শেষ আপডেট: 11th May 2023 13:16
দ্য ওয়াল ব্যুরো: উচ্চশিক্ষায় এতদিন 'কলা বিভাগ' বলতে সমাজবিজ্ঞান, হিউম্যানিটিজ বা সাহিত্যের চর্চাকেই মোটের ওপর বোঝানো হত। কিন্তু এবার কলা বিভাগের পাশাপাশি সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকবেন 'কলাগুরু'-রা (Kala Guru)। যাদের মাধ্যমে শিল্পকলাকেও এবার প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার সঙ্গে যোগ করতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্রের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা 'ইউজিসি'। এক নতুন নির্দেশিকায় ইউজিসির সচিব মণীশ জোশী জানিয়েছেন, এবারে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানীয়স্তরের নানা শিল্পীকে 'আর্টিস্ট-ইন-রেসিডেন্স' পদমর্যাদা দিয়ে রাখা হবে। এই নতুন পদেরই নাম দেওয়া হয়েছে 'কলাগুরু'।
নির্দেশিকায় বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে, মানবসভ্যতায় শিল্প ও শিল্পীদের অবদান সুপ্রাচীন। প্রতি বছর শিল্পীরা নানাভাবে নানা শিল্পের দ্বারা মানুষের সৃজনক্ষমতা ও সৌন্দর্যবোধকে পরিপুষ্ট করেন। এই আধুনিক যুগেও বহু বাড়িতে নানা 'ট্র্যাডিশনাল' শিল্পের চর্চা করা হয়। কিন্তু শিক্ষাব্যবস্থা যত উন্নত হয়েছে, তত তা মূল বিষয়ের চারপাশে সংকুচিত হয়েছে, তার সঙ্গে শিল্পচর্চার সম্পর্ক কমে এসেছে, শিল্পশিক্ষা কেবলমাত্র 'আর্ট কলেজ' বা শিল্পের জন্য নির্দিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই আটকে আছে। ফলে আজকের দিনে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিল্পীদের নিয়ে আসা এবং ছাত্রছাত্রীদের হাতেকলমে শিক্ষার পাশাপাশি শিল্পচর্চার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা লাভ করাটা প্রায় সময়ের দাবি।
নরেন্দ্র মোদী সরকারের নতুন শিক্ষানীতি ঘোষণার পর থেকেই আধুনিক পশ্চিমী ধাঁচে শিক্ষার সঙ্গে দেশীয় শিক্ষার পুরনো ঐতিহ্যকে যুক্ত করার কথা বারবার তুলেছেন শাসক দল বিজেপি ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ ঘনিষ্ঠ নেতানেত্রীরা। এই নির্দেশিকাতেও বলা হয়েছে, 'বর্তমান পড়ানো ও পড়াশোনার ধরনধারণ বিশ্লেষণ করে মনে হয়েছে, গোটা শিক্ষাব্যবস্থাটাই এক যান্ত্রিক পথে চলছে, যেখানে আবেগ, অনুভূতি, পাঠ্যক্রমের বাইরের নানা সৃজনমূলক কর্মসূচি কোনও কিছুরই জায়গা নেই। দেশজুড়ে বিভিন্ন শাস্ত্রীয় ও লোকসঙ্গীতের বাদ্যযন্ত্র, গানের ধারা, দৃশ্যকলা, শ্রব্যকলা ইত্যাদি অনেক কিছুই রয়েছে যা থেকে নতুন প্রজন্ম অনেক কিছু শিখতে ও জানতে পারবে। '
সিলেবাসের কাটছাঁট নতুন নয়, পাঠ্যপুস্তক বরাবরই ‘সরকারি যুদ্ধক্ষেত্র’! বলছেন ইতিহাসবিদ
অতএব এই সমৃদ্ধ ভাবধারার সঙ্গে তাল রেখেই বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সক্রিয়ভাবে যুক্ত করা হবে শিল্পীকলার সঙ্গে জড়িত বিশিষ্টজনদের, যারা প্রথাগত ও পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি শিল্পের সঙ্গেও ছাত্রছাত্রীদের পরিচয় করিয়ে দেবেন। যাতে করে নতুন স্বাদ পাওয়ার পাশাপাশি পড়াশোনার পাশে কিঞ্চিৎ আনন্দও উপভোগ করবে পড়ুয়ারা।
কীরকম শিল্পকে আনা হবে এর আওতায়? তারও একটা তালিকা দিয়েছে ইউজিসি। এই তালিকায় যদিও হরেক বৈচিত্র্যের মিলন ঘটেছে। রীতিমত রক-সঙ্গীত, জ্যাজ, অর্কেস্ট্রাকেও এর আওতায় ফেলা হয়েছে। যেমনঃ
১। সঙ্গীত—শাস্ত্রীয় ও লোকায়তঃ হিন্দুস্তানি, কর্নাটকী, ধ্রুপদ, সুফিয়ানা, গুরবাণী, ঠুংরি, কাওয়ালির পাশাপাশি রাখা হয়েছে রবীন্দ্রসঙ্গীত, রক বা জ্যাজ সঙ্গীত, অর্কেস্ট্রা।
২। নৃত্যঃ কথক, ভরতনাট্যম, কথাকলি, কুচিপুড়ি ইত্যাদি সাতটি ধ্রুপদী নাচের সঙ্গে রাখা হয়েছে যক্ষগণ, ভাংরা, গরবা, বিহু, ঝুমর, কাইকোট্টিকালি ইত্যাদি নানা লোকনৃত্য।
৩। লোকনাটিকা, নৌটঙ্কি
৩। যোগ
৪। বালুকাশিল্প
৫। মেহেন্দি লাগানো
৬। ম্যাজিকের শো
৭। কমেডি
এর পাশাপাশিও আরও নানা ধারাকে যোগ করা যায়, যদি সেরকম কেউ প্রস্তাব করেন। আগ্রহী শিল্পীদের তিনটি ভাগে ভাগ করা যাবে, গুরু, পরম গুরু এবং পরমেষ্ঠী গুরু, নির্ভর করছে তাঁদের অভিজ্ঞতার ওপর। 'গুরু' পদবাচ্য হতে গেলে লাগবে কমপক্ষে ৫ বছরের অভিজ্ঞতা, পরম গুরুর জন্য দরকার ১০ বছর এবং পরমেষ্ঠী গুরুর জন্য ২০ বছরের বেশি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কাউকে ভাবা হবে। তাঁদের ভ্রমণ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুযোগসুবিধাও যথাযোগ্য বিধি মেনেই প্রদান করা হবে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’, একুশ শতকের নতুন আকর্ষণ