শেষ আপডেট: 14th January 2022 09:45
পৌষের শেষ সপ্তাহ থেকে গ্রাম-শহর নির্বিশেষে সবার বাড়ি থেকে ভেসে আসত পিঠের সুবাস। এখনও অনেকে নিয়ম করে এই দিনটায় পিঠে তৈরি করেন। আবার অনেকেই ঘরে বাইরে কাজ সামলে সময় পান না পিঠে বানানোর। আবার এ প্রজন্মের অনেকে পিঠে খেতে ভালোবাসলেও সঠিক রেসিপিটা জানেন না। তাই মা ঠাকুমার হাতের পিঠেপুলির স্বাদ যাঁরা খুব মিস করছেন তাঁদের বলি, এখন কিন্তু অনেক নামী মিষ্টির দোকানেই এই পৌষসংক্রান্তির সময় পিঠেপুলি তৈরি হয়। দাম একটু বেশি মনে হলেও স্বাদ কিন্তু মন ভরাবে। হয়তো বাড়িতে তৈরি হলে যতোগুলো পাটিসাপটা বা দুধ্পুলি খেতেন ততগুলো কিনে খাওয়া সম্ভব না, কিন্তু ভালো স্বাদের দুটো পিঠেও তো অন্যরকম আনন্দ দেবে আপনাকে।কথা হচ্ছিল দক্ষিণ কলকাতার নামী মিষ্টি প্রতিষ্ঠান 'বলরাম মল্লিক রাধারমণ মল্লিক'-এর অন্যতম কর্ণধার সুদীপ মল্লিকের সঙ্গে। সুদীপ জানালেন প্রথম পিঠেপুলি তৈরির প্ল্যান তাঁদের মাথাতেই আসে। সেটা ১৯৯৫ সাল। সেই সময় অন্যান্য মিষ্টির প্রতিষ্ঠান তাঁদের এই পিঠেপুলি তৈরির সিদ্ধান্তটা ভালো চোখে দেখেননি। অনেকে বিদ্রূপও করেছেন। কিন্তু ক্রেতারা খুব খুশি হয়েছিলেন। তাঁদের চাহিদা পূরণ করতেই এই সময়টাতে নানা ধরনের পিঠে তৈরি করেন এঁরা।
আগে খুব বেশি ভ্যারাইটি ছিল না। পাটিসাপটা আর সেদ্ধ পুলি হত। এখন একুশ রকম পিঠে তৈরি করছেন বলরাম মল্লিকের মিষ্টির কারিগররা। ক্ষীরের পুরভরা পাটিসাপটা, নারকেলের পুরভরা পাটিসাপটা, গোকুল পিঠে, আসকে পিঠে, সেদ্ধ পুলি, দুধ পুলি, ক্ষীর পুলি, গুড় ভাপা পিঠে, রসবড়া, রাঙালুর পুলি, সরুচাকলি, মুগ সামলি ... আরও কত কী যে তা বলরাম মল্লিকের দোকানে গিয়ে খুঁজে নিতে হবে।
বলরাম মল্লিকের সব থেকে পুরনো দোকান ভবানীপুরে। তবে এখন অনেক জায়গাতেই এদের শপ রয়েছে। দাম কুড়ি টাকা থেকে শুরু।
দক্ষিণ কলকাতারই আর একটি নামী মিষ্টান্ন প্রতিষ্ঠান 'মিঠাই'। এখানেও বেশ কয়েক বছর ধরে এই সংক্রান্তির সময় পিঠেপুলি বিক্রি হয়। মিঠাইয়ের সুস্বাদু ভাজা পিঠে, দুধপুলি, পাটিসাপটা খেয়ে তৃপ্ত হন ক্রেতারা।
কথা হচ্ছিল মিঠাইয়ের অন্যতম কর্ণধার নীলাঞ্জন ঘোষের সঙ্গে। তিনি জানালেন, গত বছর থেকে তাঁরা এই সময়ের পিঠেপুলির জন্য একটা বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন। কয়েকটি সিনিয়র সিটিজেন এনজিও-র সঙ্গে তাঁরা টাই আপ করেছেন। এঁদের দিয়েই পিঠেপুলি তৈরি করানো হয়। এতে সিনিয়র সিটিজেনরা যেমন উৎসাহ পান, তেমন মানুষও মা ঠাকুমার হাতে তৈরি পিঠের স্বাদ ফিরে পান। এ বছর কোভিডের জন্য কন্টেনমেন্ট জোন বেড়ে যাওয়ায় সিনিয়র সিটিজেনদের তৈরি পিঠে নিয়ে আসা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। তবে দোকানে এলে নিমেষে শেষ হয়ে যাচ্ছে পিঠের সম্ভার। সিনিয়র সিটিজেনদের দিয়ে তৈরি করানো হলেও কোয়ালিটি ও হাইজিনের দিকটা খেয়াল রাখা হয় বলে জানা গেল। দাম কুড়ি টাকা থেকে শুরু।
এছাড়া বাঞ্ছারামও এই সময়ে কয়েকরকম পিঠে বিক্রি করে।