হাবিজাবি চিন্তায় রাতে ঘুম আসে না! রেহাই পাবেন কীভাবে
দ্য ওয়াল ব্যুরো: রাতে শুলেই হাজারো চিন্তা কিলবিল করে মাথায়। কাজের চাপ, নানারকম দুশ্চিন্তা থেকে ঘুম কমে যাওয়ার সমস্যা এখন ঘরে ঘরে। ঘুমের সময়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিশ্রামে থাকে। ফলে পরদিন আবার কাজ করতে নতুন ভাবে শক্তি পায় শরীর। ঘুম যত কম হবে, ততই কম বিশ্রাম হবে নানা অঙ্গের। ফলে ভিতর থেকে ক্লান্ত হয়ে যেতে থাকবে শরীর। টানা এমন চলতে থাকলে দুর্বলতা আসতে বাধ্য। সেই সঙ্গেই জাঁকিয়ে বসতে পারে নানা জটিল রোগ। বাড়তে পারে ওজন। হতে পারে উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবিটিসের সমস্যা। ঘিরে ধরতে পারে অবসাদও।
ঘুম কম বা অনিদ্রার অন্যতম বড় কারণ হল অতিরিক্ত চিন্তা। পেশাগত কারণে স্ট্রেস হয়েই থাকে। তার সঙ্গেই নানা চিন্তার জালে মস্তিষ্কের স্নায়ু আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়ে। চোখ বন্ধ করলেই স্নায়ুর সরণী বেয়ে চিন্তারা নেমে আসে। ফলে ঘুম আসতেই চায় না। অথবা বারে বারে ঘুম ভেঙে মন দুর্বল হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত চিন্তা বা দুশ্চিন্তা থেকে ঘুম না হওয়াটাও একরকম স্লিপিং ডিসঅর্ডারের সমস্যার মধ্যেই পড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘুমোবার সময় একেবারে চিন্তামুক্ত হয়ে ঘুমোনো উচিত। টানা সাত থেকে আট ঘণ্টা স্ট্রেস-ফ্রি নিশ্ছিদ্র ঘুম হলে তবেই শরীর প্রয়োজনীয় শক্তি পাবে। রোগ প্রতিরোধ শক্তি তৈরি হবে শরীরে।
নাইট শিফটে যাঁরা চাকরি করেন, তাঁদের ঘুমোনোর সমস্যা বেশি হয়। যাঁরা ওভারনাইট কাজ করার জন্য সকালে বাড়ি ফিরে গিয়ে ঘুমোন, তাঁরা ছোট থেকে বড় হয়েছেন রাতে ঘুমিয়ে। এ ক্ষেত্রে শরীর রাতারাতি ঘুমোনোর অভ্যেসটা বদলে ফেলতে পারে না। ফলে অনিদ্রার সমস্যা হয়। সেই সঙ্গে উদ্বেগও বাড়ে। দীর্ঘদিনের অনিদ্রার সমস্যা জন্ম দেয় ওবেসিটি, হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস, ত্বকের সমস্যা, হজমের সমস্যা এবং অবশ্যই মানসিক অবসাদের।
অনিদ্রা আরও একটা বড় কারণ হল শরীরচর্চার অভাব। খালি খাওয়া আর শোওয়ার দিকে ঝোঁক থাকলে শরীরও তার প্রতিবাদ করবে এটা তো জানা কথাই। অনিয়মিত ডায়েট, পুষ্টিকর খাবারের বদলে জাঙ্ক ফুড, তেল-মশলাদার খাবারে গলা-বুক জ্বালা, অম্বলে ঘুমের দফারফা হয়। তার উপর নিয়মিত এক্সারসাইজ না করলে রক্ত চলাচল ঠিকমতো হয় না, পেশীও ভরপুর শক্তি পায় না, গোটা সিস্টেমটাই বিগড়ে যায়।
অনিদ্রা নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করে সমস্যা বাড়াবেন না। কারণ অনিদ্রা থেকে সুনিদ্রায় আসার অনেকগুলো পথও আছে। সেগুলো মেনে চললে সুফল পাওয়া যায়।
কী কী নিয়ম মানলে চিন্তামুক্ত ঘুম হবে?
ওষুধের বদলে মানসিক স্থিতিতে কাজে দেয় বেশি। বিশেষজ্ঞরা তাই প্রথমেই বলেন, প্রতিদিন শোয়ার আগে কিছুক্ষণ মেডিটেশন করতে। মন শান্ত রেখে প্রাণায়াম বা যোগব্যায়ামে খুব দ্রুত কাজ হয়।
ঘুমনোর আগে চা, কফি বা ঠাণ্ডা পানীয় না খাওয়াই ভাল। সিগারেট টেনে ঘুমোতে যাওয়াও খুব একটা ভাল অভ্যাস নয়। এতে ঘুমের ক্ষতি তো হয়ই, শরীরেও তার ছাপ পড়ে।
রাতের খাওয়া আর ঘুমের মধ্যে অন্তত এক থেকে দুই ঘণ্টার বিরতি থাকতে হবে। এই সময় হাঁটাহাঁটি করলে খাবার হজম হয় দ্রুত। পাকস্থলী শান্ত থাকে, অম্বলের বাড়বাড়ন্ত হয় না। ঘুমও আসে তাড়াতাড়ি।
অতিরিক্ত চিন্তা-ভাবনা না করাই ভাল, বিশেষত ঘুমনোর সময়। স্ট্রেস ফ্রি হয়ে ঘুমোতে যান।
মেডিটেশন ঘুমের জন্য আদর্শ দাওয়াই। চোখ বন্ধ করে সংখ্যা গুনতে পারেন কাজ দেবে। ঘরের আলো নিভিয়ে বা হাল্কা আলো জ্বালিয়ে মেডিটেশন করুন, ফল পাবেন।
একটানা ঘুমের সমস্যা হতে থাকলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।