শেষ আপডেট: 17th July 2020 08:05
আদরের শুশুনিয়া
রত্না ভট্টাচার্য্য শক্তিপদ ভট্টাচার্য্য
এখন ঘরের বাইরে বেরোতেও মানা। বেড়াতে যাওয়ার চ্যাপ্টার আপাতত ক্লোজ। লকডাউন চলছে। বাসা-বন্দি বাঙালির প্রাণপাখি ছটফট করছে। শুয়ে, বসে, গার্হস্থ্যকর্ম সেরেও সময় যেন কাটছে না। তবুও ‘পায়ে পায়ে বাংলা’ যথারীতি প্রকাশিত হল। আপাতত ভ্রমণকাহিনি পাঠেই হোক আপামর বাঙালির মানসভ্রমণ।
বাঁকুড়া জেলার ছাতনা থানার অন্তর্গত ছোট্ট, সুন্দর, সবুজ বনাঞ্চলে মোড়া শুশুনিয়া পাহাড়। বাঁকুড়া জেলার পাহাড়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পাহাড় এটি। শুশুনিয়া আজ আর অপরিচিত নাম নয়, শৈলারোহণ শিক্ষার অন্যতম জনপ্রিয় পীঠস্থান। এখানে সারা শীতকাল জুড়ে চলে শৈলারোহণের প্রশিক্ষণ। কেবল শৈলারোহণ কেন্দ্রই নয়, এটি একটি অন্যতম উইক-এন্ড পর্যটন কেন্দ্রও বটে। প্রচুর পিকনিক পার্টি কলকাতা ও বাঁকুড়ার আশপাশের অঞ্চল থেকে পিকনিক করতে ছুটে আসে প্রতি বছর।




ছাতনা
বাঁকুড়া স্টেশনের পরবর্তী স্টেশন ছাতনা। বাঁকুড়া-পুরুলিয়ার পথে পড়ে ইতিহাসপ্রসিদ্ধ এই গ্রাম। গ্রামের খ্যাতি প্রধানত প্রাচীন বাঙালি কবি বড়ু চণ্ডীদাসের জন্য। কথিত আছে, একদা ছাতনা ছিল সামন্তভূমের রাজধানী। ছাতনার নামকরণ নিয়ে অনেক মত প্রচলিত আছে। যেমন, শ্রীক্ষেত্র তীর্থযাত্রী জনৈক রাজপুত ছাতনায় রাজধানী স্থাপন করে রাজকার্য পরিচালনা করতেন। ক্ষত্রিয় অর্থাৎ ছত্রিদের নগর ছিল বলে নাম হয় ছত্রিনগর। পরে সেটাই অপ্রভংশ হয়ে ছাতনা হয়েছে বলে অনেকে অনুমান করেন। আবার মতান্তরে, এই অঞ্চলে অতীতে ছাতিম গাছের বন ছিল বলে গ্রামের নাম ছাতনা হয়েছে। এখানে ছিল বিশালাক্ষী বা বাসুলী দেবীর মন্দির। রাজা হাম্বীরের স্বপ্নাদিষ্ট এই বাসুলী দেবীই ছিলেন বড়ু চণ্ডীদাসের আরাধ্য দেবী। তিনি ছিলেন এই মন্দিরের পুরোহিত। বর্তমানে যে মন্দিরটি দেখতে পাওয়া যায় সেটি আদি মন্দির নয়। আদি মন্দিরের ভিতের ওপর গড়ে উঠেছে বর্তমানের নতুন মন্দির যেটি আকারে ছোট, উচ্চতা প্রায় ২৫ ফুট। এই মন্দিরের প্রধান উৎসব বাসুলী দেবীর বার্ষিক পূজা ও গাজন উৎসব। বার্ষিক পূজা হয় প্রতি বছর চৈত্র-শুক্লা সপ্তমী তিথিতে। মন্দিরের পেছনেই রয়েছে রাজবাড়ি সংলগ্ন ধ্বংসস্তূপ। চণ্ডীদাসের আসল পরিচয় নিয়ে যতই মতবিরোধ থাক, ছাতনা কিন্তু চণ্ডীদাসকে ভোলেনি। মোড়ের মাথায় চণ্ডীদাসের একটি মর্মরমূর্তি রয়েছে যার নীচে লেখা সেই শাশ্বত বাণী-– ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তার উপরে নাই’। বাসুলী দেবীর বার্ষিক পূজার সময় চণ্ডীদাসের জন্মোৎসবও পালিত হয় মহাসমারোহে। এই মূর্তি থেকে কিছুটা গেলেই বাসুলী দেবীর অন্য একটি মন্দির রয়েছে। ছাতনায় আর একটি দারুণ দ্রষ্টব্য জিনিস রয়েছে। তা হল ছাতনার বীরস্তম্ভ। বাঁকুড়া-ছাতনা-শালতোড়া হাইরোডের ধারে নতুন বাসুলী মন্দিরের কাছে বড়জোর ঘটি ডোবে এমন এক পুকুরের পশ্চিম পাড়ের মাটিতে বসানো আছে তিনটে বুকসমান উঁচু প্রাচীন প্রস্তরখণ্ড। প্রস্তরখণ্ডের গায়ে যুদ্ধরত মানব মূর্তি। পণ্ডিতদের মতে, প্রাচীন ‘মেগালিথিক’ বা প্রস্তর স্মৃতিস্তম্ভ। ইতিহাস, সাহিত্য, পুরাকীর্তি, গ্রামীণ সৌন্দর্য সব কিছু নিয়ে ছাতনা সত্যি সুন্দর এবং বৈচিত্র্যময়। পর্যটকদের হতাশ হতে হবে না ছাতনা ঘুরতে গেলে। শুশুনিয়ায় রাত্রিবাসের ঠিকানা-– আরণ্যক গেস্ট হাউস, চলভাষ : ৯৪৩৪৬৫১১৮৮, ৯৬৩৫২৩৩০৪০।কাছেপিঠে আরও নানা জায়গায় বেরিয়ে পড়তে ক্লিক করুন নীচের লাইনে।