
ক্লিটোরিসে স্পর্শ করলেই জেগে ওঠে মস্তিষ্কের এই অংশ, সচল হয় স্নায়ু, নতুন খোঁজ বিজ্ঞানীদের
দ্য ওয়াল ব্যুরো: যৌনতৃপ্তিই কি শারীরিক সুস্থতার চাবিকাঠি? বিশেষজ্ঞরা এমনটাই বলেন। যৌনতৃপ্তি বা যৌন সন্তুষ্টি শুধু শারীরিক সুস্থতা নয় মানসিক বিকাশের অন্যতম মাধ্যমও বটে। এমনও দেখা গেছে, তীব্র অবসাদ, মানসিক রোগ বা সেক্সুয়াল ডিসফাংশনের মতো অসুখকে সারানো গেছে এভাবেই। মানুষের শরীরে যখন যৌন উদ্দীপনা তৈরি হয় তখন যে সংবেদনশীলতার স্রোত স্নায়ু দিয়ে বয়ে যায় সেটাই হল আসল দাওয়াই। এই সংবেদনশীলতা জটিল মানসিক ব্যধির থেরাপি হতে পারে। নতুন গবেষণা দাবি করেছে এমনটাই।
ব্যাপারটা একটু বিশদে বলা যাক। স্ত্রী বা পুরুষের শরীরে এমন কিছু সংবেদনশীল অঙ্গ আছে যেগুলি যৌন উদ্দীপনা তৈরি করতে পারে। মহিলাদের শরীরে তেমনই একটি অঙ্গ হল ক্লিটোরিস (Clitoris)। স্পর্শ করলেই এই অঙ্গ উদ্দীপিত হয়। ইন্টারকোর্স বা যৌন মিলনের সময় স্ত্রী যোনিপথ বা যৌননালীর পথকে আরও উন্মোচিত করার জন্য এই উদ্দীপনা খুব জরুরি। কারণ মহিলাদের ওই অংশের পেশি সঞ্চালনে এটি বিশেষ ভূমিকা নেয়। ডাক্তারি ভাষায় বলতে গেলে, যে এক্সাইটমেন্ট (Excitement) তৈরি হয় তা ‘ভ্যাজাইনাল সিক্রেশন’-এর জন্য জরুরি। আর এভাবেই সংবেদনশীলতার যে স্রোত তৈরি হয় তা মস্তিষ্কের একটি বিশেষ অংশকে সক্রিয় করে তোলে। নানা রকম জটিল মানসিক ব্যধির নিরাময়ের উপায় লুকিয়ে আছে সেখানেই।
বার্লিনের চ্যারিটি ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের মেডিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের গবেষকরা মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের একটি বিশেষ দিক নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে এই ব্যাপারটা লক্ষ করেছেন। ২০ জন মহিলার ওপরে পরীক্ষা করে এর সত্যতাও যাচাই করা হয়েছে। JNeurosci সায়েন্স জার্নালে এই গবেষণার খবর ছাপা হয়েছে।
মস্তিষ্কের সংবেদনশীল অঞ্চলকে সক্রিয় করে ক্লিটোরিস?
২০ জন মহিলার ওপর এই পরীক্ষা চালিয়ে তাঁদের শরীরে যে সংবেদনশীলতার স্রোত তৈরি হয়েছে তাই নিয়ে গবেষণা করেন বিজ্ঞানীরা। ‘ফাংশনাল ম্যাগনেটিক রেসোন্যান্স ইমেজিং’ (fMRI) পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ক্লিটোরিসকে উদ্দীপিত করলে স্নায়ুর মাধ্যমে যে উত্তেজনা প্রবাহ হয় তা মস্তিষ্কের সোমাটোসেনসরি কর্টেক্স (Somatosensory Cortex) অঞ্চলকে আরও সক্রিয় ও প্রসারিত করে তোলে।
সোমাটোসেনসরি কর্টেক্স কী? এটি প্যারাইটাল লোবে অবস্থিত মস্তিষ্ক বা ব্রেনের একটি বিশেষ অঞ্চল। এর কাজ হল সংবেদনশীল অনুভূতিগুলিকে প্রকাশ করা। স্পর্শ, তাপ, উষ্ণটা, কম্পন ইত্যাদিতে শরীরে যে অনুভূতি ও উত্তেজনা তৈরি হয়, সেই অনুভূতির সঙ্কেত পাঠায় ব্রেনের এই অংশ। ধরুন আপনাকে কাতুকুতু দেওয়া হল। তাতে যে অনুভূতি তৈরি হবে তা হল স্পর্শ বা টাচ থেকে। এই অনুভূতির সঙ্কেত স্নায়ুর মাধ্যমে পাঠাবে সোমাটোসেনসরি কর্টেক্স। এর আবার অনেকগুলো স্তর আছে। শরীরের কিছু বিশেষ জায়গায় স্পর্শ করলে এই অংশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। বিজ্ঞানীরা এতদিন মনে করতেন পিঠে, পায়ের পাতায় বা হিপের নীচে একটি জায়গায় স্পর্শ করলে বা উদ্দীপনা তৈরি করলে ওই অংশ সক্রিয় হয়। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ক্লিটোরিস এমন এক সংবেদনশীল অঙ্গ যা সোমাটোসেনসরি কর্টেক্সকে আরও বেশি সক্রিয় ও প্রসারিত করে।
স্ত্রী জনন অঙ্গের অনেকগুলো ভাগ আছে। যোনি সারভিক্স থেকে ভালভা অবধি বিস্তৃত। এর স্তরগুলো হল ক্লিটোরাল হুড, ক্লিটোরিস, লেবিয়া মাইনরা, মূত্রনালীর মুখ, যোনির প্রবেশমুখ, পেরিনিয়াম ও পায়ু। এই ক্লিটোরিস অংশই এমন উদ্দীপনা তৈরি করতে পারে যা মস্তিষ্ক ও স্নায়ুকে সচল রাখে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘ব্রেন প্লাস্টিসিটি’ বাড়ে। অর্থাৎ মস্তিষ্কের বিশেষ অঞ্চলগুলি প্রসারিত হয়। সংবেদনশীলতা, উত্তেজনা, ও ইন্দ্রিয়ের অনুভূতিগুলো সতেজ থাকে। এই খোঁজকেই আগামী দিনে অনেক জটিল মানসিক ব্যধি ও যৌনরোগের চিকিৎসায় প্রয়োগ করার কথা ভাবছেন গবেষকরা।