শেষ আপডেট: 9th June 2023 03:01
বাবা লোকনাথ শিবের অবতার, ভোগে আড়ম্বর নয়, তিনি ভক্তিতে সন্তুষ্ট, রইল তাঁর প্রিয় বাল্যভোগের রন্ধনপ্রণালী
সোমা লাহিড়ী
'রণে বনে জলে জঙ্গলে যখনই বিপদে পড়বে, আমাকে স্মরণ করবে। আমি রক্ষা করব।'
বলেছিলেন বাবা লোকনাথ। ভক্তরা আজও একথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন। বিপদে পড়লে বাবা লোকনাথের কাছেই মুক্তির উপায় খোঁজেন।লোকনাথ ব্রহ্মচারী অন্য সাধকদের থেকে একেবারে আলাদা ছিলেন। সরল সাদাসিধে জীবনযাপন করতেন।তিনি সব ভক্তকে সমান চোখে দেখতেন। স্নেহ ভালবাসায় ভক্তদের বুকে টেনে নিতেন বাবা। তাদের জীবনের শিক্ষায় দীক্ষিত করতেন।
• কী সেই শিক্ষা ?
লোকনাথ বাবা সবসময় বলতেন , ' দিনের শেষে যখন ঘুমোতে যাবে তখন ভেবে দেখবে সারাদিন কী কী কাজ করেছ। কোনটা ঠিক কোনটা ভুল নিজেই নিজের বিচারবুদ্ধিতে বুঝে নিতে পারবে। রোজ এটা করা খুব জরুরি।' সেলফ আসেসমেন্টের কথা এমন সহজ ভাষায় সরল করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন লোকনাথ ব্রহ্মচারী।
বাবা ছিলেন ত্রিকালদর্শী। তাই এ যুগের সমস্যাও ছিল তাঁর নখদর্পণে। অর্থই যে সব অনর্থের মূল তা বুঝিয়েছেন বারংবার। জগতের সব কলহ কলুষ ,হানাহানির কারণ অর্থ ও প্রতিপত্তির লালসা। মুক্তির পথ দেখিয়ে বাবা বলেছেন ,' বাক্যবাণ,বন্ধু বিচ্ছেদ বাণ ও বিত্ত বিচ্ছেদ বাণ-এই তিন বাণকে সহ্য করতে পারলে মৃত্যুকেও উপেক্ষা করা যায় '।
• 'আমার চরণ নয়, আচরণ ধর তোরা '
লোকনাথ বাবা নিজে অত্যন্ত সাদামাঠা জীবন যাপন করতেন। ভক্তদেরও তাঁকে অনুসরণ করতে বলতেন। ভোগের ক্ষেত্রেও অতি অল্পে সন্তুষ্ট তিনি। পোলাও পনির নয়, ভাত- ডাল -চচ্চড়ি বা খিচুড়ি'- লাবড়া -চাটনি,বা সবরকম সব্জি সেদ্ধ দিয়ে ভাত (বাল্যভোগ) তাঁর প্রিয় খাবার। রোজের পুজোয় অল্প মিছরিতেই তুষ্ট বাবা লোকনাথ। ফলের মধ্যে কালোজাম আর তালশাঁস খেতে খুব ভালবাসতেনবাবা। আর ভালবাসতেন অমৃতি জিলিপি। সাদা বাতাসা সাদা সন্দেশও তাঁর প্রিয়। কাজেই লোকনাথ বাবাকে তুষ্ট করতে কোনও আড়ম্বর অনুষ্ঠানের প্রয়োজন নেই।
• 'জয় বাবা লোকনাথ 'মন্ত্রই জোগায় শক্তি
বাবা লোকনাথ শিবের অবতার। তাই শিবপুজো করে তারপর তাঁর পুজো করতে হয়। মহাদেব যেমন ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে সব ভক্তকে অপার স্নেহে ভরিয়ে দেন,লোকনাথ বাবাও ঠিক সেইরকমই সন্তানের দুখ্ক সহ্য করতে পারেননা। তাদের বিপদ থেকে উদ্ধার করার জন্য ব্যাকুল হন। কারও জন্মকুণ্ডলীতে যদি রোগভোগ যোগ বা দারিদ্র যোগ থাকে তাহলে প্রতি সোমবার বাবা লোকনাথের পুজো করলে রোগমুক্তি হয়,আর্থিক সঙ্গতি ফেরে -এমনই বিশ্বাস ভক্ত্কুলের।
• লোকনাথ বাবাকে জপের মন্ত্র
প্রতি সোমবার তো বটেই বিপদে পড়লেই যে মন্ত্রটি জপ করবেন সেটি মনে করিয়ে দিই আপনাদের।
জয় বাবা লোকনাথ
জয় ব্রমহ লোকনাথ
জয় শিব লোকনাথ
জয় গুরু লোকনাথ ।।
• বাবা লোকনাথের প্রিয় পদ বাল্যভোগ কীভাবে রান্না করবেন?
বাল্যভোগ
(১০ জনের মতো)
উপকরণ
গোবিন্দভোগ চাল ১ কিলো
ঘি ২৫০ গ্রাম
আলু ৪টে
পটল ৮টা
ঝিঙে ৪টে
কুমড়ো ২০০ গ্রাম
রাঙালু ৪ টে
বরবটি ১০০ গ্রাম
কাঁচালঙ্কা ১০ টা
তেজপাতা ৪-৫ টা
ছোট এলাচ ৪-৫ টা
লবণ ,চিনি পরিমাণ মতো

পদ্ধতি
• সব সব্জি ছোট ছোট ডুমো করে কেটে নিন।
• চাল খুব ভাল করে ধুয়ে ঘন্টাখানেক ভিজিয়ে রাখুন।
• কেটে রাখা সব্জিগুলো হালকা ভাপিয়ে রাখুন।
• ডেচকি বা হাঁড়িতে পরিমাণ মতো ঘি দিন। ঘি গরম হলে তেজপাতা আর জিরে ফোড়ন দিন। চাল দিয়ে দিন। নাড়তে থাকুন।
• ভাপিয়ে রাখা সব্জিগুলো দিন। পরিমাণমতো নুন চিনি দিন। জল দিয়ে দিন।
• ছোট এলাচ দিন। ডেচকিতে ঢাকা দিয়ে রাখুন।
• মাঝেমাঝে ঢাকা খুলে নেড়ে দিতে হবে,যাতে নীচটা ধরে না যায়।
• সব সেদ্ধ হয়ে গেলে অল্প ঘি ছড়িয়ে ঢাকা দিয়ে রাখুন।
বাবা লোকনাথের প্রিয় বাল্যভোগ এইভাবেই তৈরি করে ফেলতে পারেন।বাড়িতে পুজো হলে সকলে আনন্দ মনে গ্রহণ করবেন এই বাল্যভোগ। সব বাধাবিপত্তি রোগভোগ কেটে যবে লোকনাথ বাবার আশীর্বাদে।
আরও পড়ুন: ভুল ফুলে পুজো করছেন না তো? কোন দেবতা কী ফুলে তুষ্ট? জেনে নিন না জানা তথ্য