
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ঋতুস্রাবের ওই চারটে দিনে লজ্জা, সঙ্কোচ, আড়ষ্টতা নয়, সচেতনতাই জরুরি। ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতা মহিলাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় ভীষণ জরুরি। কিন্তু বহু মহিলাই এখনও মাসের এই বিশেষ দিনগুলির স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে যথেষ্ট সচেতন নন। প্রত্যন্ত এলাকা শুধু নয় খাস শহরের বুকেও অনেক মহিলাই ঋতুকালীন স্বাস্থ্যবিধি মানেন না। এখনও তাঁরা ঋতুস্রাবের সময় কাপড় ব্যবহার করেন। একই কাপড় বারবার কেচে ব্যবহার করার চলও রয়েছে। এ থেকে রোগ সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যায়। কিছু ক্ষেত্রে তার নজিরও রয়েছে। তাই সঙ্কোচ নয়, ঋতুকালীন সুরক্ষায় সার্বিক সচেতনতাই হোক অঙ্গীকার— শুক্রবার ২৮ মে ‘মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন ডে’-র থিম এটাই।
ইউনিসেফের সমীক্ষা বলছে, ভারতের প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে কম বয়সী মেয়েরা ঋতুস্রাব নিয়ে এখনও সঙ্কোচ ও আতঙ্কে থাকে। ২৩ শতাংশ কিশোরী ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার পরে লজ্জার কারণে স্কুলে যায় না। এমনকি স্কুল ছেড়ে দিতে দেখা গেছে অনেক কিশোরীকেই। ইউনিসেফের বিশেষজ্ঞ শরণা ঝাঙ্গিয়ানি বলেছেন, দেশে ১৫-২৪ বছর বয়সী মেয়েদের বেশিরভাগই ঋতুকালীন সময় স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করেন না। ঋতুস্রাবের সময় আদিবাসী গরিব মেয়ে, বৌয়েদের ভরসা এক টুকরো কাপড় অথবা ছাই। ঋতুমতী নারী মানেই সে অচ্ছুত। সচেতনতার প্রচারকে সেখানে বাঁকা চোখে দেখা হয়। সচেতনতার এত প্রচার সত্ত্বেও আসল ছবিটা এমনই। শরণা বলছেন, প্রত্যেক ঘরে ঘরে গিয়ে মেয়েদের সচেতনতার পাঠ দিতে হবে। মেনস্ট্রয়াল প্যাডের ব্যবহার বোঝাতে হবে। পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর না দিলে কী কী রোগ হতে পারে সে ব্যাপারে মেয়েদের সচেতন করতে হবে।
মেয়েরা কী কী বিষয়ে খেয়াল রাখবেন—
অনেকেই দাগ লেগে যাওয়ার ভয়ে একাধিক প্যাড ব্যবহার করেন। তাতে যৌনাঙ্গের চারপাশে র্যাশ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। একাধিক প্যাড ভিডে গিয়ে আর্দ্র হয়, তার থেকে জীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে। টক্সিক শক সিনড্রোমের ঝুঁকি বাড়ে।
দীর্ঘ সময় প্যাড পড়ে থাকা উচিত নয়। যে ব্র্যান্ডের স্যানিটারি ন্যাপকিনই ব্যবহার করুন না কেন, নির্দিষ্ট সময় অন্তরে তা বদলানো দরকার।
ঋতুমতীদের পরিচ্ছন্ন পরিবেশ প্রয়োজন। সুস্থ জীবনযাপনের জন্য সেটি গুরুত্বপূর্ণ। রাস্তাঘাটে পরিষ্কার শৌচালয় না পেয়ে মেয়েরা অনেক সময়ে বাধ্য হন দিনভর শৌচালয় না ব্যবহার করতে। সেটা শরীরের জন্য বিশেষ ভাবে খারাপ।
যেখানেই যান সঙ্গে যেন নিজস্ব স্যানিটারি ন্যাপকিন-ট্যাম্পুন বা মেন্সট্রুয়াল কাপ থাকে।
এখনও অনেক মেয়েরাই স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন না, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ঋতুকালীন সময় প্যাড, ট্যাম্পুন বা মেনস্ট্রুয়াল কাপ, যাতে স্বচ্ছন্দ সেটাই ব্যবহার করুন। কিন্তু কাপড় বা অন্য কিছু নয়।
নিয়মিত স্নান করতে হবে, পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। ঋতুচক্র ২২ দিনের কম ও ৩৫ দিনের বেশি ব্যবধানে হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহারের নিয়ম: কাপ ব্যবহার করছেন যাঁরা তাঁদের নিয়মিত স্টেরিলাইজ করতে হবে কাপ। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই এই কাপ ব্যবহার করা উচিত। স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে কাপ ব্যবহার করতে হলে মেনে চলতে হবে কয়েকটি বিধি। কী ধরনের কাপ ব্যবহার করবেন সেটা বিশেষজ্ঞেরা প্রধাণত শরীরের গঠন এবং নানা বিষয় দেখেই ঠিক করে দেন। প্রথমত দেখা হয় বয়স, তার পর কার্ভিক্সের গঠন (যৌনাঙ্গের নীচের অংশ যা জরায়ুর সঙ্গে যুক্ত), হেভি পিরিয়ডের সমস্যা আছে কি না, কাপের ক্যাপাসিটি এবং সন্তানধারণ করেছেন কিনা।
স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বয়স ৩০ বছরের নীচে হলে ছোট কাপ ব্যবহারেরই পরামর্শ দেওয়া হয়, ত্রিশের উপর বয়স হলে এবং সন্তানের জন্ম দিলে যৌনাঙ্গের পেশি অনেক শিথিল থাকে, তখন বড় কাপ ব্যবহারেরই পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
হাত ভালো করে ধুয়ে কাপটি লুব্রিকেট করে নিতে হবে (জল বা কোনও লুব্রিকেন্ট ব্যবহার করতে পারেন)। কাপের খোলা মুখটি উপরে রেখে নীচের অংশ শক্ত করে ধরে কার্ভিক্সের মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে হবে। ছাতার মতো খুলে গিয়ে কাপটি আটকে যাবে যৌনাঙ্গে। এ বার ঘুরিয়ে সেটির মুখ আটকাতে হবে, যাতে ঋতুস্রাবের রক্ত বাইরে না বেরিয়ে আসে। কোনও রকম সমস্যা হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। টানা ৮ ঘণ্টা ব্যবহার করা যাবে এই কাপ। প্রতি বার খুলে ফেলার পর গরম জলে ফুটিয়ে সেটিকে স্টেরিলাইজ করতে হবে। সঙ্গমের সময়ে এই কাপ ব্যবহার করা যাবে না।
গ্রামাঞ্চল নয়, শহর এলাকার বহু মহিলাও ঋতুকালীন স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে যথেষ্ট সচেতন নন। এর ফলে কেউ কেউ জটিল রোগে আক্রান্ত হন। ঋতুস্রাবের সময় অপরিচ্ছন্নতা থেকে যৌনাঙ্গে সংক্রমণ হতে পারে। পরে সন্তান জন্ম দেওয়ার সময়ও ক্ষতি হতে পারে মা-শিশু দু’জনেরই।