শেষ আপডেট: 18th October 2021 12:05
কোচিকে ‘ডিমেনশিয়া-ফ্রেন্ডলি’ ঘোষণা করেছে সরকার, কলকাতায় খামতি কোথায়
চৈতালী চক্রবর্তী
হাশিখুশি, মজাদার মানুষ হিসেবে কৌশিকবাবুকে চিনতেন পাড়ার লোকজন। আপদে বিপদে তাঁকে একবার ডাক দিলেই ছুটে যেতেন। ইদানীং মানুষটার মধ্যে অদ্ভুত এক পরিবর্তন দেখা গেছে। কিছুই মনে রাখতে পারেন না (Dementia)। বয়স ৭৫ পেরিয়েছে। বাড়ির লোক মজা করে বলতেন, ভুলো মন হয়েছে। কিন্তু ধীরে ধীরে দেখা গেল, চেনা মুখগুলোকেই আর চিনে উঠতে পারছেন না তিনি। নিজের স্ত্রী, সন্তানদেরও অপরিচিত ভাবলেন একদিন, ভুলে গেলেন নিজের নামটাও। নিজের পরিচয়টাও এখন তাঁর কাছে ধোঁয়াশার মতো। এই ভুলো-রোগ কিন্তু হাসিমজার ব্যাপার নয়। ভীষণ ভয়ঙ্কর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর এক অসুখ, যা নিজের অস্তিত্বকেও ভুলিয়ে দিতে পারে যে কোনও মুহূর্তে। ডাক্তারি পরিভাষায় এই রোগকে বলা হয় ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিনাশ। অ্যালঝাইমার্সও ডিমেনশিয়ারই একটা ভাগ। স্মৃতির পাতা খালি হতে থাকে ধীরে ধীরে। ডিমেনশিয়া নিয়ে সচেতনতার প্রচার হচ্ছে চারদিকেই, তবে কেরল সেখানে নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। ডিমেনশিয়া রোগীদের চিহ্নিত করা, তাঁদের দেখাশোনা, সঠিক চিকিৎসাপদ্ধতি ইত্যাদি নিয়ে সুপরিকল্পিত গাইডলাইন তৈরি করেছে কেরল সরকার। এই প্রকল্পের নাম ‘উদ্বোধ’। কোচিতে এই গাইডলাইন মেনে ডিমেনশিয়া রোগীদের ট্রিটমেন্টও শুরু হয়ে গেছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন এখনই কোচিকে ‘ডিমেনশিয়া-ফ্রেন্ডলি’ জেলা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। [caption id="attachment_2381657" align="alignleft" width="258"]
বয়সকালে ভুলে যাওয়া আর ডিমেনশিয়া গুলিয়ে ফেলবেন না
ডাক্তারবাবু বলছেন, ডিমেনশিয়া রোগীকে আগে চিহ্নিত করা দরকার। রোগের শণাক্তকরণ সঠিকভাবে হলে তবেই তার কাউন্সেলিং বা চিকিৎসা শুরু করা যায়। বয়সকালে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা আর ডিমেনশিয়া এক নয়। অনেকেই গুলিয়ে ফেলেন। তাই স্মৃতিনাশ হচ্ছে সেটা ধরতেই অনেক সময় পেরিয়ে যায়। রোগ বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যায়।
কোচিতে ডিমেনশিয়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রকল্প হয়েছে, কলকাতায় খামতি কোথায়?
কোচিতে ‘উদ্বোধ’ প্রকল্প সরকারি উদ্যোগে শুরু হয়েছে। কলকাতায় তেমন কোনও প্রকল্প বা সরকারি পরিকল্পনা এখনও নেই। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নিজেদের উদ্যোগে ডিমেনশিয়া রোগীদের নিয়ে কাজ করে। অর্থাৎ কোনও সুপরিকল্পিত রূপরেখা নেই, বিক্ষিপ্তভাবে কাজ হচ্ছে। সঠিক গাইডলাইন না থাকার কারণে রোগীদের চিহ্নিত করাও সম্ভব হয় না অনেক সময়। ডাক্তারবাবু বলছেন, বেশিরভাগ ডিমেনশিয়ার রোগীর জানেনই না তাঁরা রোগে ভুগছেন, এমনকি তাঁদের পরিবারের লোকজনও এ ব্যাপারে অবগত নন। তাই রোগের চিকিৎসাও হচ্ছে না।
কলকাতাকে ‘ডিমেনশিয়া-ফ্রেন্ডলি’ হতে গেলে কী কী পরিকল্পনা এখনই করা দরকার ডাক্তারবাবু বলছেন, কোচির মতো এ শহরকেও ডিমেনশিয়া-জয় করতে হলে একটা সার্বিক পরিকাঠামো দরকার। কয়েকটি বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করতে হবে এবং অবশ্যই সরকারের সক্রিয় সহযোগিতা দরকার। কোচিতে মূলত সচেতনতামূলক কাজই শুরু হয়েছে, কলকাতাতেও তা শুরু হওয়া দরকার। কী কী উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে—


