শেষ আপডেট: 28 February 2024 13:15
দ্য ওয়াল ব্যুরো: একটা নয়, দুটো নয়, এক মঞ্চে একসঙ্গে বারো কন্যার বিয়ে হয়ে গেল বাগবাজারে। শাঁখ উলু সানাই-বাদ গেল না কোনও কিছুই। ছিল খাওয়াদাওয়ার বিপুল আয়োজনও। সম্প্রতি এই বারো কন্যার বিবাহ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছিল উত্তর কলকাতার 'আমার অধিকার' সংস্থাটি।
• 'আমার অধিকার' কী ধরনের কাজ করে?
বাগবাজারের এই সংস্থা মেয়েদের স্বনির্ভর করে তোলার জন্য নানা ধরনের কাজ করে আসছে বহু বছর ধরে। গণবিবাহ তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। এটি ষোলো বছর আগে শুরু হয়েছিল তিনকন্যার বিয়ে দিয়ে। "যেসব বাবা মা অর্থের অভাবে মেয়ের বিয়ে দিতে পারেন না তাঁদের সাহায্যের জন্যই এই গণবিবাহের ব্যবস্থা। সারা বছর আমাদের দপ্তরে অনেক অ্যাপ্লিকেশন জমা পড়ে। তার থেকেই আমরা আলোচনার মাধ্যমে বেছে নিই বারোজনকে। কোভিডের বছরটা বাদ দিলে ষোলো বছর ধরে এই গণবিবাহ চলছে" বললেন এলাকার পৌর প্রতিনিধি, 'আমার অধিকার' সংস্থার সম্পাদক বাপী ঘোষ।
তিনি আরও বললেন, শুধু গণবিবাহ দেওয়া নয়, তাঁদের লক্ষ্য থ্যালাসেমিয়া মুক্ত সমাজ গড়ে তোলা। তাই বিয়ের আগে ছেলেমেয়ে উভয়েরই থ্যালসেমিয়া সংক্রান্ত রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। থ্যালাসেমিয়ার ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে 'আমার অধিকার' নানা রকম উদ্যোগ নেয় সারা বছর।
জানা গেল, এলাকার মানুষজন ও ব্যবসায়ীরা অনেকরকম ক্ষেত্রে সাহায্য করেন, যাতে বারোজন মেয়ের বিয়ে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। এবারে প্রত্যেকের জন্য ছিল খাটবিছানা,আলমারি, বাসনপত্র, বেনারসি শাড়ি, ধুতি-পাঞ্জাবি, চপ্পল থেকে টোপর, শাঁখা-পলা, ফুলের মালা, খুঁটিনাটি আরও অনেক কিছুই।
• বারো কন্যের সাজ 'শাকম্ভরী'র অন্দরে
সেই প্রথম বছর থেকে গণবিবাহর কনেদের সাজানোর দায়িত্ব নিয়েছেন 'শাকম্ভরী বডি আন্ড বিউটি ক্লিনিক'এর কর্ণধার এস্থেটিশিয়ান ও মেকআপ ডিজাইনার গৌরী বোস। বারোজন কনেকে সাজানোর অভিজ্ঞতা কেমন জানতে চাইলে গৌরী বললেন, "এখন তো স্মার্ট ফোনের দৌলতে গ্রামগঞ্জের মেয়েরা অনেকটা সচেতন। কিন্তু পনেরো বছর আগে তো তা ছিল না। তখন মাথার উকুন থেকে ফাটা ঠোঁট, এমনকী ত্বকের ঘা সামলে গণবিবাহের কনেদের সাজাতে হয়েছে। এখনও সমস্যা অনেক থাকে। যেমন তিন ঘন্টায় বারো জন কনেকে রেডি করতে হয়। ব্লাউজ মাপ মতো থাকে না। তাই চটপট অল্টার করে দিতে হয়। চপ্পলের মাপ নিয়েও সমস্যা থাকে। আসলে সব কিছুই তো ডোনেট করেন মানুষ। একটা অ্যাভারেজ মাপে আসে সবকিছু। আমি নিজে ভাল ব্র্যান্ডের কসমেটিক্স দিয়ে প্রত্যেকের মেকআপ করি এবং চন্দন পরাই। কপালের মাঝে লাল টিপের ওপর সোনার টিপ দিই। এটা আমার শাকম্ভরীর তরফে ওদের জন্য উপহার। "কনেদের বেনারসি বেশির ভাগই ছিল লাল,কয়েকটা ছিল নীল, মেরুন।
• নব দম্পতিদের শুভেচ্ছা জানাতে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রীও
সেদিন বাগবাজার বাটার মোড় থেকে শোনা যাচ্ছিল সানাইয়ের সুর। চারদিকে ম ম করছিল ফুলের সুবাস। পুরোহিতের মন্ত্র উচ্চারণে কন্যা সম্প্রদান, মালাবদল, শুভদৃষ্টি - সবই হয়েছিল নিয়ম মেনে। আশীর্বাদ করতে এসেছিলেন পুরীর মন্দিরের সেবায়েত দ্বৈতাপতি। শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন মন্ত্রী সুজিত বসু। আমার অধিকারের এই উদ্যোগে প্রথম থেকে পাশে থাকার জন্য স্থানীয় কাউন্সিলার বাপী ঘোষ সংবর্ধিত করলেন শাকম্ভরীর কর্ণধার গৌরী বোসকে। বিয়ের অনুষ্ঠানে কব্জি ডুবিয়ে খাওয়াদাওয়া করে খুশি হয়েছিলেন সকলে।