শেষ আপডেট: 8th June 2023 05:41
ভুল ফুলে পুজো করছেন না তো? কোন দেবতা কী ফুলে তুষ্ট? জেনে নিন না জানা তথ্য
সোমা লাহিড়ী
'মায়ের পায়ের জবা হয়ে ওঠ না ফুটে মন….'
মা কালী জবাফুলে তুষ্ট হন এ তো আমরা সবাই জানি। কিন্তু আর কী কী ফুল তিনি ভালবাসেন? বা উল্টোদিক থেকে দেখলে জবাফুল কি কেবল মা কালীরই পছন্দ? আর কোনও ঠাকুর কি জবায় তুষ্ট হন না? দেবদেবীর পছন্দের ফুল নিয়ে এমন নানা প্রশ্ন আমাদের মনে আসেই। সঠিক উত্তর খুঁজে পেতে দ্বারস্থ হয়েছিলাম বিশিষ্ট জ্যোতিষী ও সাধক শিবশঙ্কর ভারতীর। তাঁর সঙ্গে আলোচনায় উঠে এল পুজোর ফুল নিয়ে না জানা নানা তথ্য।
■ ভুল ফুলে পুজো করলে কী হয়?
• কোনও কোনও দেবতা খুব লিবারাল, সহজে রেগেটেগে যান না। ভক্ত পছন্দের ফুল না দিলেও তেমন গায়ে মাখেন না। যেমন শিবঠাকুর। তাঁর পছন্দের ফুল আকন্দ, ধুতরো হলেও কেউ যদি বেল, টগর বা গাঁদাফুলে পুজো করেন তাহলেও বাবা খুশি মনে পুজো গ্রহণ করেন। না জেনেবুঝে যদি কেউ লাল রঙের কোনও ফুল উৎসর্গ করেন তাতেও বাবা কুপিত হন না। তবে রক্তজবা মহাদেবকে না দেওয়াই ভাল।

• মা লক্ষ্মী কিন্তু খুব অল্পে অসন্তুষ্ট হন। মায়ের প্রিয় ফুল গোলাপি পদ্ম। পুজোর সময় অন্যান্য ফুল দিলেও অন্তত একটা গোলাপি পদ্ম না পেলে মায়ের রাগ হয়। প্রতি বৃহস্পতিবার মা লক্ষ্মীর ঘটে আম্রপল্লব দিয়ে পুজো করলে মা ভক্তের মনের ইচ্ছে পূর্ণ করেন। সংসারে সুখ সমৃদ্ধি আসে।

• নারায়ণ পুজোয় কখনও কোনও ফুলের কুঁড়ি দেবেন না। এতে দেবতা পূজকের ওপর রুষ্ট হন। বিষ্ণু বা নারায়ণের প্রিয় ফুল রক্তকরবী, চাঁপা, পদ্ম, মল্লিকা, বেল, জুঁই আর তুলসীপাতা। ফুল না থাকলে শুধু তুলসীপাতা দিলেই তুষ্ট নারায়ণ।

■ শনিদেব মোটেও পছন্দ করেন না অপরাজিতা
দেবতাদের পছন্দের ফুল নিয়ে বেশ কিছু ভুল ধারণা আছে আমাদের। যেমন ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি বড়ঠাকুর বা শনিদেবের প্রিয় ফুল নীল অপরাজিতা। শনিদেবের গায়ের রং নীল বলেই কি এমন ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে? আসলে শনিদেব কোনও ঝলমলে রং পছন্দ করেন না। তাঁর প্রিয় রং সাদা। সুগন্ধি সাদা ফুলে ভারী সন্তুষ্ট হন বড়ঠাকুর।
দেবতাদের মধ্যে সবথেকে রাগী বলে শনিদেবকে সকলে ভয় পান। তাই তাঁর অপছন্দের ফুলে পুজো করার কথা ভাবতে পারেন না। অপরাজিতা ছাড়াও শনিদেবের একেবারে অপছন্দের তালিকায় রয়েছে রক্তজবা, বেলপাতা ও গন্ধহীন টগর ফুল।

■ সিদ্ধিদাতা গণেশের পছন্দ রক্তজবা
সাদারঙের ফুল দু'চক্ষে দেখতে পারেন না সিদ্ধিদাতা গণেশ। মুম্বইয়ে সিদ্ধিবিনায়ক মন্দিরে গিয়ে দেখেছি লাল গোলাপ খুব সুন্দর করে রিবন দিয়ে বেঁধে বোকে তৈরি করে বিক্রি হয় গণপতি বাপ্পার জন্য। একটা গোলাপ দিয়েও ছোট্ট বোকে পাওয়া যায়। লাল হলুদ ফুলের মালাও অনেকে কেনেন সিদ্ধিদাতার জন্য। মহারাষ্ট্রে জবা তেমন চাষ হয় না বলেই অন্য ধরনের লাল ফুলের আয়োজন। তবে গণেশের সব থেকে প্রিয় ফুল রক্তজবা। গোলাপি পদ্ম, হলুদ গাঁদাও তাঁর ভারী ভাল লাগে। কিন্তু বেল, জুঁই, রজনীগন্ধা দেখলেই তাঁর ভ্রূ কুঁচকে যায়। তাই গণেশবন্দনায় সাদাফুলে হাত না বাড়ানোই ভাল।

■ একমাত্র জবাই কি মা কালীর প্রিয়?
যে কোনও কালীমন্দিরে গেলে দেখা যায় রক্তজবার বন্যা। একশো আট জবার মালা অনেকেই অর্পণ করেন মা'কে। কিন্তু আর কোনও ফুলে কি মায়ের রুচি নেই? জানা গেল, গোলাপি পদ্ম মা খুব ভালবাসেন। গোলাপি পদ্ম ও রক্তজবায় মায়ের আরাধনা করলে ভক্তকে মা সবরকম সঙ্কট থেকে রক্ষা করেন। সংসারে আর্থিক উন্নতি হয়, রোগমুক্তি হয় এবং মনে আনন্দ ফিরে আসে।

দেবী কালিকা নানান রূপে পূজিত হন। দেবী চন্ডীর পছন্দের ফুল রক্তজবা, রক্ত করবী ও অপরাজিতা। আবার মা অম্বিকার পছন্দ সর্ষে ফুল আর দূর্বা। বগলা দেবী ভালবাসেন করবী ও যে কোনও হলুদ ফুল। দেবী ত্রিপুরাসুন্দরী কদম ও চাঁপা ফুল পেলে খুশি হন। কামাখ্যা মায়ের ভাল লাগে রক্তজবা ও গোলাপি পদ্ম। মা দুর্গার প্রিয় ফুল জবা, পদ্ম, অপরাজিতা ও গাঁদা। পছন্দের ফুলে দেবীর পুজো করলে ভক্ত সৌভাগ্যলাভ করেন, এমনই বিশ্বাস আমাদের।
■ মা সরস্বতীর পছন্দ একটু অন্যরকম
'শ্বেতপদ্মাসনা দেবী শ্বেতচন্দনচর্চিতা…'
মা সরস্বতী জ্ঞানের দেবী, বিদ্যার দেবী, শিল্প সংস্কৃতির ধারক। তাঁর পছন্দটা যে একটু সফিস্টিকেটেড হবে তা তো বলাই বাহুল্য। তিনি পলাশপ্রিয়া। পলাশফুল ছাড়া সরস্বতী পুজো হয় না। এছাড়া শ্বেতপদ্ম, হলুদ গাঁদা ও সব সুগন্ধি সাদা ফুল তিনি ভালবাসেন। আর পছন্দের ফুল পেলে ভক্তকে বিদ্যাবুদ্ধিতে ভরিয়ে দেন।

■ পুজোর ফুল নিয়ে ভুল ধারণা
• স্নান না করে পুজোর ফুল তুলতে নেই- এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। স্নানের আগে গাছ থেকে ফুল তুলতে হবে। স্নান করে সেই ফুলে পুজো করতে হবে। স্নানের পরে তোলা ফুল দেবতা গ্রহণ করেন না।
• বাজার থেকে ফুল এনে ধুয়ে ঠাকুরকে অর্পণ করতে হয়- এটাও ভুল ধারণা। বাতাসেই ফুল শুদ্ধ হয়ে যায়। জলে ধোয়া ফুল ঠাকুরকে দেওয়া যায় না।
• ফুলে আমিষ ছোঁয়া লাগলে বা পায়ে ঠেকলে তা দিয়ে আর পুজো হয় না।
•গন্ধ শোঁকা ফুল, পোকায় খাওয়া ফুল, পদপিষ্ট হওয়া ফুল, মাটিতে পড়া ফুল দিয়ে কোনও দেবতার পুজো হয় না।
• পদ্ম ও চাঁপা ছাড়া আর কোনও ফুলের কুঁড়ি দিয়ে ঠাকুর পুজো হয় না।
• আধফোটা ফুল বা আধপাকা ফল দেবতা গ্রহণ করেন না।
• তুলসীপাতা, বেলপাতা ও দূর্বা কখনও বাসি হয় না। এমনকী একবার পুজো করার পরও তা দিয়ে আবার পুজো করা যায়।
এইসব তথ্য মনে রেখে ঠাকুরকে পুষ্পার্ঘ নিবেদন করলে সংসারে শান্তি বিরাজ করে।