস্থিত হয়েছিলেন এক ঘন অরণ্যে। অনেক খুঁজেও আহার্য জোগাড় করতে পারেননি পঞ্চপাণ্ডব। শুরু হয়েছিল উপবাস। ভক্তদের অবস্থা দেখে বিচলিত হয়েছিলেন দেবী লক্ষ্মী। দেখা দিয়ে পাণ্ডবদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন কাঠের একটি পাত্র। সেটি পুর্ণ ছিল বিভিন্ন আহার্য্য বস্তু দিয়ে। পাত্রটির একটি বিশেষত্ব ছিল, খালি হয়ে গেলে নিজে থেকেই আবার ভরে উঠত পাত্রটি। এইভাবেই ক্ষুধার্ত ভক্তদের রক্ষা করেন দেবী ধান্যলক্ষ্মী।
দেবী ধান্যলক্ষ্মী কৃষিসম্পদদাত্রী। ইনি কৃষকের গোলা শস্যে ভরিয়ে তোলেন। জমিতে থাকা ফসলের সুরক্ষা নিশ্চিত করেন। অষ্টভুজা এই দেবীর পরনে থাকে সবুজ বস্ত্র। দেবীর আটটি হাতের মধ্যে ছ’টি হাতে থাকে দুটি পদ্ম, গদা, ধানের শিষ, আখ ও কলা। বাকি দুটি হাত থাকে অভয় ও বরদা মুদ্রায়। নবান্ন উৎসবে বাংলার প্রতিটি কৃষকের গৃহে পূজিতা হন এই দেবী। নিষ্ঠাভরে রোজ নিম্নলিখিত মন্ত্রটি উচ্চারণ করলে দেবী ধান্যলক্ষীর আশীর্বাদ পাওয়া যায়-
‘অহিকলি কল্মষ নাশিনী কামিনী বৈদিকরূপিণী বেদময়ে।
ক্ষীরসমুদ্ভব মঙ্গলরূপিণী মন্ত্রনিবাসিনী মন্ত্রনুতে।
মঙ্গলদায়িনী অম্বুজবাসিনী দেবগণাশ্রিত পাদযুতে।
জয় জয় হে মধুসূদন কামিনী ধান্যলক্ষ্মী পরিপালয় মাম্।’

দেবী গজলক্ষ্মী
ভগবান নারায়ণের নিত্য পূজা করত বিশালকায় হস্তিরাজ গজেন্দ্র। নারায়ণের নিত্যপূজা করতেন দেবী লক্ষ্মীও। কিন্তু আকারের কারণেই নারায়ণ পূজায় অনেক সময় নিয়ে ফেলত গজেন্দ্র। কিন্তু জগদীশ্বর নারায়ণের প্রতিটি মুহূর্ত দামি, তাই তিনি দেবী লক্ষ্মীকে বলেছিলেন গজেন্দ্রের সঙ্গেই নিত্যপূজা করতে। এতে গজেন্দ্রের পূজা দ্রুত সমাপ্ত হবে। সেই দিন থেকে গজেন্দ্র ও দেবী লক্ষ্মী একত্রে নারায়ণের আরাধনা শুরু করেছিলেন। এই লক্ষ্মীর নাম গজলক্ষ্মী।
দেবী গজলক্ষ্মী চতুর্ভুজা। তিনি পদ্মের ওপর বসে থাকেন। তাঁর দুই হাতে থাকে দুটি পদ্ম। বাকি দুটি হাত থাকে অভয় ও বরদা মুদ্রায়। দেবীর দুইপাশে দাঁড়িয়ে থাকে একটি পুরুষ ও একটি স্ত্রী হস্তি। তাদের শুঁড় থেকে নির্গত হওয়া জল, বৃষ্টিধারার মতো ঝরে পড়ে দেবী গজলক্ষ্মীর দেহে। দেবী গজলক্ষ্মী প্রাণীসম্পদের রক্ষক। পশুকুলের ত্রাতা। তাই যাঁরা গবাদি পশুপালন করেন, দেবী গজলক্ষ্মী তাঁদের আরাধ্যা।জনশ্রুতি আছে, নিম্নলিখিত মন্ত্রটি নিষ্ঠাভরে পাঠ করলে সঙ্গে সঙ্গে তাঁর আশীর্বাদ মেলে-
‘জয় জয় দুর্গতিনাশিনী কামিনী বৈদিক রূপিণী বেদমযে।
রধগজ তুরগপদাতি সমাবৃত পরিজন মণ্ডিত লোকনুতে।
হরিহর ব্রহ্ম সুপূজিত সেবিত তাপ নিবারিণী পাদযুতে।
জয় জয় হে মধুসূদন কামিনী গজলক্ষ্মী রূপেণ পালয় মাম্।’

দেবী সন্তানলক্ষ্মী
দেবী সন্তানলক্ষ্মী সন্তানসুখপ্রদায়িনী। একটি শিশুকে কোলে নিয়ে ষড়ভুজা এই দেবী পদ্মাসনে বিরাজ করেন। রক্তিম বা পীত বস্ত্র পরিহিতা দেবীর চারটি হাতে থাকে দুটো কলসি, তরবারি ও ঢাল। বাকি হাত দুটি থাকে অভয় ও বরদা মুদ্রায়। এই দেবীর আশীর্বাদেই আমরা সন্তান লাভ করি। এমনকি কোনও শিশু যদি তার ভাই-বোন পাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে, তার মনোকামনাও পূরণ করেন দেবী। এছাড়াও দেবী সন্তানলক্ষ্মী আমাদের সন্তানদের দীর্ঘায়ু করেন।তাদের সার্বিক বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা দেখেন। নিষ্ঠাভরে নিম্নলিখিত মন্ত্রটি উচ্চারণ করলে দেবী সন্তানলক্ষ্মীর আশীর্বাদ পাওয়া যায়-
‘অয়ি খগবাহিনী মোহিনী চক্রিণী রাগবিবর্ধিনী জ্ঞানময়ে।
গুণগণবরিধী লোকহিতৈষিণী সপ্তস্বর ভূষিত গাননুতে।
সকল সুরাসুর দেব মুনীশ্বর মানব বন্দিত পাদযুতে।
জয় জয় হে মধুসূদন কামিনী সন্তানলক্ষ্মী পরিপালয় মাম্।’

দেবী বীরলক্ষ্মী (ধৈর্যলক্ষ্মী)
প্রাচীনকালে ভোজ নামে একজন রাজা ছিলেন। তিনি ছিলেন দেবী লক্ষ্মীর একনিষ্ঠ ভক্ত। তাঁর রাজ্যের সর্বত্র সুখ ও শান্তি বিরাজ করত। একদিন রাজা ভোজের স্বপ্নে দেখা দিয়েছিলেন দেবী লক্ষ্মী। তিনি ভক্ত ভোজকে বলেছিলেন অষ্টলক্ষ্মীর সাত লক্ষ্মীর রাজ্য ছেড়ে যাওয়ার সময় এসেছে। তাই রাজা যেন অষ্টলক্ষ্মীর মধ্যে রাজার একান্তই প্রয়োজনীয় লক্ষ্মীকে বেছে নেন। সেই লক্ষ্মীই থেকে যাবেন ভোজের রাজ্যে। রাজা চেয়েছিলেন দেবী বীরলক্ষ্মী বা ধৈর্যলক্ষ্মীকে। কারণ সাহস ও ধৈর্য থাকলে মানুষের পক্ষে অসাধ্য কিছু নেই।
দেবী বীরলক্ষ্মী বা ধৈর্যলক্ষ্মী পূজিতা হন রণক্ষেত্রে শৌর্য, বীর্য ও বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য। আবার এই দেবীই পূজিতা হন সংসার-জীবনের সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে জয়লাভের জন্য। রক্তবস্ত্র পরিহিতা অষ্টভুজা দেবীর হাতে থাকে শঙ্খ, চক্র, ধনুক, তির, ত্রিশূল (মতান্তরে তরবারি) ও সোনার ফলক (মতান্তরে বই)। দেবীর বাকি দুটি হাত থাকে বরদা ও অভয় মুদ্রায়। নিষ্ঠাভরে নিম্নলিখিত মন্ত্রটি উচ্চারণ করলে দেবী বীরলক্ষ্মী বা ধৈর্যলক্ষ্মীর আশীর্বাদ পাওয়া যায়-
‘জয়বরবর্ষিণী বৈষ্ণবী ভার্গবী মন্ত্র স্বরূপিণী মন্ত্রময়ে।
সুরগণ পূজিত শীঘ্র ফলপ্রদ জ্ঞান বিকাসিনী শাস্ত্রনুতে।
ভবভয়হারিণী পাপবিমোচনি সাধু জনাশ্রিত পাদযুতে।
জয় জয় হে মধুসূদন কামিনী ধৈর্যলক্ষ্মী সদাপালয় মাম্।’

দেবী বিদ্যালক্ষ্মী
পদ্মাসনা, শুভ্রবস্ত্র পরিহিতা, শ্বেতবর্ণা দেবী বিদ্যালক্ষ্মী জ্ঞানরূপ ধনপ্রদায়িনী। চতুর্ভুজা দেবীর দুটি হাতে থাকে দুটি পদ্ম। অন্য দুই হাত থাকে অভয় ও বরদা মুদ্রায়। দেবী বিদ্যালক্ষ্মী বৈষয়িক সুখ ও সমৃদ্ধির দেবী নন। তিনি জ্ঞান, বুদ্ধি ও আত্মিক সমৃদ্ধির দেবী। তিনি ভক্তের সুপ্ত প্রতিভা জাগ্রত করেন। জীবনে সফল হতে গেলে এই দেবীর আশীর্বাদ একান্তই জরুরি।নিম্নলিখিত মন্ত্রটি উচ্চারণ করলে দেবী বিদ্যালক্ষ্মীর আশীর্বাদ পাওয়া যায়-
‘প্রণত সুরেশ্বরী ভারতী ভার্গবী শোকবিনাশিনী রত্নময়ে।
মণিময় ভূষিত কর্ণবিভূষণ শান্তি সমাবৃত হাস্যমুখে।
নবনিধিদায়িনী কলিমলহারিণী কামিত ফলপ্রদ হস্তযুতে।
জয় জয় হে মধুসূদন কামিনী বিদ্যালক্ষ্মী সদাপালয় মাম্।’

দেবী বিজয়লক্ষ্মী
বহুদিন আগে মর্ত্যে ‘বিদ্যা রান্নার’ নামে এক দরিদ্র ব্যক্তি বাস করতেন। তিনিও ছিলেন দেবী লক্ষ্মীর একনিষ্ঠ ভক্ত। বিদ্যার নিষ্ঠা দেখে তুষ্ট দেবী দর্শন দিয়েছিলেন। কিন্তু ভক্ত বিদ্যাকে আরও একটু পরীক্ষা করার জন্য দেবী বলেছিলেন, বিদ্যার জন্ম অশুভ মুহূর্তে তাই সে জীবনে সম্পদশালী হতে পারবে না। তা শুনেও ভক্ত বিদ্যা দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা থেকে বিচ্যুত হননি। বরং আরও কঠোরভাবে শুরু করেছিলেন দেবী লক্ষ্মীর তপস্যা। ত্যাগ করেছিলেন আহার ও নিদ্রা।

বিচলিত লক্ষ্মী তখন বিদ্যার কুটিরে উজাড় করে দিয়েছিলেন তাঁর ধনসম্পদ। কিন্তু বিদ্যা ততদিনে অন্য সম্পদের সন্ধান পেয়ে গিয়েছিলেন। তিনি জয় করেছিলেন নিজের কামনা ও বাসনা। তাই তাঁর কাছে অর্থ সম্পদ হয়ে উঠেছিল মূল্যহীন। তাই ভক্ত বিদ্যা, দেবী লক্ষ্মীর দেওয়া সম্পদ দিয়ে নির্মাণ করেছিলেন বিজয়নগর রাজ্য। দেবীর দেওয়া সমস্ত সম্পদ তিনি বিলিয়ে দিয়েছিলেন সেই রাজ্যের জনসাধারণের মধ্যে। এই দেবীই হলেন বিজয়লক্ষ্মী। অষ্টভুজা এই দেবী রক্তবস্ত্র পরিহিতা। দেবীর ছ’টি হাতে থাকে চক্র, শঙ্খ, তরবারি, ঢাল, ফাঁস ও পদ্ম। দুটি হাত থাকে বরদা ও অভয় মুদ্রায়। রণক্ষেত্র সহ, জীবনের সকল বাধাবিপত্তি জয় করে সাফল্য অর্জনের ক্ষেত্রে এই দেবীর করুণা একান্তই আবশ্যক। তাই দেবী জয়লক্ষ্মী নামেও পরিচিতা। নিষ্ঠাভরে নিম্নলিখিত মন্ত্রটি উচ্চারণ করলে দেবী বিজয়লক্ষ্মীর আশীর্বাদ পাওয়া যায়-
‘জয় কমলাসনি সদ্গতিদায়িনী জ্ঞানবিকাসিনী গানময়ে।
অনুদিনমর্চিত কুঙ্কুম ধূসর ভূষিত বসিত বাদ্যনুতে।
কনকধরাস্তুতি বৈভব বন্দিত শঙ্করদেশিক মান্যপদে।
জয় জয় হে মধুসূদন কামিনী বিজয়লক্ষ্মী পরিপালয় মাম্।’

You might also like