শেষ আপডেট: 18th June 2023 12:51
দ্য ওয়াল ব্যুরো: তখনও ঝাড়খণ্ড আলাদা রাজ্য হয়নি। বাঙালিরা সেই সময় হাওয়া বদল করতে পশ্চিমে যেতেন। অনেকেই আজও জানেন না, এই পশ্চিম কিন্তু পশ্চিম ভারত নয়। বরং বাংলার পশ্চিম দিক, অর্থাৎ ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গা বোঝানো হত এই শব্দের সাহায্যে। এই 'পশ্চিম'-এর হাওয়া বদলের একটি ঠিকানা হল ম্যাকলাস্কিগঞ্জ (Mccluskieganj)। অধুনা ঝাড়খণ্ডের অন্তর্গত এই জায়গাটি পালামৌ-রাঁচি-নেতারহাটের মতো অতটাও পরিচিত নয়। কিন্তু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পড়শি রাজ্যের এই ছোট্ট শহর টেক্কা দেবে শুধু দেশেরই নয়, বিদেশের বহু পর্যটনস্থলকেও।
একসময় ব্রিটিশ শাসকরা বাস করতেন এই জায়গায়। বস্তুত ম্যাকলাস্কিগঞ্জ নামকরণও তাঁদের জন্যই। আসলে ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চল বিভিন্ন খনিজ পদার্থের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই সুপ্রসিদ্ধ। ব্রিটিশ শাসকরাও সেই ভাণ্ডারের সন্ধান পেয়েছিলেন। আর তারপরেই তাঁদের ধ্যানজ্ঞান হয়ে দাঁড়ায় সেই খনিজ পদার্থ ভূগর্ভ থেকে উত্তোলন করে কলকাতা হয়ে বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানি করা। তার জন্যই কলকাতা পর্যন্ত রেলপথ তৈরি করা জরুরি হয়ে পড়েছিল। সেই রেললাইন তৈরির দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়েছিল ম্যাকলাস্কি নামে এক সাহেবের উপর। কাজের জন্য তিনি কলকাতা ছেড়ে এসে পাকাপাকিভাবে ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চলে থাকতে শুরু করেন। আস্তে আস্তে তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টাতেই বাসযোগ্য হয়ে ওঠে ছোট্ট গঞ্জটি। তাঁর নামেই জায়গার নাম হয় ম্যাকলাস্কিগঞ্জ। আজও এই জায়গায় ব্রিটিশ স্থাপত্যের নানা চিহ্ন ছড়িয়ে রয়েছে।
ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চলের সৌন্দর্যের কথা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিভিন্ন গল্প-উপন্যাসে বারবার ধরা পড়েছে। তাঁর কালজয়ী উপন্যাস আরণ্যকের পটভূমিও এই মালভূমি অঞ্চলই। সেই ছোটনাগপুরের অন্তর্গত ম্যাকলাস্কিগঞ্জ যেন সৃষ্টিকর্তার নিপুণ হাতে তৈরি। শাল-শিমুল-পিয়ালের জঙ্গলের বুক চিরে চলে গেছে লাল মোরামের রাস্তা। রুক্ষ প্রকৃতির মাঝে শান্তি দেবে একাধিক ঝর্না, ঝিরঝির করে বয়ে চলা নদী। রয়েছে ম্যাকলাস্কি সাহেবের আমলের একাধিক বাংলো, কটেজ, যা দেখলেই ব্রিটিশ স্থাপত্যশৈলী চোখে পড়বে। এখানে রাতেও প্রকৃতিও অপরূপ! নিবিড় জঙ্গলের উপর দিয়ে খেলে যায় জ্যোৎস্না, সেই মায়াবী আলোয় চিকচিক করতে থাকে নদীর জল। রাত বাড়লে জল খেতে নেমে আসে বন্যপ্রাণীরা। সেই দৃশ্য একবার দেখলে ভোলার নয়।
কী ভাবছেন, নাগরিক কোলাহল থেকে দূরে নিঃসঙ্গ আদিম প্রকৃতির মাঝে দুটো দিন কাটিয়ে আসবেন নাকি? হাতে সময় থাকলে ম্যাকলাস্কিগঞ্জে দুদিন কাটিয়ে চলে যেতে পারেন রাঁচি কিংবা নেতারহাট। ঘুরে আসতে পারেন পত্রাতু ভ্যালি থেকেও।
কীভাবে যাবেন
হাওড়া থেকে রাঁচিগামী যে কোনও ট্রেনে উঠে নামতে হবে রাঁচি স্টেশনে। সেখান থেকে ম্যাকলাস্কিগঞ্জের দূরত্ব ৬৪ কিলোমিটার। স্টেশন থেকে গাড়িতে যেতে পারবেন। এছাড়া হাওড়া থেকে ছাড়ে শক্তিপুর এক্সপ্রেস। সেই ট্রেন আপনাকে নামিয়ে দেবে ম্যাকলাস্কিগঞ্জে।
কোথায় থাকবেন
বর্তমানে এই ছোট্ট শহরে পর্যটাদের জন্য একাধিক হোটেল, রিসর্ট গড়ে উঠেছে। আগে থেকে বুকিং করে যাওয়া ভাল।
উত্তরপ্রদেশে লুকিয়ে আছে অপূর্ব এই সৈকত! জলের উপর ট্রি হাউসে কাটিয়ে আসুন ছুটি