শেষ আপডেট: 6th January 2021 04:51
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সার্বিকভাবে শরীর সুস্থ রাখতে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখা ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, ভুল ডায়েট, শরীরের মুভমেন্ট না থাকলে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে পারে। যা থেকে কখনও স্ট্রোক, কখনও আবার হার্ট অ্যাটাকও হয়। সেই কারণেই সব বয়সী মানুষদেরই খাওয়া-দাওয়ার উপর বিশেষ নজর দিতে বলছেন ডাক্তাররা। শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়লে ওবেসিটি হয়। অতিরিক্ত তৈলাক্ত, মশলাদার খাবার খেলে কোলেস্টেরলের ভারসাম্য নষ্ট হয়। একদিকে যেমন ওজন বাড়ে, তেমনই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয় কোলেস্টেরল।
কোলেস্টেরল কী?
কোলেস্টেরল তৈলাক্ত, চর্বিজাতীয় এক ধরনের পদার্থ। ট্রাইগ্লিসারয়েড, লো ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন (এলডিএল), হাই ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন (এইচডিএল) এবং টোটাল কোলেস্টেরলের মধ্যে শুধুমাত্র এইচডিএল শরীরের জন্য উপকারী। বাকি তিনটিই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। কোলেস্টেরল চর্বিজাতীয় পদার্থ বলেই সহজে মিশে যেতে পারে না। রক্তনালিতে জমে স্বাভাবিক রক্ত চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় কোলেস্টেরল।
হাই কোলেস্টেরল হলে কী কী প্রভাব পড়ে শরীরে -
কোলেস্টেরল হাই থাকা মানে, সেগুলি হার্টের রক্তনালীর দেওয়ালগুলিতে অশুদ্ধি বা প্ল্যাক জমাতে থাকে। এর ফলে নালী সরু হতে থাকে। নালী সরু হওয়া মানে, হার্টে রক্ত-চলাচল বাধা পায়। যার ফল অবশ্যম্ভাবী হৃদরোগ।
বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে, ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সিদের হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে একটা বড় অংশের পারিবারিক হাইপার কোলেস্টেরলের ইতিহাস আছে। তাঁরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই নিয়ে সচেতন নন। ফলে না হয় পরীক্ষা, না ধরা পড়ে সমস্যা। একেবারে সরাসরি হার্ট অ্যাটাকের মুখে পড়ছেন তাঁরা। এটার প্রবণতা দিনকেদিন বাড়ছে। পরিসংখ্যান বলছে, সারা বিশ্বের নিরিখে ভারতে অনেক বেশি সংখ্যক অল্পবয়সি মানুষ হার্টের এই সমস্যায় পড়ছেন। যার বড় কারণ পারিবারিক হাইপার কোলেস্টেরল।
শরীরের জন্য কোলেস্টেরল কতটা প্রয়োজনীয় -
কোলেস্টেরলকে হার্টের অসুখের জন্য একটা বড় কারণ বলে চিহ্নিত করা হলেও, একথা মনে রাখতে হবে, কোলেস্টেরল শরীরের অতি প্রয়োজনীয় একটি লিপিড কম্পাউন্ড। এটি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে ডেভেলপ করে, শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও এর ভূমিকা আছে। কিন্তু সব কোলেস্টেরলই যে ভাল ও প্রয়োজনীয়, তা নয়। এবং সেই সঙ্গে জরুরি তার মাত্রা। যেমন খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএল। এটি ১০০-র নীচে রাখা জরুরি। সেটা বাড়লেই তা বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে জমা হতে থাকে। এই জমা হওয়ার ফলেই সবচেয়ে বিপদে পড়ে হার্ট। কারণ রক্তনালী বদ্ধ করে দেয় এই অতিরিক্ত এলডিএল।
এলডিএলের মাত্রা বাড়লে কী হয় -
এই অবস্থায় সবচেয়ে বেশি চিন্তার কারণ যে অসুখ, তা হল হার্টের ধমনী অর্থাৎ করোনারি আর্টারি ব্লক হয়ে যাওয়ার সমস্যা। এটাই হয়েছে সৌরভ গাঙ্গুলির। এ জন্য বেশ কিছু লক্ষ্মণ দেখা যায় শরীরে। করোনারি আর্টারির মধ্যে ধীরে ধীরে লিপিড জমা হওয়ার কারণে যদি ধমনী সরু হতে থাকে, তাহলে হার্টের পেশিতে রক্ত চলাচল ভাল ভাবে হয় না। এর ফলে বুকে ব্যথা হয়।
এইচডিএলের মাত্রা কীভাবে ঠিক রাখবেন -
শরীরের এইচডিএলের মাত্রা ঠিক রাখাটা খুবই জরুরি। ঠিকমতো এক্সারসাইজ, ডিম, বেশি পরিমাণে মাছ, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরে উপকারী কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। ফলে অপকারী কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিকভাবেই কমে যাবে। পারিবারিকভাবে কোলেস্টেরলের সমস্যা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। তাছাড়াও প্রতিদিনের ডায়েটেও বিশেষ খেয়াল রাখা দরকার। যেসব খাবার থেকে এলডিএলের মাত্রা বেড়ে যায় সেগুলো হল -
১. তেলে ভাজা খাবার -
অতিরিক্ত তৈলাক্ত, মশলাদার খাবার এমনিতেই শরীরের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে। এমনকি এলডিএলের মাত্রাও বাড়িয়ে দেয়। তেলে ভাজা খাবার মানেই ক্যালোরি, ট্রান্স ফ্যাট, নুন, তেল। এর কারণেই ডায়াবেটিস, ওবেসিটি, এমনকি হাই কোলেস্টেরল হয়।
২. মিষ্টি -
শুকনো সুগার ফ্রি সন্দেশ যতই বলুক, মিষ্টি মানে তাতে চিনি থাকবেই। প্যাস্ট্রি, কেক, মিষ্টি, আইসক্রিম একেবারেই বর্জন করতে বলছেন ডাক্তাররা। এগুলো অতিরিক্ত খেলে একদিকে যেমন ওবেসিটি হয়, তেমনই ট্রায়গ্লিসারয়েডের মাত্রাও বাড়িয়ে তোলে। ফলে হার্ট অ্যাটাক পর্যন্ত হতে পারে।
৩. ফাস্ট ফুড -
জাঙ্ক ফুড বা ফাস্ট ফুড খেতে দীর্ঘদিন ধরেই নিষেধ করছেন ডাক্তাররা। অতিরিক্ত খেলে ব্লাড সুগার লেভেল বাড়িয়ে তোলে, ওবেসিটি হয়, অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যায়, একইসঙ্গে কোলেস্টেরলের ভারসাম্যও নষ্ট করে।
৪. প্রসেসড মাংস -
কোলেস্টেরলের রোগীদের প্রসেসড মাংস, মটন, গরুর মাংস খেতে একেবারেই নিষেধ করছেন ডাক্তাররা। আধুনিক যুগে তাড়াহুড়োতে রান্নার জন্য অনেকেই প্রসেসড মাংসের প্রতি ঝোঁকেন। কোলেস্টেরলের সমস্যা থাকলে এগুলো এড়িয়ে যেতে বলছেন ডাক্তাররা। সসেজ, বেকন এগুলো বেশি পরিমাণে খেলে হার্টের অসুখ যেমন হতে পারে, তেমনই কলন ক্যানসারও ধরা পড়ে কখনও কখনও।