ঘুমের সময় ও ঘুমের 'কোয়ালিটি'-র ওপরেই জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
শেষ আপডেট: 3rd May 2024 18:29
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কতটা পথ পেরোলে তবে পথিক হওয়া যায়, এ' প্রশ্নের উত্তর তো এখনও পাওয়া যায়নি। কিন্তু কতক্ষণ ঘুমোলে সুস্থ থাকা যায় (How Much Sleep Do We Need), আপাতত এই প্রশ্নটাই এই মুহূর্তে অনেক বেশি জরুরি। মোটের ওপর ডাক্তাররা বলেন, গড়ে সাত ঘণ্টা ঘুম প্রতিটি মানুষের দরকার। কিন্তু মাত্রাটা প্রয়োজন অনুযায়ী কম-বেশি হয় সবারই। কারোর লাগে আট ঘণ্টা, কারোর আবার ঘন্টাপাঁচেকেই হয়ে যায়।
"আসলে ঘুম নয়, ঘুমের 'কোয়ালিটি'-টাই আসল", বলছেন হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের বিশেষজ্ঞ এরিক ঝৌ। ঘুমের তারতম্য হয়। কেউ শুয়েই গভীর ঘুমে ডুবে যান। কারোর আবার ঘুম পাতলা। রাতে একাধিকবার উঠতে হয়। এই ফারাকটাই সবার আগে বুঝতে হবে। "যদি ঘুম থেকে উঠে মনে হয়, একেবারে ঝরঝরে লাগছে, তাহলে যদি ঘন্টাপাঁচেকও ঘুম হয়, তাতেও দিব্যি ঠিকঠাক ঘুম হয়েছে ধরতে হবে।"
ভাল ঘুমের ওপর আসলে অনেক কিছুই নির্ভর করে। বিশেষ করে যাদের হৃদরোগের সমস্যা, ডায়াবেটিস, রক্তচাপজনিত সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ভাল ঘুম হওয়াটা খুব জরুরি। এমনকি ভাল ঘুমের ওপর মানসিক স্বাস্থ্য, স্ট্রেস, ডিপ্রেশন, অ্যাংজাইটির মত সমস্যাও নির্ভর করে। অনেক সময়েই দেখা যায়, যারা মানসিক চাপে ভোগেন, তাঁদের ঘুমের সমস্যা হয়। তাছাড়া রাতে ভাল ঘুম না হলে দিনে ঝিমধরা ভাব, গা ম্যাজম্যাজ করার সমস্যাও খুব বেশিমাত্রায় দেখা যায়। যেগুলো অফিসে থাকলে অবস্থা আরও দুর্বিষহ করে তোলে।
ঘুমের পিছনে মেলাটোনিন নামক একজাতের হরমোনের বিশেষ ভূমিকা আছে। চিকিৎসকরা বলছেন, সাধারণত চারপাশ অন্ধকার হলে মস্তিষ্ক এই হরমোন নিঃসরিত করে। যার ফলে শরীরে ঘুম ঘুম ভাব তৈরি হয়। অত্যন্ত জরুরি এই হরমোনের নিঃসরণের ওপরেই 'শরীর-ঘড়ি' বা 'বডি-ক্লক' নির্ভর করে থাকে। অর্থাৎ, দিনের একটা বিশেষ সময়ে ঘুম চলে আসে, যা আনুষঙ্গিক শারীরবৃত্তীয় নানা কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। বয়স বাড়লে এই হরমোন ক্রমশ কমে আসে। সেইজন্যই দেখা যায়, অপেক্ষাকৃত বেশি বয়সিরা চট করে সাতসকালে ঘুম থেকে উঠে পড়তে পারেন। কিন্তু অল্পবয়সিরা বেলা অবধি ঘুমোয়।
ঘুম ভাল না হলে ভাল করার উপায় কী? সহজ উপায় বলছেন ডাক্তাররা। প্রথমত, দিনে না ঘুমোনো। আমাদের অনেকেরই দুপুরে ভাতঘুমের অভ্যেস আছে। কিন্তু বাড়ি হোক বা অফিস, দরকার দুপুরে আধঘন্টার বেশি কোনও অবস্থাতেই না ঘুমোনো। পাশাপাশি, রাতে একটা নির্দিষ্ট ঘুমের সময় বজায় রাখা। ঠিক ঘড়ি ধরে একটা সময় আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়ার অভ্যেস করতে পারলে ঘুমের সমস্যা অনেকটাই কাটানো যেতে পারে। পাশাপাশি, শারীরিক কাজ বাড়াতে হবে। অফিসে বসে কাজ করতে হলে অন্তত মাঝে বা বাড়ি ফেরার পথে একটু হাঁটাহাঁটি করা অত্যন্ত জরুরি। অনেকে বিকেলে বাড়ি ফিরে জিম করেন। ভাল ঘুমের পক্ষে জিমে গা ঘামানোও অতীব কার্যকর।
তবে ঘুম ভাল না হওয়া নিয়ে বেশি চিন্তা করতেও বারণ করছেন ডাঃ ঝৌ। তাঁর সাফ কথা, "এক-আধদিন ভাল ঘুম না-ই হতে পারে। সেটাই স্বাভাবিক। আমাদের কি সবদিন সমান যায়? হয়ত অফিসে ঝামেলা হল। বাড়িতে মনোমালিন্য হল। পছন্দের ফুটবল ম্যাচ দেখতে গিয়ে রাত জাগতে হল। অনুষ্ঠানে বা পার্টিতে একটু বেশি খানাপিনা হল। এরকম হলে ঘুম আসতে দেরি হতেই পারে। সেসব নিয়ে বেশি ভাববেন না। দরকার, অন্তত এক সপ্তাহের চারদিন ভাল ঘুমোনো। তবেই ঠিক রুটিনে আসা যাবে।"