
গলায় আটকাচ্ছে খাবার? জ্বালা-পোড়া ব্যথা, অনবরত কাশি, রোগকে হেলাফেলা করবেন না
গলায় খাবার আটকে দমবন্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়। একে ডাক্তারি ভাষায় বলে চোকিং। কিন্তু যদি খাদ্যনালীতে দীর্ঘক্ষণ খাবার আটকে থাকে এবং সে কারণে গলার কাছে ক্রমাগত দলা পাকিয়ে ব্যথা হতে থাকে তাহলে চিন্তার কারণ আছে। ফের খাবার খেতে গেলে গলার কাছে ব্যথা শুরু হয়, দমবন্ধ হয়ে আসতে থাকে, গলার কাছে জ্বালা করতে থাকে। এই ধরনের রোগকে বলে ডিসফ্যাগিয়া (Dysphagia)।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক সময় ডিসফ্যাগিয়া চিহ্নিত করা যায় না। মনে হয় শুধু খাবার আটকে গলা ব্যথা করছে। কিন্তু দেখা যায়, খাবার গলা থেকে বেরিয়ে গেলেও একটা লাম্প তৈরি হয়। সেখানে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হয়। ঢোঁক গিলতে গেলেও সমস্যা হয়। তখন ডাক্তার দেখিয়ে নেওয়া ভাল। কারণ বেশি দেরি হলে বিপদ হতে পারে। অনেকের আবার ডিসফ্যাগিয়ার কারণে বুকে ব্যথা শুরু হতেও দেখা যায়।
কেন হয় ডিসফ্যাগিয়া?
নানা কারণ আছে। মূলত বয়স্কদের বেশি দেখা যায়। খাবার গেলার সমস্যার কারণে গলার কাছে খাবার আটকে থাকে। তাড়াহুড়ো করে খাবার খেতে গিয়ে বা খাওয়ার সময় কথা বলতে গিয়ে দম আটকে খুব কষ্টকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। খাবার শুকনো ও শক্ত হলে গলায় আটকে যাবার আশঙ্কা বাড়ে। এসবের থেকে ডিসফ্যাগিয়া হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তাই ডাক্তাররা বলেন, ছোট ছোট গ্রাসে খাবার খান ও খাওয়ার সময় কথা কম বলুন।
শ্বাসনালীর মুখে খাবার আটকে গেলে অক্সিজেন চলাচল খুব কমে যায়। এমনকি পুরোপুরি বন্ধও হয়ে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে দ্রুত আটকে যাওয়া খাবারের টুকরো বের না করে দিলে রোগীকে বাঁচানো যায় না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিসফ্যাগিয়া হওয়ার আরও কারণ আছে। অনেক সময় পাকস্থলীতে ঠিকমতো খাবার প্রবেশ করে না। খাদ্যনালীতে আটকে থাকে। ফলে খাদ্যনালীর পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। এমন ক্রমাগত চলতে থাকলে খাদ্যনালী সরু হয়ে যায়, খাবার চলাচলের জায়গা রুদ্ধ হয়। একটা সময় খাদ্যনালীতে টিউমার জন্মায়। একে বলে গ্যাস্ট্রোইসোফেগাল রিফ্লাক্স ডিজিজ।
কী কী লক্ষণ দেখে সতর্ক হবেন
খাবার গিলতে সমস্যা
গলায় প্রচণ্ড ব্যথা
মনে হবে গলার কাছে খাবার আটকে আছে
শ্বাস নিতে সমস্যা, ঘন ঘন কাশি
গলার কাছে জ্বালা-পোড়া প্রদাহ
বুকে ব্যথা
ডিসফ্যাগিয়ার চিকিৎসায় দেরি হলে বিপদ হতে পারে
ডিসফ্যাগিয়ার লক্ষণ টের পেলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। দীর্ঘদিন রোগ পুষে থাকলে অপুষ্টি, ডিহাইড্রেশন দেখা দিতে পারে। ওজন কমতে শুরু করবে। অনেকের ডিসফ্যাগিয়ার সমস্যার থেকে নিউমোনিয়া ধরে যেতে পারে। খাদ্যনালীতে খাবার জমতে জমতে তার থেকে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হতে পারে ফুসফুসে।
থ্রোট চোকিং হতে পারে এর থেকে। ডিসফ্যাগিয়া না সারালে গলায় খাবার আটকে মৃত্যুও হতে পারে। থ্রোট চোকিং হলে হেইমলিচ ম্যানেউভারের সাহায্যে রোগীকে সুস্থ করে তোলা যায়। এই পদ্ধতি বাড়িতেও করা যেতে পারে। অসুস্থ মানুষটিকে পিছন থেকে জড়িয়ে দুই হাত দিয়ে পেটের ওপরের দিকে জোরে জোরে চাপ দিলে শ্বাসনালীতে আটকে থাকা খাবার বেরিয়ে আসে। ইউটিউব বা ইন্টারনেটে খুঁজলে এমন ভিডিও পাওয়া যায়। যা থেকে সহজেই শিখে নেওয়া যেতে পারে এই পদ্ধতি। তবে ভাল হয় ডাক্তারের পরামর্শ নিলে।