
স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারে নানা বিপদ, হতে পারে হাড়ের দীর্ঘমেয়াদী অসুখও
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পৃথিবীটা যেন ছোট হতে হতে হাতের মুঠোতেই চলে এসেছে। আজকের ব্যস্ততার জীবন স্মার্টফোন ছাড়া ভাবাই যায় না। কাজেই হোক বা অবসরে, আড্ডা বা ব্যাঙ্কের কাজ, ইলেক্ট্রিসিটি বিল জমা দেওয়া, অনলাইন শপিং, সিনেমা দেখা, ভার্চুয়াল অনুষ্ঠান ইত্যাদি কারণে ফোনের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখাটা একটু কঠিনই এই যুগে। কিন্তু জানেন কি দীর্ঘক্ষণ স্মার্টফোন আপনার শরীরের কতটা ক্ষতি করছে? এমনকি বহুক্ষণ ব্যবহারের ফলে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিও হতে পারে!
কল্যাণ এবং ফর্টিস হাসপাতালের হাড় ও শিরদাঁড়ার সার্জেন ডঃ রাঘবেন্দ্র কে এস জানান অধিকাংশ পেশেন্টরাই একটা কমন সমস্যা নিয়ে তার কাছে আসছেন। আঙুলের, হাতের,বা কখনও কনুইয়ের ব্যথা সংক্রান্ত সমস্যা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে অতিরিক্ত ফোন ব্যবহার করেই এমনটা হচ্ছে। উনি এর নাম দিয়েছেন “সেলফি এলবো” বা “টেক্সটিং থাম্ব”।
তিনি জানিয়েছেন, কিছু উপায় আছে যার থেকে নিজেকে এই ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন।
১. দীর্ঘক্ষণ হাতে ফোন নিয়ে সেলফি তোলার চেষ্টা করবেন না। সেলফি স্টিক ব্যবহার করুন। অথবা হাতের পাশে বা নীচে কিছু রেখে হাতটাকে একটু সাপোর্ট দেবেন। তাতে অতটা ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।
২. সবসময় বুড়ো আঙুল দিয়েই ফোন ঘাঁটবেন না। স্ক্রোল করার জন্য, কিছু লেখার জন্য অন্য আঙুল ব্যবহার করুন মাঝে মাঝে।
৩. ফোনটাকে একটা জায়গায় রেখে কিছুক্ষণ ব্যবহার করুন। একই হাতে সবসময় ফোন ধরে লিখলে হাত প্রায় অবশ হয়ে যায়।
৪. যদি সবসময় বুড়ো আঙুল দিয়েই আপনি ফোনে কিছু টাইপ করেন, তাহলে চেষ্টা করবেন আঙুলের উপরের অংশ সবসময় ব্যবহার না করে, তলায় ভর দিয়ে লেখার।
৫. হাতের কব্জি সোজা রেখে ফোন ব্যবহার করবেন। এতে হাতের কব্জির উপর চাপ পড়ে না। হাতের আঙুল, বুড়ো আঙুল, কব্জির ঠিক রেখে ব্যবহার করলে হাতের যন্ত্রণা কিছুটা কমে।
৬. সর্বদা বুক, চিবুক আর চোখের সঙ্গে সোজাসুজি রেখে ফোন ব্যবহার করবেন। এতে ঘাড়ে যন্ত্রণা করে না বা শিরদাঁড়ায় সমস্যাও হয় না।
৭. ফোন ব্যবহারের সময় মাঝে মাঝে বিরতি দিন। কাজের মাঝে অন্তত ২০ মিনিট ফোন ছাড়া থাকতে চেষ্টা করুন।
কিছু সহজ এক্সারসাইজের কথাও বলেছেন ডাক্তারবাবু, যা নিয়মিত করতে পারলে উপকার পাবেন।
আঙুল ও হাতের জন্য: টুইস্টের মত করে হাতটা মাঝে মাঝে ঘুরিয়ে নেবেন। আঙুলগুলো ছড়িয়ে আবার গুটিয়ে এনে মুঠো করে, পুরো হাতটাই ঘুরিয়ে নেবেন। এভাবে বেশ কয়েকবার করবেন। এতে কম যন্ত্রণা করবে।
হাতের কব্জির জন্য: হাতটা কনুই বরাবর সোজা ধরে থাকুন। হাতের কব্জিকে সেইদিকে মেলে ধরে ২০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। তারপর নর্মাল অবস্থায় ফিরিয়ে এনে আবার ওরকম করুন। আঙুলগুলোকে কব্জির দিকে ছড়িয়ে ক্লক-ওয়াইজ, অ্যান্টি ক্লক-ওয়াইজ ১৫ সেকেন্ড ধরে ঘোরাবেন।
কাঁধের জন্য: একটু বেন্ড করে ১০ বার, আবার সাধারণ জায়গায় টানটান করে ১০ বার ঘোরাবেন। এরপর বাঁ হাত উপরে তুলে সোজাদিকে, উল্টোদিকে ৫ বার করে ঘোরাবেন। ডান হাতের ক্ষেত্রেও তাই।
ঘাড়ের জন্য: আকাশের দিকে মাথা তুলে বেশ খানিকক্ষণ রেখে মুখের নীচের দিকে যায় এমন লম্বা লম্বা শ্বাস নেবেন। এভাবে কিছুক্ষণ পর আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুন। এতে ঘাড়ের যন্ত্রণা কিছুটা কমে।