শেষ আপডেট: 24th February 2024 15:54
দ্য ওয়াল ব্যুরো: যে সমুদ্র সৈকতে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় দেখা যায়, সেখানে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখা যায় না। একই সঙ্গে উল্টোটাও বাস্তব। ভারতে এর ব্যতিক্রম বলতে শুধু রয়েছে কন্যাকুমারী। দেশের দক্ষিণতম প্রান্তে বঙ্গোপাসাগর ও মিলেছে ভারত সাগরের সঙ্গে সেখানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দুই-ই দেখা যায়। পড়শি বাংলাদেশেও এমনই এক বেলাভূমি এখন ক্রমশই পর্যটনের মানচিত্রে উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। তার নাম কুয়াকাটা (Kuakata Sea Beach)।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই পর্যটন কেন্দ্র ‘সাগর কন্যা’ নামেও পরিচিত (Kuakata tourist spot)। কুয়াকাটা আড়ে বহরে খুব বড় নয়। পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় রয়েছে এই ছোট্ট বেলাভূমি। ইউনিয়নের নাম লতাচাপলী। ঢাকা থেকে গাড়িতে এর দূরত্ব প্রায় ৩৮০ কিলোমিটার। তবে বরিশাল বা ঝালোকাঠি থেকে তুলনামূলক ভাবে এর দূরত্ব কম। ১০৮ কিলোমিটার।
কুয় শব্দটি এসেছে কূপ থেকে। প্রচলিত লোককথা হল, মোঘলরা বার্মা থেকে আরাকানদের খেদানো শুরু করলে তারা এখানে এসে ওঠে। তার পর বসবাস শুরু করে। কূয়াকাটায় জলের সমস্যা ছিল। তাই আরাকানরা প্রচুর কুয়ো খুঁড়েছিল। সেই কারণেই নাম হল কুয়াকাটা।
বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকত বলতে কক্স বাজারের কথাই সবার আগে মাথায় আসে। কক্স বাজারে সমুদ্র সৈকত গোটা বিশ্বে সবচেয়ে দীর্ঘ। ১২০ কিলোমিটার। কুয়াকাটা তার চেয়ে অনেক থোট। সৈকতের দৈর্ঘ্য মাত্র ১৮ কিলোমিটার। কিন্তু এরই মধ্যে যেন মণি মানিক্য ভরে রয়েছে। অসামান্য তার নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য। বাংলাদেশের এই একটি মাত্র সৈকত থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দুটোই খুব ভাল করে দেখা যায়। সূর্যোদয় দেখা যায় বেলাভূমির গঙ্গামতির বাঁক থেকে। আর পশ্চিম সৈকত থেকে দেখা যায় সূর্যাস্ত।
কুয়াকাটার পুরনো কুয়োগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটিতে এখনও জল রয়েছে। বেলাভূমির কাছে রাখাইন পল্লী কেরানি পাড়ার মোড়ে একটা বৌদ্ধ মন্দিরের কাছে একটি প্রাচীন কুপ রয়েছে। আরাকানদের খনন করা সেই কূপ অবশ্য কয়েকবার সংস্কার করেছে স্থানীয় প্রশাসন। এর কাছে রয়েছে একটি বৌদ্ধ মন্দির। যার নাম সীমা বৌদ্ধ মন্দির। সেই মন্দিরে রয়েছে সাঁইত্রিশ মন ওজনের একটি অষ্ট ধাতুতে তৈরি ধ্যানস্থ বুদ্ধমূর্তি।
তবে সীমা বৌদ্ধ মন্দিরের চেয়ে আরও বড় একটি মন্দির রয়েছে কাছেই। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে তার দূরত্ব মাত্র ৮ কিলোমিটার। সেখানে মিশ্রিপাড়ায় রাখাইন আদিবাসীদের তৈরি বৌদ্ধ মন্দিরে যে মূর্তিটি রয়েছে তা হল, উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় বুদ্ধ-মূর্তি।
ঢাকা থেকে কুয়াকাটা অনেক ভাবেই যাওয়া যায়। তবে বেশ মজাদার যাত্রা হল লঞ্চে করে যাওয়া। ঢাকার সদরঘাট থেকে প্রথমে লঞ্চে করে পটুয়াখালী পৌঁছতে হবে। সেখান কুয়াকাটার বাস পাওয়া যায়। ঢাকা-পটুয়াখালী রুটে চলে এমভি দ্বীপরাজ, এমভি সৈকত লঞ্চ। এই ধরণের লঞ্চে ফার্স্ট ক্লাসে টুইন শেয়ারিং কেবিনের ভাড়া হাজার টাকার মতো (বাংলাদেশি টাকা)। আর পুটুয়াখালী থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত বাস ভাড়া ৬০-৭০ টাকা।
আবার ঢাকা থেকে লঞ্চে করে বরিশাল পৌঁছে সেখান থেকে বাসে চেপে কুয়াকাটায় যাওয়া যায়।
ঢাকা কুয়াকাটা পর্যন্ত ডাইরেক্ট বাসও (Kuakata Dhaka Bus) রয়েছে। কমলাপুর বিআরটিসি বাস স্ট্যান্ড থেকে রোজ সকাল-সন্ধেয় সরকারি পরিবহণের বাস ছাড়ে।
কুয়াকাটায় থাকার জন্য সরকারি বেসরকারি ভাল ব্যবস্থা রয়েছে। সামর্থ্য অনুযায়ী সেই সব হোটেল (Kuakata Hotel) বা অতিথিশালায় আরামে থাকা যায়।