
ঘুম চোখে পিচুটি কেন হয়, চটচটে হয়ে জুড়ে যায় চোখের পাতা
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সকালবেলা ঘুম ভাঙতেই চোখের কোণা জুড়ে চটচট, কটকট করে। আঠালো স্যাঁতস্যাঁতে সাদা পদার্থগুলো আঙুল দিয়ে টেনে সাফ করতে হয়। অনেকে আবার চোখ কটকট করলেই রগরাতে শুরু করে দেন। তাতেও বিপত্তি। চোখ ফুলে ঢোল। মনির চারপাশে লাল দাগ। তখন আই ড্রপ আনতে ছুটতে হয়। চোখের কোণাজুড়ে সকাল সকাল যারা রাজত্ব করে তারা নিছকই নিরীহ পিচুটি। এমনিতে কোনও ঝামেলা করে না, তবে যদি ঘষাঘষি বেশি হয় তাহলেই সমস্যা তৈরি হয়।
পিচুটি কী?
পিচুটি হল অতিরিক্ত জিনিস। অনেকটা আবর্জনার মতো। সারাদিনে চোখে যা যা ঢুকছে তার মধ্যে বাতিল জিনিসগুলো চোখ ছেঁকে বের করে দেয়। এর সঙ্গে চোখের জল, মিউকাস ইত্যাদি জমে গিয়ে আঠালো পদার্থ তৈরি করে। সারা রাত ধরে চোখ এই সাফাইয়ের কাজ করে, অনেকটা ঘরবাড়ি পরিষ্কারের মতো। তারপর যা জমা হয়, সেটাই বাইরে ঠেলে বের করে দেয়। চোখের কোণায় সেইসব পদার্থই সারা রাত ধরে জমতে থাকে। সকালে চোখ খুলতেই তখন চটচট, কটকট, কড়কড় শুরু হয়ে যায়।
কড়কড় করলেই চোখ চুলকাবেন না
চোখ যতই কড়কড় করুক আলতো হাতে পিচুটি সাফ করে নিলেই হবে। হাল্কা রুমাল দিয়েও পরিষ্কার করা যায়। সবচেয়ে ভাল ঠান্ডা জল, তাই দিয়ে চোখ দিব্যি পরিষ্কার হয়ে যায়। কিন্তু পিচুটি হটাতে চোখ বেশি ঘষাঘষি না করাই ভাল। এতে আইলিডের যেমন ক্ষতি হয়, তেমনি ক্ষতি হতে পারে চোখের কর্নিয়ারও। বার বার চোখ চুলকালে সংক্রমণও হতে পারে। হাতের নোংরা চোখে ঢুকে ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে। তখন চোখ ফুলবে, জল পড়বে, আরও বেশি পিচুটি জমা হবে।
কখন বুঝবেন সমস্যা?
সকাল সকাল পিচুটি সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু যদি ঘন ঘন পিচুটি জনমতে থাকে, চোখের পাতা জুড়ে গিয়ে চটচটে ভাব আসে, চোখ দিয়ে জল পড়তে থাকে তখন বুঝতে হবে সমস্যা হয়েছে। অনেক সময় কনজাংটিভাইটিস হলে বা চোখে কোনও রকম সংক্রমণ হলে এমন লক্ষণ দেখা দিতে থাকে। অতিরিক্ত ধূলিকণা বা অ্যালার্জেন জমা হলেও চোখ তা বের করে দেয়। বেশি কান্নাকাটি করলে বা চোখ দিয়ে ক্রমাগত জল পড়লেও এমন লক্ষণ দেখা দেয়। তখন চোখে প্রদাহ হয়, দৃষ্টি ঝাপসা হতে পারে, চোখে যন্ত্রণা হতে পারে। সে সময় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াই ভাল।
চোখের সমস্যার ক্ষেত্রে সাধারণত দু’ধরনের রোগী দেখতে পাওয়া যায়। এক, ছাত্রছাত্রী বা অফিসকর্মীরা, যাঁরা সারাক্ষণ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে কাজ করছেন। দুই, যাঁরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিভি বা মোবাইল স্ক্রিন দেখে সময় কাটাচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছোটরা ল্যাপটপ বা ডেস্কটপের পরিবর্তে মোবাইলে অনলাইন ক্লাস করলে তাদের চোখে চাপ পড়ে বেশি। চোখের স্বাভাবিক আর্দ্রতা শুকিয়ে ড্রাই আইজের সম্ভাবনা বাড়ে।
কীভাবে নেবেন চোখের যত্ন?
প্রতি দিন শরীরের এক্সারসাইজের সঙ্গেই চোখের এক্সারসাইজও করা প্রয়োজন।
চোখের এক্সারসাইজ যেমন প্রয়োজন তেমনই দৃষ্টিশক্তি সজাগ রাখতে ডায়েটের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। ডায়েটে রাখুন প্রচুর ফল, শাক-সব্জি, তেলযুক্ত মাছ, আমন্ড ও ডিম।
চোখ পরিষ্কার রাখাও অত্যন্ত জরুরি। ঠান্ডা জলের ঝাপটা দিয়ে পরিষ্কার করে চোখ ধুয়ে নিন।
অন্ধকার ঘরে টিভি দেখা বা অপর্যাপ্ত আলোয় পড়াশোনা করার অভ্যাস ত্যাগ করাই ভাল।
অনেকেই চোখ কটকট করলে, কোনও সমস্যা হলে বা ঘুম পেলে হাত দিয়ে চোখ কচলান। এতে হাতের ময়লা চোখে গিয়ে ক্ষতি যেমন হয়, তেমনই চোখের চারপাশে রক্তজালিকা ছিঁড়ে যেতে পারে।