শেষ আপডেট: 10th June 2023 12:20
মরুরাজ্যের 'সোনার কেল্লা', রাজপুতদের ডেরায় বিশ্বের প্রথম সারির গ্র্যান্ড হোটেল রামবাগ প্যালেস
দ্য ওয়াল ব্যুরো: রাজস্থান— নামটা শুনলেই মনে পড়ে যায় ছোট্ট মুকুলের ‘সোনার কেল্লা’র কথা। শুধু সোনার কেল্লাই নয়, রাজপুত বীরদের এই রাজ্যে রয়েছে অগুণতি কেল্লা ও দুর্গ। রাজপুত রাজাদের রাজকীয় স্বর্ণমহল। আট থেকে উনিশ শতকের মধ্যে নির্মিত এই দুর্গগুলি সে সময়ের রাজকীয় সংস্কৃতি, বাণিজ্য, এমনকী সামরিক নির্মাণশৈলীর ধারক ও বাহক। রাজপুত রাজাদের অনেক দূর্গ ও রাজপ্রাসাদই এখন খোলনলচে বদলে রাজকীয় হোটলের চেহারা নিয়েছে। সেইসব রাজপ্রাসাদের আভিজাত্য ও আতিথেয়তা না দেখলে বোঝার নয়। রাজস্থানে এমন কিছু রাজমহল আছে যা এখন বিশ্বের প্রথম সারির গ্র্যান্ড হোটেলের তকমা পেয়েছে, তার মধ্যে একটি হল রামবাগ প্যালেস (Rambag Palace)।

১৮৩৫ সালে তৈরি এই রাজমহল। রয়্যাল এই প্যালেস তৈরি করিয়েছিলেন রাজপুত রাজা দ্বিতীয় সাওয়াই মান সিং। তাঁর প্রিয়তমা রানি গায়ত্রী দেবীর জন্য এই রাজমহল তৈরি করিয়েছিলেন রাজা।
প্রকৃতি আপন খেয়ালে সাজিয়েছে নিজেকে! ভারতের এই ১০টি গ্রাম যেন স্বর্গ

গান্ধীনগর জয়পুর স্টেশন থেকে ৪ কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে রামবাগ প্যালেস। রাজপুত রাজাদের এই রাজমহল এখন তাজ গ্রুপের অধীনে। রাজপ্রাসাদের পরিকাঠামো ও স্থাপত্যে বদল না এনেই তাকে রাজকীয় হোটেলের চেহারা দিয়েছে তাজ গ্রুপ।


জয়পুর হল রাজস্থানের রাজধানী, যাকে আমরা ভালবেসে ‘পিঙ্ক সিটি’ বা ‘গোলাপি নগরী’ নামে ডাকি। এই জয়পুরেই আছে ‘হাওয়া মহল’—যা কি না মহারাজা সাওয়াই মান সিংই নির্মাণ করেন ১৭৯৯ সালে। মহারাজা ছিলেন কৃষ্ণের ভক্ত, তাই মহলটি তিনি প্রভু কৃষ্ণকেই উৎসর্গ করেছিলেন। এ হাওয়া মহলে ৩৬৫টি জানালা রয়েছে। তখনকার দিনে নারীদের পর্দা প্রথার জন্যই জানালা নির্মাণ করা হয়েছিল, যাতে রানি জানালায় এসে হাওয়া খেতে পারেন।


রাগবাগ প্যালেস নিজের রানির জন্যই বানিয়েছিলেন মহারাজা সাওয়াই মান সিং। সুন্দরী রানির রূপের জৌলুসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্যালেসের প্রতিটি স্থাপত্য ও শিল্পকলা নিখুঁতভাবে তৈরি করিয়েছিলেন মহারাজা। প্যালেসের অন্দরমহলে ৭৮টি ঘর আছে যা এখন রাজকীয় সুইটে বদলে গেছে। প্রতিটি ঘর তাদের ভিন্ন কারুকাজে অপূর্ব।

এক একটি এক এক রকম। কোনওটা রাজা ও রানির জন্য তৈরি রাজকীয় ঘর। কোনওটা অতিথিদের থাকার জন্য তৈরি হয়েছিল। বেলেপাথরে তৈরি এই রাজমহল এখন বিশ্বের প্রথম সারির গ্র্যান্ড হোটেল।


রাজপুতদের তৈরি বিশাল বল রুম এখন সুবর্ণ মহল। এটাই সবচেয়ে বড় রেস্তোরাঁ। তাছাড়া আছে ভেরান্দা ক্যাফে। ছাদ খোলা আধুনিক ক্যাফেও তৈরি করা হয়েছে রাজমহলে। দুটি বার, সুইমিং পুল, পোলো বার, হান্টিং লজ, স্পা, মেডিটেশন সেন্টার কী নেই। গোটা রাজমহলেই ওয়াই ফাই এর ব্যবস্থা আছে। দেশি ও বিদেশি পর্যটকরা যেমন এখানে রাজপুত আভিজাত্যের ছোঁয়া পাবেন, তেমনই আধুনিক বিলাসব্যসনের সুবিধাও পাবেন।


রাজমহলকে ঘিরে ৪৭ একরের মতো জায়গা নিয়ে রয়েছে বাগান। সবুজ গাছ গাছালি মনকে শান্ত করবে। বিয়ে বা কোনও উৎসব অনুষ্ঠানের জন্য হাওয়া মহল ভাড়া পাওয়া যায়। ডেস্টিনেশন ওয়েডিং করবেন বলে যাঁরা ভাবছেন তাঁদের আগে থেকে বুক করতে হবে। অতিথিদের থাকার জন্য হাওয়া মহলের পাশেই রয়েছে বিশাল জায়গা। স্পেশাল মেনু যদি ভেবে থাকেন তাহলে তা রেঁধে দেওয়ার জন্য দেশের নামী শেফরাও হাজির থাকবেন সেখানে।


রামবাগ প্যালেসে থাকার ইচ্ছা থাকলে গাঁটের কড়ি একটু বেশিই খসাতে হবে। রাজমহলের খুব সাধারণ সুইটের ভাড়াই ৩৫ হাজার থেকে শুরু। যদি রানি কা মহলে থাকার ইচ্ছা থাকে তাহলে খরচ হবে বিশাল। তবে রাজপুত ঘরানার স্বাদ পাবেন ভরপুর। লর্ড লুইস মাউন্টব্যাটেন, প্রিন্স চার্লস, জ্যাকলিন কেনেডি থেকে দেশ ও বিদেশের নামী দামি ব্যক্তিত্ব, তারকারা এখানে থেকে গেছেন। রামবাগ প্যালেসকে জয়পুরের রত্ন বলেন এখানকার লোকজন। তাহলে কী ভাবছেন, একবার রাজপুতদের অন্দরমহলে থেকেই আসুন!