শেষ আপডেট: 20th June 2023 14:12
দ্য ওয়াল ব্যুরো: দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া/
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া/
একটি ধানের শিষের উপর/
একটি শিশির বিন্দু
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কবিতা যে আজকের দিনেও কতখানি প্রাসঙ্গিক, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। চোখের সামনেই অনাদরে অবহেলায় পড়ে থাকে কতই না অপূর্ব জায়গা। নেহাত ঘরের কাছে বলেই সেসব জায়গায় যাওয়া হয়ে ওঠে না কখনও। জানেন কি, কাছেপিঠেই আছে এমন একটি গ্রাম, যেটি সারাক্ষণই গিটারের টুংটাং শব্দে মুখর হয়ে থাকে। তাহলে কি এই গ্রামের মানুষজন গিটার বাজাতে ভালবাসেন? ৬ তারে সুর তোলেন তাঁরা দিনভর? না, তা নয়। বরং এই গ্রামের বাসিন্দারা গিটার তৈরির সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের তৈরি বাদ্যযন্ত্র শুধু দেশে নয়, বিদেশেও বিক্রি হয়।
এই গ্রামটি হল উত্তর ২৪ পরগনার কাউগাছি। শ্যামনগর এলাকার এই গ্রাম রীতিমতো বাংলার গিটার গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এখানকার প্রায় প্রত্যেকটি বাড়ির বাসিন্দারারাই এই বাদ্যযন্ত্র তৈরির সঙ্গে যুক্ত। কেউ বানান গিটারের ফ্রেটবোর্ড, অর্থাৎ গলার অংশটি, তো কেউ বানান গিটারের মূল গোলাকার অংশ। তাই বাড়িতে বাড়িতে ঝুলতে দেখা যায় গিটারের বিভিন্ন অংশ। প্রাথমিকভাবে যদিও গ্রামে গিটার কারখানা ছিল হাতেগোনা। তখন মূলত দমদমেই গিটার তৈরি হত। কাউগাছিতে তখন শুধুই পালিশের কাজই হত।
তখন দমদমের কারখানাতেও কাজ করতেন কাউগাছির শ্রমিকরা। সেখান থেকেই গিটার তৈরির কৌশল শিখে নেন তাঁরা। তারপর তাঁদের থেকে সেই পদ্ধতি শিখে নেন বাকিরাও। ধীরে ধীরে এই কাজে পটু হয়ে ওঠেন গ্রামের প্রায় প্রতিটি পরিবার। এখানে ৫-৬টি আলাদা ধরনের গিটার তৈরি করা হয়। তার জন্য ব্যবহার করা হয় বিশেষ ঘোড়ানিম কাঠ, যা আনানো হয় অসম থেকে।
গিটার তৈরি করা হয় মূলত দুটি আলাদা অংশকে জুড়ে। আগে তৈরি হয় ফ্রেটবোর্ড অর্থাৎ গলার অংশ। তারপর তৈরি হয় বডি, অর্থাৎ মূল অংশট। দুটি জিনিস একসঙ্গে জুড়ে দিলেই কাঠামো তৈরির কাজ শেষ। তারপর পালিশ এবং রঙ করা হয়। সবশেষে আসে প্রাণ প্রতিষ্ঠা, অর্থাৎ তার জোড়া। স্ট্রিং লাগানো হলেই কাজ শেষ। সব কাজ শেষ হলেই সেই গিটার বেরিয়ে পড়ে বাংলা এবং ভারতের বিচ্চিন্ন জায়গায় তো বটেই, সেই সঙ্গে নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কার মতো দেশের উদ্দেশে।
আরব সাগরের নীল নির্জনে কাটিয়ে আসুন কয়েকটা দিন, রোম্যান্সের ডালি সাজিয়ে রেখেছে প্রকৃতি