শেষ আপডেট: 3rd October 2023 13:08
দ্য ওয়াল ব্যুরো: প্রসূতি মৃত্যুর হার বাড়ছে বিশ্বজুড়ে। সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে কিংবা অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় বিশ্বজুড়ে প্রতি দু’মিনিটে একজন মহিলার মৃত্যু (Maternity death ) হয়। সম্প্রতি এই তথ্য সামনে এনেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গেও প্রসূতি মৃত্যুর হার চিন্তার কারণ। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন সূত্রের খবর, প্রসবকালীন সময়ে হবু মায়ের মৃত্যুর কারণ অনেক। তার মধ্যে একটি হল উচ্চ রক্তচাপ।
সম্প্রতি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে একটি অত্যাশ্চর্য ঘটনা ঘটেছে। সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে উচ্চ রক্তচাপের কারণে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়ে মৃত্যু হয় মায়ের। ১ মিনিটের জন্য বন্ধ হয়ে যায় হার্টবিট। কিন্তু ডাক্তারদের চেষ্টায় এবং টানা সিপিআর দেওয়ার কারণে ফের নাড়ির স্পন্দন ফিরে পান সেই মা। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রসবকালীন সময়ে হবু মায়েদের ১০০ জনের মধ্যে প্রায় ১০ জনের রক্তচাপ বেড়ে যায়। এই সময়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে হবু মা ও গর্ভস্থ সন্তানের নানান রকম বিপদের ঝুঁকি থাকে।
ডাক্তারবাবুরা বলছেন, গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ বেড়ে গেলে অনেক সময় হবু মায়েদের প্রস্রাব দিয়ে প্রোটিন বেরিয়ে যায়। প্রেশার বাড়লে ইউরিন টেস্ট করে দেখে নিতে হয় কতটা রক্তচাপ বেড়েছে। সাধারণত, গর্ভাবস্থায় হরমোনের নানা বদল হয়, তার উপর স্ট্রেসের কারণে রক্তচাপ বেড়ে যায় হবু মায়েদের। আবার অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, কিডনির সমস্যা থাকলে ব্লাড প্রেসার বাড়তে পারে। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত উদ্বেগ, স্ট্রেসে থাকেন অনেক মায়েরাই। হাইপারটেনশন থেকেও রক্তচাপ বাড়ে। একে বলে প্রিক্ল্যাম্পসিয়া (preeclampsia)।
ডাক্তারবাবুরা বলছেন, প্রসূতির যদি কোলেস্টেরল বেশি থাকে এবং পারিবারিক উচ্চ রক্তচাপের ইতিহাস থাকে, তাহলেও প্রসবকালীন সময়ে হঠাৎ করেই ব্লাড প্রেসার বেড়ে যেতে পারে। ওষুধ দিয়ে তখন প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। তাছাড়া সুষম খাবার, ওজন স্বাভাবিক রাখাও দরকার। সবসময় ডাক্তারবাবুর পরামর্শে থাকতে হবে হবু মায়েদের।
প্রসবের সময় রক্তচাপ বাড়ছে কিনা তা আগাম বোঝার উপায় থাকে না। অনেক সময়েই দেখা যায়, প্রসূতির ক্লান্তি বা ঝিমুনিভাব বেড়েছে, দরদর করে ঘাম হচ্ছে সবসময়, মাথার যন্ত্রণা, হাঁপিয়ে ওঠা, কাজে অনীহা, দুর্বল বোধ করা এবং পা ফোলার মত কিছু সাধারণ উপসর্গ দেখা দেয়। তখন সাবধান হতে হয়।
যে সব মহিলার উচ্চ রক্তচাপ ছিল, সেই অবস্থাতেই অন্তঃসত্ত্বা হয়েছেন তাঁদের রক্তচাপ আরও বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। ১৮ বছরের কম বয়সে মা হতে গেলেও এই জটিল সমস্যার ঝুঁকি থাকে।আবার যাঁদের প্রথম সন্তানের জন্মের সময় রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছিল, দ্বিতীয় সন্তানের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট ঝুঁকি থাকে। রক্তচাপ বেশি থাকলে ভ্রূণের শরীরে ঠিক মত রক্ত চলাচল করতে পারে না বলে ভ্রূণ ঠিক মত বেড়ে উঠতে পারে না। এমনকি তার মৃত্যুও হতে পারে।এ ছাড়া হবু মায়ের হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। কিডনি ফেলিওর ও খিঁচুনির সম্ভাবনা থাকে।
স্ত্রীরোগ বিষেষজ্ঞরা বলছেন, অনেকেই এখন শারীরিক এমন জটিলতা নিয়ে সন্তান ধারণ করছেন। বেশি বয়সে বিয়ে, সন্তানধারণে দেরি ইত্যাদির কারণে ‘হাই-রিস্ক প্রেগন্যান্সি’ হচ্ছে। তাছাড়া জাঙ্ক ফুড খেতে অভ্যস্ত বা নেশার অভ্যাস থাকলে প্রসবকালীন সময়ে জটিলতা আরও বাড়ে। বদহজম হলেও তা ওষুধে সারে না, চূড়ান্ত হার্ট বার্ন হতে থাকে, সেই সঙ্গে কিছু খেলেই বমি হতে থাকে প্রসূতির। এমনকী ব্লাড প্রেসার বেড়ে গিয়ে হার্ট ও লিভার ফেলিওরের মতো ঘটনাও ঘটে। রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। গর্ভপাতের ঘটনাও ঘটে।
প্রসবকালীন ঝুঁকি এড়াতে ৩০-৩২ বছরের মধ্যে সন্তানধারণ যেমন জরুরি, তেমনই নিয়মিত শরীরচর্চাটাও দরকার। কম বয়স থেকে শরীরচর্চার অভাবে অনেকেরই এত ধরনের জটিলতা দেখা দেয় যেখানে সন্তান ধারণের সময় থেকেই তাঁরা নানা সমস্যায় ভোগেন। আপনি প্রেগন্যান্ট জানার পর থেকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়েট মেনে চলুন। স্বাস্থ্যকর খাবার, টাটকা ফল ও শাক-সবজি প্রচুর পরিমাণে খান। সেই সঙ্গেই জোর দিন আয়রন, ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের উপর। শরীরে ফ্লুইড চলাচল ভাল হওয়ার জন্য জল খাওয়া খুব জরুরি। এতে রক্ত চলাচল ভাল হয়। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হয় না। কাজেই জল বেশি খেলে ডেলিভারিও অনেক সহজ হবে। গর্ভাবস্থায় প্রতি দিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস জল খান। অনেকে প্রেগন্যান্সির গোটা সময়টাই শুয়ে বসে কাটিয়ে দেন। এটা একেবারেই উচিত নয়। যদি ডাক্তার আপনাকে বেড রেস্টে থাকতে না বলেন, এবং অন্য কোনও জটিলতা না থাকে তাহলে সচল থাকুন। বাড়ির হালকা কাজকর্ম করুন। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে যোগাসন বা হালকা ব্যয়াম করুন। সকাল, সন্ধে হাঁটতে যান।