Advertisement
Advertisement
শেষ আপডেট: 2 November 2023 18:49
রুবি বিশ্বাস
এস্থেটশিয়ান, বিউটি থেরাপিস্ট
ইচ্ছে থাকলেও অনেক সময় কাজের চাপে বিউটিপার্লার যাওয়া হয়ে ওঠে না। বাড়িতে বসে কীভাবে ত্বকের নিয়মিত পরিচর্যা করলে নিদাগ ও কমনীয় ত্বকের অধিকারী হওয়া যায় সেই কথাই জানাই আপনাদের।
● নিয়মিত কী ধরনের পরিচর্যা করতে হবে?
ত্বকের ধরন অনুযায়ী ক্লিনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজিং এবং সানপ্রটেকটিভ ক্রিম বা লোশন প্রতিদিন ব্যবহার করা ত্বক পরিচর্যার অঙ্গ। ঘরে থাকলেও বারান্দা বা জানালা দিয়ে ঘরে রোদ আসে। ফলে ঘরের মধ্যেও সূর্যের ক্ষতিকর ইউভিরে-র প্রভাব থেকেই যায়। সানস্ক্রিন ক্রিম বা লোশন প্রতিদিন ত্বকের যত্নে ব্যবহার করা দরকার। বেশি পরিমাণ জল ও সাবান ব্যবহারে ত্বকের যে নিজস্ব স্বাভাবিক তেলের ভাগ থাকে তা কমে যায়। তাই দুবারের বেশি স্নান করা উচিত নয়।
ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়ার পর তোয়ালে দিয়ে মুখ হালকা হাতে আলতোভাবে চেপে চেপে মুখ মুছে নিতে হবে। যাতে জল বেরিয়ে মুখ শুকনো হয়ে যায়। তোয়ালে দিয়ে খুব ঘষে মুখ মোছা কখনই উচিত নয়। এতে ত্বকের কোমলতা নষ্ট হয়ে যায়। ফেসওয়াশ সকালে এবং রাতে শোয়ার আগে একবার করে ব্যবহার করবেন। যাঁদের হাতের কাছে ফেসওয়াশ নেই তারা ঘরেই নিজের ত্বকের ধরন অনুযায়ী ক্লিনজার বানিয়ে নিতে পারেন।
● সব ধরনের ত্বকের জন্য ক্লিনজার
• অয়েলি স্কিনের ক্ষেত্রে হাফ কাপ গরম জলে টি ট্রি এসেনশিয়াল অয়েল পাঁচ ফোঁটা দিয়ে তারমধ্যে জোজোবা বা ক্যাস্টর অয়েল এক টেবিল চামচ দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে তুলো দিয়ে মুখে লাগিয়ে দু'মিনিট পর তা মুছে নিন।
• অয়েলি স্কিনে গ্লো আনতে মধু এক চা চামচ ও কাঁচা দুধ দু চা-চামচ ভালো করে মিশিয়ে হালকা হাতে মুখে মাসাজ করে তারপর ঈষদুষ্ণ জলে ধুয়ে ফেলতে হবে।
• যাঁদের সেনসেটিভ স্কিন, তাঁরা অ্যালোভেরা জেল এক টেবিল চামচ, ল্যাভেন্ডার অয়েল পাঁচ ফোঁটা, মধু কয়েক ফোঁটা মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে দু'মিনিট পর মুখ ধোবেন।
• যাদের ড্রাই স্কিন তাঁরা ঘরে পাতা টক দই দু চা-চামচ, অর্গানিক মধু এক চা চামচ ও অলিভ অয়েল এক চা চামচ একত্রে মিশিয়ে হালকা হাতে মুখে মাসাজ করে দু'মিনিট পর ঈষদুষ্ণ জলে মুখ ধোবেন। এছাড়াও এধরনের স্কিনের ক্ষেত্রে ক্লিনজার হিসাবে আনারসের রস ও বেকিং সোডার মিশ্রণ বিশেষ উপকারী। খেয়াল রাখা দরকার ক্লিনজিং করার আগে অবশ্যই মুখ জল দিয়ে ধুয়ে নেওয়া উচিত।
● ঘরে টোনার তৈরি করবেন কী করে?
ক্লিনজিং-এর পর টোনার ব্যবহার করতে হয়। এটি স্কিনকে টানটান রাখতে সাহায্য করে। বাড়িতে যদি টোনার না থাকে সেক্ষেত্রে গোলাপজল ব্যবহার করা যেতে পারে।
• তরমুজ, শশাতে খুব বেশি জলের পরিমাণ থাকে। একটি পাত্রে জল নিয়ে সেটি গরম হয়ে ফুটে উঠলে তার মধ্যে কয়েক টুকরো তরমুজ দিয়ে ঢিমে আঁচে পাঁচ-ছ মিনিট রেখে দিতে হবে। এরপর এটি ঠান্ডা করতে হবে। পরে তরমুজের টুকরো জল থেকে তুলে নিয়ে ব্লেন্ডারে দিয়ে ব্লেন্ড করতে হবে। তারপর যে জলে তরমুজ ফোটানো হয়েছে সেই জলের কিছু অংশ ব্লেন্ডারে দিয়ে তরমুজের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে তার মধ্যে এক চিমটে কর্পূর দিয়ে ভালো করে মিশ্রণটি নাড়িয়ে একটি স্প্রে বোতলে ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। এটি টোনার হিসাবে ব্যবহার করলে উপকার মিলবে।
• একই পদ্ধতিতে শশার টোনার বাড়িতে তৈরি করতে পারেন। শুধু শশার ক্ষেত্রে কর্পূরের বদলে একটু গোলাপজল মিশিয়ে স্প্রে বোতলে ভরে ফ্রিজে রেখে দিন। এই দু'টি টোনার ত্বকের জন্য ভাল। এটি চার-পাঁচ দিন ফ্রিজে রাখা যেতে পারে।
● কীভাবে তৈরি করবেন ময়েশ্চারাইজার ?
ক্লিনিং টোনিংয়ের পর ময়েশ্চারাইজার লাগানো অত্যন্ত জরুরী। ইচ্ছে করলে ঘরেই ময়েশ্চারাইজার তৈরি করে নিতে পারেন।
• অয়েলি স্কিনের ক্ষেত্রে জোজোবা অয়েল অর্ধেক চা কাপ, স্যানডেলউড অয়েল পাঁচ ফোঁটা, ফ্র্যানকিনসেনস এসেনশিয়াল অয়েল পাঁচ ফোঁটা মিশিয়ে বোতলে রেখে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। জোজোবা অয়েল খুব হালকা যা সহজে স্কিনে মিশে যায়। একেবারেই তেলতেলে নয়। এটি অ্যান্টিসেপটিক ও অ্যান্টব্যাকটেরিয়াল। তাই ব্রণ অ্যাকনে কমিয়ে দেয়।
• নর্মাল টু ড্রাই স্কিনের ক্ষেত্রে অ্যালোভেরা জেল অর্ধেক চা চামচ, কোকোনাট অয়েল এক টেবিল চামচ, আমন্ড অয়েল এক টেবিল চামচ, জিরেনিয়াম এসেনশিয়াল অয়েল পাঁচ ফোঁটা, ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েল পাঁচ ফোঁটা, স্যানডেলউড এসেনশিয়াল অয়েল পাঁচ ফোঁটা মিশিয়ে ব্যবহারে ত্বকে বাড়তি জৌলুস ফিরে আসে।
● স্ক্র্যাবার তৈরির সহজ উপায়
• যাঁদের অয়েলি স্কিন তাঁরা সপ্তাহে তিন দিন স্ক্রাবিং করতে পারে। কিন্তু ড্রাই ও সেনসেটিভ স্কিনের ক্ষেত্রে সপ্তাহে এক থেকে দুদিন স্ক্রাবিং করাই যথেষ্ট। আমন্ড বাদাম ছ'টা সারারাত জলে ভিজিয়ে পরের দিন ভালো করে বেটে নিয়ে তার মধ্যে সামান্য লেবুর রস ও এক চিমটি বেকিং পাউডার মিশিয়ে আপ অ্যান্ড আউট ওয়ার্ড স্ট্রোকে মুখে লাগাতে হবে। দু থেকে পাঁচ মিনিট রেখে নববই শতাংশ শুকিয়ে গেলে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
নর্মাল টু ম্যাচিওরড স্কিনের ক্ষেত্রে ওটস পাউডার এক টেবিল চামচ গরম দুধে মিশিয়ে তার মধ্যে অলিভ অয়েল এক চা চামচ দিয়ে ব্রাশ বা হাতের সাহায্যে আপ অ্যান্ড আউট ওয়ার্ড স্ট্রোকে মুখে লাগাতে হবে। নব্বই শতাংশ শুকিয়ে গেলে হালকা হাতে মাসাজ করে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
● ঘরোয়া ফেসপ্যাক খুব উপকারী
স্ক্রাবিংয়ের পর সপ্তাহে এক থেকে দুদিন ফেসপ্যাক লাগালে স্কিনের ঝলমলে ভাব ফিরে আসে।
• নর্মাল টু ড্রাই স্কিনের ক্ষেত্রে পুদিনা পাতা ও কাঁচা হলুদ বাটার সঙ্গে দই মিশিয়ে মুখে প্যাক লাগিয়ে সোজা হয়ে শুয়ে পা দুটো বালিশের নিচে রাখলে আরাম মিলবে।
• ঠান্ডা চায়ের লিকার অথবা শশার রসে ভেজানো চৌকো করে কাটা তুলো চোখে আইপ্যাড হিসাবে তখন লাগাতে হবে। এতে চোখের ক্লান্তি দূর হয়। ফেসপ্যাক মুখে লাগিয়ে একটু রিলাক্স মুডে থাকার চেষ্টা করতে হবে। ঘরে সফট মিউজিক চালিয়ে রাখলে একটা সুদিং এফেক্ট আসবে।
• যাদের ম্যাচিওরড থেকে ডাল স্কিন সেক্ষেত্রে টকে যাওয়া ঘরের দুধের মধ্যে তিন-চারটি জাফরানের সুতো, মধু কয়েক ফোঁটা, কনফ্লাওয়ার মিশিয়ে ফেসপ্যাক হিসেবে একই পদ্ধতিতে ব্যবহার করলে আশাপ্রদ ফল মিলবে। এছাড়া অয়েলি তথা ব্রণও আছে এমন ধরনের স্কিনের ক্ষেত্রে বেসন এক টেবিল চামচ, স্যানডেলউড পাউডার অর্ধেক চা চামচ, দই এক চা চামচ ও গোলাপজল একত্রে পেস্ট তৈরি করে ফেসপ্যাক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
• অয়েলি স্কিনে পাতিলেবুর রস ও মধু সমপরিমাণ নিয়ে তার সঙ্গে পাকা পেঁপের ভেতরের অংশ মিশিয়ে ফেসপ্যাক হিসেবে ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।
Advertisement
Advertisement