শেষ আপডেট: 28th February 2024 18:16
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বুকে ব্যথা আর নিঃশ্বাসের কষ্ট বহু ক্ষেত্রেই হৃদরোগের লক্ষণ। তেমনই হয়েছিল ৩৫ বছরের হেমন্ত দাসের। গুরুতর কোনও রোগের উপসর্গ ছিল না। শারীরিক সমস্যাও তেমন ছিল না। একদিন হঠাৎ করেই হাল্কা শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন। সেটাও এড়িয়ে যান। তারপর ধীরে ধীরে উপসর্গ প্রকাশ পেতে থাকে। একদিন সন্ধেয় প্রচণ্ড বুকে-পিঠে যন্ত্রণা শুরু হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর পরিবারের লোক মুকুন্দপুরের নারায়ণা হাসপাতাল-আরএন টেগোর হাসপাতালে নিয়ে যান হেমন্তবাবুকে। সেখানেই ধরা পড়ে বিরল রোগ।
নারায়ণা-আরএন টেগোরের সিনিয়র কার্ডিয়াক সার্জন এবং সিনিয়র কনসালট্যান্ট কার্ডিওলজিস্ট ডা. অতনু সাহার নেতৃত্বে তৈরি হয় মেডিক্যাল টিম। জটিল কার্ডিয়াক সার্জারিতে সুস্থ হয়ে ওঠেন হেমন্তবাবু। ডাক্তারবাবু বলছেন, মহাধমনীর বিরল রোগে ভুগছিলেন হেমন্তবাবু। এমন রোগ যা ধরা পড়ে না চট করে। আবার ধরা পড়লেও সঠিক চিকিৎসা না হওয়ায় রোগীর প্রাণ সংশয়ের ঝুঁকি বাড়ে। সেখানেই নজির গড়েছেন নারায়ণা-আরএন টেগোরের কার্ডিওলজিস্টরা।
ডা. অতনু বলছেন, অ্যাকিউট টাইপ-এ অর্টিক ডিসেকশন ধরা পড়েছিল রোগীর। হৃদযন্ত্রের পরীক্ষা ও সিটি অ্যাঞ্জিওগ্রাম করে রোগ ধরা পড়ে। মহাধমনীর একটি অতি বিরল রোগ এটি। মহাধমনী বা অ্যাওর্টা শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন যুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। তাই এই অসুখের দ্রুত চিকিৎসা না হলে রোগীর অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। তাই হয়েছিল হেমন্তবাবুর। মহাধমনীর ভেতরের অংশ ফেটে গিয়েছিল। ফলে হৃৎপিণ্ড থেকে রক্ত একটি অন্য চ্যানেলে প্রবাহিত হতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত শরীরের রক্ত সরবরাহ বাধা পেতে থাকে।
ডাক্তারবাবু বলছেন, মহাধমনী হল শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রক্তবাহী নালী যা হার্ট থেকে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে রক্ত সরবরাহ করে। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপের কারণে রোগীদের মহাধমনী ফেটে গিয়ে মারাত্মক অসুখের ঝুঁকি অনেক বাড়ে। মহাধমনী হল সব থেকে বড় রক্তবাহী ধমনী। হৃৎপিণ্ডের বাঁদিকের ভেন্ট্রিকল থেকে বেরিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেনযুক্ত পরিশুদ্ধ রক্ত সরবরাহ করাই এর কাজ। এর স্থিতিস্থাপকতা অন্য ধমনীর থেকে বেশি। এই ধমনীর কোনও অংশ দূর্বল হয়ে গেলে রক্তের চাপে তা ফেটে যেতে পারে। এই মহাধমনী যদি ফেটে যায় তাহলে রক্ত আর সুর্নিদিষ্ট পথে শরীরের অঙ্গগলিতে পৌঁছতে পারবে না। ফলে শরীরের একাধিক অঙ্গ বিকল হতে শুরু করবে।
মহাধমনীর মোট ৩টি স্তর আছে। বাইরের দিকের স্তর ফেটে গেলেই বিপদ বাড়ে। আর তিনটি স্তর একসঙ্গে ফেটে গেলে রোগীর প্রাণ সংশয়ের ঝুঁকি বেড়ে যায়। হেমন্তবাবুর মহাধমনীটির অভ্যন্তরভাব ছিঁড়ে গিয়ে আলাদা হয়ে গিয়েছিল। ডা. অতনু সাহা বলছেন, এমন অবস্থা প্রাণঘাতী। মহাধমনী এতটাই প্রসারিত হয়েছিল যে তার মধ্যে ফ্লুইড জমতে শুরু করেছিল। সেটি ভুল পথে পেটের নীচ অবধি পৌঁছে গিয়েছিল। সঠিক সময় হাসপাতালে না এলে এবং অপারেশন না করলে রোগীকে বাঁচানো মুশকিল হয়ে যেত। প্রায় ১২ ঘণ্টা ধরে জটিল অপারেশন করেন ডা. অতনু সাহা ও তাঁর টিম।
এই অপারেশনে ডা. অতনু সাহার সঙ্গে ছিলেন ডাঃ অভিনব সরকার, ডাঃ শুভম গুপ্ত, ডাঃ দিগ্বিজয় এআর, ডাঃ গোপাল সরকার এবং ডাঃ অনুজ দাস এবং অন্যান্য নার্স। সিনিয়র কনসালট্যান্ট কার্ডিওলজিস্ট ডা. অতনু বলছেন, “মহাধমনীর ফুটো বন্ধ করার জন্য তার প্রবেশপথের ছিদ্রগুলিতে প্যাচ করা হয়েছিল। তারপর একটি সিন্থেটিক ভালভ প্রতিস্থাপন করা হয়। মহাধমনীর যে অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সেখানটা মেরামত করতে হয়।”
নারায়ণা হাসপাতাল-আরএন টেগোর হাসপাতালের ফেসিলিটি ডিরেক্টর অভিজিৎ সিপি বলেছেন, "এই সফল অপারেশন অত্যাধুনিক স্বাস্থ্যসেবার প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের উদাহরণ দেয়। আমাদের বিশেষজ্ঞ দলের সহযোগিতা, উন্নত সুযোগ-সুবিধা এবং হেমন্ত দাসের অসাধারণ দক্ষতা রোগীর প্রাণ বাঁচিয়েছে।"
নারায়ণা হেলথ গ্রুপের সিওও আর ভেঙ্কটেশ বলেছেন, "এই ধরনের কঠিন অপারেশন এখানেই হয়। আমরা আমাদের রোগীদের বিশ্বমানের চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে থাকি। রোগীদের প্রাণ বাঁচানোই আমাদের উদ্দেশ্য।"