
Head and Neck Cancer: মুখ ও গলার ক্যানসার কেন বাড়ছে ভারতে, কী বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
তিয়াষ মুখোপাধ্যায়
ক্যানসার। এ নিয়ে আলাপ, আলোচনা, চর্চার অন্ত নেই। একদিকে যেমন এগিয়ে চলছে চিকিৎসাবিজ্ঞান ও গবেষণা, তেমনই এ নিয়ে নতুন নানা তত্ত্ব ও তথ্যেও ভারাক্রান্ত হয়ে চলেছে সাধারণ মানুষ। তবে যতই তথ্য বা তত্ত্ব আসুক না কেন, মুখ ও গলার ক্যানসারের (Head and Neck Cancer) সঙ্গে তামাকের সরাসরি সম্পর্ক কখনওই ফেলা যায় না। এছাড়াও আরও নানা কারণ থাকতে পারে এই ক্যানসারের এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশ্যালিটি হাসপাতালের কনসালট্যান্ট সার্জিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট, ডক্টর শুভদীপ চক্রবর্তী।
মুখ ও গলার ক্যানসার (Head and Neck Cancer) কী
প্রথমেই জেনে নেওয়া দরকার, এই মুখ ও গলার ক্যানসার বলতে ঠিক কী বোঝায়, অর্থাৎ শরীরের কোথায় কোথায় ক্যানসার হলে তা এই ক্যাটেগরির আওতায় আসে। ডাক্তারবাবু জানালেন, ঠোঁট, জিভ, গাল, মাড়ি, নাক, গলা, থাইরয়েড– এই সবটাই হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসারের অন্তর্ভুক্ত। সাধারণত শরীরের কোষগুলি নির্দিষ্ট সময়ে তৈরি হয় এবং ধ্বংসও হয়। তবে বিশেষ পরিস্থতিতে কোষের গঠন ও বিস্তার বদলে যায়, যা শরীরের ক্ষতি করে। এই অবস্থাকেই বলে ক্যানসার।
এখন এই নির্দিষ্ট হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসারের ক্ষেত্রে তামাক বা তামাকজাত দ্রব্যের ভূমিকা অত্যন্ত নিবিড়। সারা দেশে নানা রকম ভাবে তামাক ব্যবহার হচ্ছে। সিগারেট তো বটেই, গুটখা, খৈনিও প্রভাব বিস্তার করেছে। শুধু সিগারেটেই সাত হাজারটা নানা রকম রাসায়নিক আছে। তার মধ্যে ৭২টা সাংঘাতিক ভাবে কার্সিনোজেনিক। এই টোব্যাকোর প্রভাবে যে ক্ষতি, তাতে সবার আগে আক্রান্ত হয় ফুসফুস। তার পরেই হেড অ্যান্ড নেক। সেই কারণেই, এই ক্যানসার নিয়ে আলোচনা করতে গেলে তা টোব্যাকোকে বাদ দিয়ে করা যাবে না।
ক্যানসারের উপসর্গ
এই বিষয়ে সহজ করে বোঝাতে, CAUTION. বা সতর্কতা। এই সতর্কতা জীবনে যেমন মেনে চলতে হবে, সেই সঙ্গে শব্দটাকেও ভাঙতে হবে। এই শব্দের প্রথম অক্ষর, ‘সি’ বলতে বোঝাচ্ছে চেঞ্জ। চেঞ্জ ইন বাওয়েলস অর ব্লাডার হ্যাবিট। সাধারণত মানুষের প্রস্রাব বা মলত্যাগের যে অভ্যাস ও পদ্ধতি, তা কোনও ভাবে বদলে যাচ্ছে বলে মনে হলে, বড় কোনও পরিবর্তন বুঝলে, অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে।
এর পরের অক্ষর ‘এ’ বলতে বোঝাচ্ছে, ‘আ সোর দ্যাট ডাজ নট হিল’। কোনও ঘা বা ক্ষত, তা শরীরের যেখানেই হোক, মুখে হলে আরও বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। যদি অনেক দিন ধরে ঠিক না হয়, তা ক্যানসারের কারণ হতে পারে।
তৃতীয় অক্ষর ‘ইউ’ বলতে বোঝায়, ‘আনইউজুয়াল ব্লিডিং অর ডিসচার্জ’। নাক, কান, মুখ, গলা– শরীরের যে কোনও অঙ্গ থেকে অস্বাভাবিক রক্তপাত এর মধ্যে পড়ছে। মলদ্বার থেকেও অস্বাভাবিক রক্তপাত হতে পারে, এমনকি মহিলাদের মাসিক রক্তপাতের অস্বাভাবিক বদলও ক্যানসারের ইঙ্গিতবাহী হতে পারে।
এর পরে ‘টি’ হল, ‘থিকেনিং অর লাম্প’। শরীরের কোথাও ফোলা, মাংস জমা হলেই সতর্ক হন। মহিলাদের ক্ষেত্রে স্তনে, পুরুষদের ক্ষেত্রে অণ্ডকোষে এমন হলে আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। মুখের বা মাড়ির কোনও ফুসকুড়ির ক্ষেত্রেও একই সতর্কতা। তা থেকে টিউমার ও টিউমার পরবর্তী ম্যালিগন্যান্সির সম্ভাবনা প্রবল।
এর পরে ‘আই’। অর্থাৎ ‘ইনডাইজেশন অর ডিফিকাল্টি ইন সোয়ালোয়িং’। বেশ কিছুদিন ধরে খিদে না হলে, ক্রনিক বদহজম হলে সতর্ক হতে হবে। প্যান্টোপ্রাজোল বা হজমের ওষুধ খেয়ে বারবার করে সারাতে থাকলে হবে না। একটানা সমস্যা থেকে গেলে অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে।
‘ও’ বলতে বোঝানো হয়, ‘অবভিয়াস চেঞ্জ ইন দ্য ওয়ার্ট অর মোল’। শরীরের কোনও জায়গায় অস্বাভাবিক বদল হলে সতর্ক হতে হবে, তা যে কোনও বদলই হতে পারে। একটা তিলের রং বদলালে, মুখের দুর্গন্ধ বদলালে– সব রকম আচমকা বদলকে গুরুত্ব দিয়ে, কারণ বোঝার চেষ্টা করতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
এর পরে শেষ অক্ষর ‘এন’ হল, ‘ন্যাগিং কফ’। ঠান্ডা লাগা, কাশি একটানা না সারলে, ১৫-২০ দিনে একই রকম থেকে গেলে চিকিৎসককে দেখানো জরুরি। এটা ক্যানসারের ইঙ্গিত হতে পারে।
তবে এমন মনে করার কোনও কারণ নেই যে এরকম কিছু হলেই অঙ্কোলজিস্টের কাছে ছুটতে হবে। প্রথমে সাধারণ চিকিৎসককেই দেখাতে হবে, তার পরে তিনি বললে তখন অঙ্কোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে। সিম্পটম্প দেখে, সব রকম টেস্ট করে তবেই নিশ্চিত হওয়া যাবে উপসর্গের কারণ কী। আতঙ্কিত হলে চলবে না, তবে সতর্ক থাকতেই হবে।
দেখুন কী বলছেন ডাক্তারবাবু।
হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসারের উপসর্গ
এই ক্যানসারের বিভিন্ন স্টেজ থাকে। প্রথম স্টেজটা খুব লোকালাইজ়়ড। ধরা যাক কারও জিভে ক্যানসার হয়েছে, আর কোথাও ছড়ায়নি। সেটাই প্রথম স্টেজ। এর পরে দ্বিতীয় স্টেজ মানে সামান্য ছড়িয়েছে গালে, কয়েকটি লিম্ফনোডে। তৃতীয় স্টেজ মানে সব ক’টা লিম্ফ নোড আক্রান্ত। স্টেজ ফোর মানে একেবারে অন্য কোথাও ক্যানসার পৌঁছে গেছে। যেমন ধরুন মুখ থেকে ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়েছে ক্যানসার। বলাই বাহুল্য, যত দেরি করে ক্যানসার ধরা পড়বে তত সম্ভাবনা কমবে নিরাময়ের।
প্রথম দিকে ধরা পড়ার পরে চিকিৎসা নিলে, তা সারতে পারে। তবে চিকিৎসা মানে কিন্তু শুধু অস্ত্রোপচারটুকু নয়। তার সঙ্গে রেডিয়েশন, কেমো, সর্বোপরি নিয়মিত ফলোআপ– চিকিৎসকের কথা পালন করে সবটা করলে নিরাময় হওয়া অসম্ভব নয়। কিন্তু দেখা যায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ৭৫ শতাংশ রোগী আসছেন স্টেজ থ্রি-র পরে। চিকিৎসা শুরু করতেই দেরি হয়ে যাচ্ছে। সেটা মাথায় রেখে চিকিৎসকরা বারবারই সতর্ক করছেন উপসর্গ নিয়ে।
হেড অ্যান্ড নেকের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কমন জিভের ক্যানসার। খুব তাড়াতাড়ি ছড়ায় এটি। আগে জিভ বাদ দিতে হতো বহুক্ষেত্রে, এখন পুরোটা বাদ দিতে হয় না। যতটা সম্ভব অর্গ্যান বাঁচানোর চেষ্টা করছেন চিকিৎসকরা। তার পরে শরীরের অন্য অংশের চামড়া নিয়ে রিকনস্ট্রাক্টও করছেন। চোয়ালের হাড়ের ক্যানসার হলেও আগে প্রায় পুরোটাই বাদ দিতে হতো। এখন বিষয়টা এতটা ভয়ংকর নয়। রেডিয়েশন অনেক উন্নত, অপারেশনের ধরনও অনেক পরিবর্তিত। রিকনস্ট্রাকশনের পদ্ধতিও ক্রমে ইতিহাস গড়ছে।
কিন্তু চিকিৎসকরা বারবারই মনে করাচ্ছেন, এই সবটাই সম্ভব আর্লি স্টেজে ধরা পড়লে। দেরি হয়ে গেলে লডা়ই কঠিন। তাই কখনওই কোনও অসুখ ফেলে রাখা উচিত নয়। মাড়ির ঘা, দাঁতের দুর্বলতা, একটানা ঘা, মুখে একটানা বাজে দুর্গন্ধ– এরকম যে কোনও কিছু হলেই পরীক্ষা করানো জরুরি। অনেক সময়ে হয়তো ছোট কোনও টিউমার হয়, থাকতে থাকতে বাড়াবাড়ি হলে তা ক্যানসার হয়ে যায়। তাই সতর্কতাই সবচেয়ে বড় চিকিৎসা।
ভারতে এই ক্যানসার কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে
আমাদের দেশে যত ক্যানসার হয়, তার চল্লিশ শতাংশই আক্রান্ত ‘হেড অ্যান্ড নেক’ ক্যানসারে। এই ধরনের ক্যানসারের কারণ বিশ্লেষণ করতে গেলে দেখা গিয়েছে, মোট আক্রান্তের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ কখনও না কখনও কোনও না কোনও ভাবে তামাকজাত দ্রব্যের নেশা করেছেন।
এ দেশে মহিলাদের এই ক্যানসার হওয়ার সংখ্যা হয়তো কম। কিন্তু হয় না, তা নয়। মহিলারা আজকাল স্মোক করছেন, অ্যালকোহল নিচ্ছেন। আক্রান্তও হচ্ছেন। সতর্কতা খুব জরুরি। আর জরুরি সার্ভাইকাল ক্যানসার নিয়ে সচেতন হওয়া। এই ক্যানসার তাঁর সঙ্গী বা সঙ্গিনীর ওরাল ক্যানসারের কারণ হলেও হতে পারে। এই সার্ভাইকাল ক্যানসারের কারণ অর্থাৎ হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের সম্ভাবনাও এ দেশে বাড়ছে। কিছু দেশে এর ভ্যাকসিন চালু হয়েছে, কিশোরীদের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে সার্ভাইক্যাল ক্যানসার কমে যাচ্ছে।
চিকিৎসা পদ্ধতি
ক্যানসার ধরা পড়ার পরে প্রথম প্রশ্ন ওঠে, চিকিৎসা কীভাবে হবে। প্রথমে বায়প্সির পরে একটা প্যাথলজিক্যাল স্টেজিং হয়। সেটাই প্রকৃত স্টেজিং। সেই বুঝে চিকিৎসা পদ্ধতি তৈরি হয়। তার পরে শুরু হয় চিকিৎসা। তবে আমাদের দেশে দেখা যায়, বহু পেশেন্ট চিকিৎসা করিয়ে সুস্থতা অর্জন করার পরে আর ফেরত আসেন না চিকিৎসকের কাছে। বা বহু ক্ষেত্রে চিকিৎসা শুরুতে ভাল ফল পেয়ে আর সেটা কনটিনিউ করেন না। ফলো আপের জন্য সময় বা গুরুত্বই দেন না।
দুঃখজনক বিষয় হল, এই গা-ছাড়া মনোভাবর জন্য অনেক রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা থাকলেও তাঁকে অকালে হারাতে হয়। ডাক্তারবাবু বারবার বলছেন, চিকিৎসার পরে প্রথম দু’বছর খুব জরুরি, কারণ ক্যানসার আবারও ফিরে আসতে পারে। এই সময়টা খুব সংবেদনশীল। বারবার পরীক্ষা করা জরুরি। পরীক্ষার রেজাল্ট নর্মাল এলেও তা নিয়ম মেনে করে যেতে হবে। অন্তত ৫ বছর এই পরীক্ষা করে যাওয়ার পদ্ধতিটা চলে।
চিকিৎসার সময়ে রোগীর সাপোর্ট
একটা কথা মনে রাখতে হবে, রোগীর ইমিউনিটি কম ছিল বলেই কিন্তু ক্যানসার হয়েছে তাঁর। এখন ক্যানসারের মতো কঠিন রোগীর ট্রিটমেন্ট চলাকালীন তা আরও কমে যায়। ফলে ইনফেকশনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই রোগীকে আগলে রাখতে হয়, পরিবারকে খেয়াল রাখতে হবে।
চিকিৎসার সময়ে রোগীর মানসিক অবসাদও হতে পারে, তখন পরিবার ও বন্ধুদের সাপোর্ট খুব জরুরি। রোগীর মনের ভিতরে ভয় ও আতঙ্ক থাকেই। কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন নিয়েও যথেষ্ট চাপে থাকেন রোগী। চিকিৎসার পরেও ভয় থেকে যায়, আবার হবে না তো! মৃত্যুকে সবাই ভয় পায়। এই ভয় কাটানোর জন্য সহানুভূতি জরুরি।
আবার অনেক ক্ষেত্রে রোগী পুরনো নেশায় ফিরে যায়, ভাবে, ‘আমার তো সব হয়ে গেছে, এবার খাই।’ এটা সাংঘাতিক প্রবণতা। এর ফলে রোগ ফিরে আসার সম্ভাবনাও কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এমন হলে রোগীর মনটা ঘোরাতে হবে অন্যদিকে। দরকারে চুইংগাম খাওয়া, বই পড়া– এসবে মন দিতে হবে। এই পর্যায়ে বন্ধুবান্ধবদের ভূমিকা জরুরি। তামাকের অভ্যেস ছাড়া সহজ নয়। তামাকের নেশা কখন ইচ্ছে বাড়ছে, সেটা খেয়াল রাখতে হবে। অফিসে সিগারেট ব্রেক চলার সময়ে সতর্ক থাকতে হবে রোগীর সহকর্মীদের।
হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসারে তামাক কতটা ক্ষতিকর
তামাক সর্বতোভাবে দায়ী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অর্থাৎ হু জানিয়েছে, টোব্যাকো থেকে দূরে থাকলে ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটা কম। এটা গবেষণালব্ধ ও তথ্যপ্রমাণ-সহ নির্ধারিত। দেখা যাচ্ছে, আমাদের দেশে গুটখা, পানমশলা, সিগারেট, বিড়ি, হুঁকো– সব রকম নেশার জিনিস নেওয়ার অভ্যেস মানুষের। এগুলোই কিন্তু ওরাল ক্যানসারের প্রধান কারণ।
যেমন, সুপুরি মুখে রাখা অতি খারাপ অভ্যাস। অনেকে বলেন, ‘আমাদের মা-দিদিমারা খেয়েছেন, কিছুই হয়নি তাঁদের, আমার কেন হবে।’ এটার কোনও উত্তর হয় না। কে কোন সময়ে কতটা সেনসিটিভ হবেন ক্যানসারের জন্য, সেটা আগে থেকে বোঝা যায় না। সুপুরি নিয়মিত মুখে থাকায় যে ক্ষত তৈরি হচ্ছে, তা ক্যানসারে পরিণত হবে কি হবে না, তার কোনও অঙ্ক নেই। কারও হয়নি মানে তিনি বেঁচে গেছেন। সকলে নাও বাঁচতে পারেন।
টোব্যাকো থেকে ক্যানসার
সবার ধারণা, সিগারেট খেলে শুধু ফুসফুসে ক্যানসার হয়। তা নয়। সিগারেট খেলে ওরাল ক্যানসার থেকে শুরু করে গলার ক্যানসার, চেস্টের ক্যানসার, প্যানক্রিয়াসের ক্যানসার এমনকি রেক্টাল ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। আর যদি ক্যানসার নাও হয়, তাহলে অসংখ্য ক্রনিক ডিজিজ হতে পারে। ইনফার্টিলিটি, স্ট্রোক, রক্তচাপ, হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া– এর কোনও শেষ নেই।
স্মোকিং তিন রকমের। অ্যাকটিভ আর প্যাসিভের কথা অনেকেই জানেন। নিজে খাওয়া, আর অন্য কেউ খেলে তার সামনে থাকা। এক্ষেত্রে প্যাসিভ স্মোকারের আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা ২০ শতাংশ বেশি। এর পরেও আরও একটা ক্ষতি আছে, থার্ড হ্যান্ড স্মোকিং। কোনও একটা ঘরে কেউ সিগারেট খেল, সেখান থেকে বেরিয়ে চলে গেল, পরে সেই রুমে যে গেল বা রুমমটা পরিষ্কার করল, সেও কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
একটা স্টাডি বলছে, সিগারেটের এরকম ক্ষতিকর পার্টিকেলগুলো ৬ মাস পর্যন্ত থেকে যায়। স্মোকারদের মধ্যে অনেকসময় প্রবণতা থাকে, বাচ্চা আছে হয়তো বাড়িতে, তার সামনে না করে অন্য ঘরে স্মোক করা। কিন্তু পরে বাচ্চা ওই রুমে বা বারান্দায় গেলে তার একই ক্ষতি হচ্ছে। পার্টিকেলগুলো তার ক্ষতি করছে। ফলে একজন স্মোকার হয়তো নিজের অজান্তেই ক্যানসারের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন আরও মানুষকে। তাই ডাক্তারবাবুর কথায়, ‘সে নো টু টোব্যাকো, সে ইয়েস টু লাইফ।’
তামাকের ‘নিরাপদ’ মাত্রা
তামাকের নিরাপদ মাত্রা বলে কিছু নেই। এমন কোনও অঙ্ক নেই, কতটা তামাক খেলে ক্যানসারের ঝুঁকি হবে বা কতটায় হবে না। ‘ওর তো এত খেয়ে হয়নি, আমার কম খেয়েও হল কেন’– এরকম মন্তব্যের কোনও ভিত্তি নেই। তামাকে যে মোট ৭২টা কার্সিনোজেনিক উপাদান আছে, তা কখন কার কতটা ক্ষতি করবে, সেটার মাপকাঠি ঠিক করা মুশকিল।
তাই মুখ ও গলার ক্যানসার নিয়ে সতর্ক থাকতে গেলে তামাক এড়িয়ে চলতেই হবে। কারণ টোব্যাকোর সবটাই ক্ষতি। একটিও লাভ নেই। অনেকের ক্ষেত্রে এমনও দেখা যায়, ক্যানসার ধরা পড়লে, অপারেশন হওয়ার আগে আরও বেশি করে খেয়ে নেন সিগোরেট, আর তো খেতে পারবেন না, এই ভেবে। কিন্তু এর ফলে অপারেশনের প্রভাব কিন্তু খারাপ হয়। থেরাপির সাইড এফেক্ট বেড়ে যায়। তাই কোনও কারণেই সিগারেট খাওয়া ঠিক নয়।