
সেক্সের পরেই ব্লিডিং, ঘন ঘন রক্তপাত, বড় বিপদের ইঙ্গিত হতে পারে
প্রথবার মিলন হলে হাইমেন বা সতীচ্ছদ ছিঁড়ে গিয়ে রক্তপাত হতে পারে। তবে অনেক মেয়েরই ৯-১০ বছর বয়সেই হাইমেন ছিঁড়ে যায়। খেলাধূলা, সাঁতার কাটা, জিমনাস্টিক যাঁরা করেন তাঁদের অল্পবয়সেই হাইমেন ছিঁড়ে যেতে পারে। তাছাড়া আরও কারণ থাকে। কাজেই হাইমেন ছিঁড়ে গিয়ে রক্ত বের হচ্ছে এমনটা নাও হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খেয়াল রাখতে হবে সেক্সের সময় যন্ত্রণা বেশি হয় ও এর পরেই রক্ত বের হতে থাকে তাহলে সমস্যা গুরুতর। তখন লজ্জা, সঙ্কোচ ছেড়ে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই ভাল।
কী কী কারণে সেক্সের পরে ব্লিডিং হতে পারে?
যৌনাঙ্গের ভেতরে সাধারণ স্ফীতি, জ্বালা বা ছিঁড়ে যাওয়া ফলেও রক্ত বের হতে পারে।
ভারী পিরিয়ড হলে এর পরে যৌন মিলন করলে অনেক সময় ব্লিডিং হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পিরিয়ডের ঠিক আগে বা পরে যৌন মিলন করলে, ব্লিডিং হতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনার পিরিয়ড সাইকেল কতদিনের সেটা খেয়াল রাখতে হবে। প্রতিবার এই সমস্যা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
ভ্যাজাইনাল অ্যাট্রপি বা ড্রাইনেস যদি থাকে, তাহলে মিলনের সময় যোনির ভেতর ব্যথা হতে পারে। অনেক সময় প্রদাহ হয়, জায়গাটা ছিঁড়ে গিয়ে রক্ত বের হতে পারে। ইস্ট্রোজেন ক্ষরণ যদি কম হয় বা মেনোপজের পরে ভ্যাজাইনাল ড্রাইনেস থেকে ব্লিডিং হতে পারে।
মেয়েদের যে সমস্যাটা প্রায়ই দেখা যায় তা হল যোনিতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, যাকে ডাক্তারি ভাষায় বলে ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস (বিভি) বা ভ্যাজাইনাল ব্যাকটেরিওসিস। যোনিনালীতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হলে যোনিস্রাব অত্যন্ত বেড়ে যায়, সেই সঙ্গে যোনিতে দুর্গন্ধ হতে পারে। প্রস্রাবের সঙ্গে জ্বালাপোড়া ব্যথা হয়, চুলকানি ও অস্বস্তি বাড়ে। এই সময় মিলন করলে রক্তপাতের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
মেয়েরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লজ্জা ও সঙ্কোচের কারণে লুকিয়ে যান। বাড়িতে আলোচনা করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন না, ডাক্তারের কাছে যেতে লজ্জা পান। ফলে রোগ বাড়তে বাড়তে মারাত্মক বিপদ ঘনিয়ে আসে।
ভ্যাজাইনাটিসও বড় সমস্যা। মেনোপজের পরে মেয়েদের শরীরে যখন ইস্ট্রোজেনের ঘাটতি দেখা যায়, তখন প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ১৫ জনের কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। এগুলি হল অস্বাভাবিক গরম লাগা, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, মাথা ব্যথা, ঘন ঘন মুড বদলানো, খিটখিটে মেজাজ, মূত্রনালীতে জ্বালা, যোনি শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি। এসব সমস্যা থাকলেও সেক্সের পরে ব্লিডিং এর ঝুঁকি বেড়ে যায়।
যৌনরোগ বা সেক্সুয়াল ট্রান্সমিটেড ডিজিজ থাকলে, বা ঘন ঘন পার্টনার করলে তার থেকে সংক্রমণজনিত কারণে রক্তপাত হতে পারে।
কীভাবে সাবধান হবেন
গাইনোকোলজিস্টের কাছে রুটিন চেকআপ দরকারি। যৌনাঙ্গের সামান্য সমস্যাও এড়িয়ে যাওযা ঠিক নয়। মহিলাদের সময় করে এইচপিভি (হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস) ভ্যাকসিন নেওয়াটা জরুরি। সাধারণত দেখা যায়, মহিলাদের যদি একাধিক পুরুষসঙ্গী থাকে, অনিয়ন্ত্রিত যৌন জীবনে অভ্যস্ত হন তাহলে এই ভাইরাস থেকে সংক্রমণ ছড়ায়।
জরায়ুর ক্যানসারের উপসর্গও হতে পারে। দীর্ঘ দিন গর্ভনিরোধক পিল খাওয়া, ১৭ বছর বয়সের আগে থেকে সহবাসের অভ্যাস, বেশি যৌন সঙ্গী থাকা, এইচআইভি জাতীয় যৌন সংক্রমণ, কোনও কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, যৌনাঙ্গের পরিচ্ছন্নতার অভাব ইত্যাদির কারণে জরায়ুর ক্যানসার বাসা বাঁধতে পারে, তারও আগাম লক্ষণ হতে পারে এই ব্লিডিং। তাই দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রাখা জরুরি।