
একা একা বকবক করেন? নিজের সঙ্গে কথা বলা ভাল না খারাপ
তাহলে কি রোগ হয়েছিল মিমির?
মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একা একা কথা বলা মানেই যে খারাপ তা কিন্তু একেবারেই নয়। বরং নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলা যাকে বলা হয় ‘সেল্ফ-টক’, এর অনেক ভাল দিক আছে। যদি কোনও অস্বাভাবিক আচরণ না দেখা যায়, তাহলে সেল্ফ-টক খারাপ নয়। মন ভাল রাখার অন্যতম উপায় হতে পারে সেল্ফ-টক। নিজের মানসিক চাপ, উদ্বেগের চিকিৎসা আপনি নিজেই করতে পারবেন।
একা একা কথা বলার অভ্যেস কোনও জটিল রোগ নয়। তাই চিন্তার কারণ নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর কয়েকটা ভাল দিক আছে, যেমন—
স্ট্রেস কমায়—প্রচণ্ড মানসিক চাপ, স্ট্রেস থাকলে এবং অন্য কাউকে তা বোঝানোর উপায় না থাকলে, নিজের সঙ্গেই কথা বলুন, এমনটাই পরামর্শ দেন মনোবিদেরা। তাঁদের মতে, পেশার ক্ষেত্রে টেনশন, কাজের চাপ, ব্যক্তিগত জীবনে কোনও সমস্যা থাকলে তা অনেক সময়ই অন্য কাউকে বলা সম্ভব হয় না। নিজের মনে সবটা চেপে রেখে স্ট্রেস আরও বাড়ে। এর থেকে অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার হতে পারে। তাই ভাল হয়, নিজের সঙ্গেই কথা বলে জটিলতর দিকগুলো বের করার চেষ্টা করুন। এতে মন অনেকটা হাল্কা হবে।
আত্মবিশ্বাস বাড়ায়—মনোবিদরা বলছেন, সেল্ফ-টক আত্মবিশ্বাস অনেকটা বাড়াতে পারে। অনেকেই সোশ্যাল ফোবিয়ায় ভোগেন। বহু মানুষের সামনে নিজেকে মেলে ধরতে ভয় পান। স্টেজে উঠে কিছু বলতে হলে বা অনেকের সামনে প্রেজেন্টেশন দিতে হলে কয়েক পা পিছিয়ে যান। এক্ষেত্রে সেল্ফ-টক ভাল থেরাপি হতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, কলেজে ভাইভার আগে বা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার আগে, অনেকেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একা একাই অভ্যাস করে নেন। এতে মনের জোর বাড়ে। প্রোডাকটিভিটিও বাড়ে।
অনেক জটিল সমস্যার সমাধান হয়—চিন্তাভাবনারা যখন মনে জট পাকিয়ে যায়, কোনও সমাধান সামনে আসে না, তখন নিজে নিজেই গোটা ব্যাপারটার বিশ্লেষণ করলে তার সুরাহা চটজলদি হয়। কোনও জটিল সমস্যায় পড়লে অনেকেরই মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, ব্যবহারে বদল আসে, নিজের মানসিক উদ্বেগ অন্যের ওপর প্রয়োগ করে ফেলেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মন অশান্ত করার চেয়ে নিজের সঙ্গেই খানিক কথোপকথন চালিয়ে নিন। এতে সমাধানের পথ অনেক সহজ হবে।
ফোকাস বাড়ে—মনোসংযোগ অনেক বাড়ে। মনোবিদদের মত, সেল্ফ-টক মন ও মস্তিষ্কের তীক্ষ্ণতা বাড়ায়। ইন্টারনাল-টক মনোসংযোগ বাড়ানোর অন্যতম উপায়। নিজের বিচারবুদ্ধি দিয়েই যদি সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায়, তাহলে আত্মবিশ্বাস যেমন বাড়ে তেমনই যে কোনও বিষয়ে ফোকাস বাড়ানো যায়।
নিজের ভুল-ত্রুটি বিশ্লেষণ: নিদের দোষ-গুণ নিজেই বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা বাড়ে। বিশেষজ্ঞরাই বলেন, আত্মবিশ্লেষণ করা সবচেয়ে ভাল। এতে অহেতুক মনের ওপর চাপ পড়ে না। পারিপার্শ্বিক চাপ যতই থাক, সঠিক কাজ করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তৈরি হয়।
তবে হ্যাঁ, একা একা কথা বলতে গিয়ে যদি কোনও অস্বাভাবিক আচরণ দেখা যায়, স্থান-কাল ভুলে এমন আচরণ করতে থাকে কেউ, তাহলে চিন্তার কারণ আছে। মানসিক রোগীদের মধ্যে অডিটরি হ্যালুসিনেশন দেখা যায়। অবাস্তব কিছু দেখা বা শব্দ শোনা। সেক্ষেত্রেও যখন তখন অস্বাভাবিক আচরণ করতে দেখা যায়। তবে মানসিক রোগের লক্ষণ আলাদা। রোগী যদি একই রকম আচরণ বার বার করতে থাকেন, একই শব্দ বা কথা বার বার বলেন, তাহলে সতর্ক হতে হবে।