শেষ আপডেট: 6th July 2023 14:43
দ্য ওয়াল ব্যুরো: শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা, যে ঋতুই হোক না কেন, বাঙালির ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়তে বাধা নেই। তাদের নাকি পায়ের তলায় সর্ষে। তাই এই মরশুমে ঝমঝমে বৃষ্টিতে কটা দিন ছুটি কাটানোর সুযোগ পেলে তা হাতছাড়া করতে চান না কেউই। ধস এবং রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে অনেকেই বর্ষায় পাহাড়ে ঘোরার পরিকল্পনা বাতিল করে দেন। আর সমুদ্র তো প্রায়ই যাওয়া যায়। তাই এবারের বর্ষায় ঘুরে আসুন এমন একটি জায়গা থেকে, যেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য খোলতাই হয় মূলত বর্ষাতেই।
এই জায়গাটি হল দুধসাগর জলপ্রপাত (Dudhsagar falls)। শুধু ভারত নয়, গোয়ার এই জলপ্রপাতটি সারা পৃথিবীর মধ্যেই অন্যতম বিখ্যাত একটি জলপ্রপাত। ৩০০ মিটারেরও বেশি উচ্চতা থেকে মাণ্ডবী নদী আছড়ে পড়ছে গভীর গিরিখাতে। পাথরে ক্রমাগত ধাক্কা খেতে খেতে নামার দরুন এই ঝর্নার জলে ফেনা তৈরি হয়ে যায়। সফেন সেই জলরাশি দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন উপর থেকে কেউ দুধ ঢেলে দিয়েছে। সেই কারণেই এই জলপ্রপাতের এহেন নামকরণ।
তবে দুধসাগর নামকরণের পিছনে অন্য একটি ইতিহাসও রয়েছে। লোকমুখে শোনা যায়, বহু বছর আগে, রাজতন্ত্রের যুগে এই জায়গাটি শাসনের দায়িত্বভার ছিল এক রাজার হাতে। এখন যেখানে জলপ্রপাতটি রয়েছে, তখন তাঁর প্রাসাদটি ছিল ঠিক সেখানে। রাজার আদরের মেয়ে সেই প্রাসাদ লাগোয়া সরবরে স্নান করতেন। টলটলে জলে ফুটে থাকত পদ্ম, সেখানেই স্নান শেষে সোনার পাত্রে দুধ পান করতেন রাজকন্যা। একদিন নাকি সরোবর সংলগ্ন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে শিকারে যাচ্ছিলেন এক রাজকুমার। রাজকন্যা ও তাঁর সখীদের হাসির আওয়াজ শুনে গাছের আড়াল থেকে লুকিয়ে তিনি বিষয়টি দেখতে যান। তখনই অপরূপ সুন্দরী রাজকন্যার স্নানদৃশ্য দেখতে দেখতে মোহিত হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেই ঘটনা চোখে পড়ে যায় রাজকুমারীর। বিবস্ত্র স্নানরত রাজকন্যা লজ্জা নিবারণের জন্য সোনার পাত্রে রাখা দুধ খাওয়ার বদলে ঢেলে দিয়েছিলেন নিজের গায়ে। শুভ্র পর্দার মতো সেই দুধ রাজকন্যার গা বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিল। সেই থেকেই নাকি ঝর্নার এমন নাম রাখা হয়েছিল।
দুধসাগর জলপ্রপাত এতটাই অপরূপ যে তা দেখার জন্য যে কোনও সময়েই যেতে পারেন। কিন্তু বর্ষায় এই ঝর্নার চেহারা হয় দেখার মতো। নাগাড়ে বৃষ্টিতে জলস্তর বাড়ে মাণ্ডবী নদীর। আর দুধসাদা জলধারা তখন আরও পুরুষ্টু, আরও উচ্ছ্বল হয়ে প্রবল বেগে নামতে থাকে জঙ্গল আর শ্যাওলামাখা পাহাড়ের গা বেয়ে। দিগন্তে ধূসর আকাশ, আর সামনে বিশালাকার পাহাড়ের উপর থেকে নীচে আছড়ে পড়ছে যেন ঘন দুধ! সেই দৃশ্য দেখতে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশ বিদেশের পর্যটকরা ভিড় জমান এখানে।
পঞ্জিম থেকে দুধ সাগর জলপ্রপাতের দূরত্ব সড়কপথে ৬০ কিলোমিটার। দক্ষিণ বেলাগাভি থেকে দূরত্ব ৮০ কিলোমিটার। ৩০ মিটার চওড়া এই জলপ্রপাতটি পশ্চিমঘাট পর্বতমালার কোলে ভগবান মহাবীর স্যাংচুয়ারি এবং মল্লেম জাতীয় উদ্যানের মাঝে অবস্থিত। সেই কারণেই ঝর্না সংলগ্ন এলাকার জীববৈচিত্র অসাধারণ। ট্রেকিং করতে করতে পৌঁছে যেতে পারবেন ঝর্নার একেবারে পাদদেশে। কুলেম থেকে হাঁটা শুরু করে যাওয়া যেতে পারে এখানে। ১১কিলোমিটার রাস্তা যেতে সময় লাগে ৫ ঘণ্টা মতো। এছাড়া রেলপথ বরাবর সোনাউলিম স্টেশন পর্যন্ত গিয়ে সেখান থেকে মাড রোড ধরেও পৌঁছানো যায় প্রপাতের পায়ের কাছে।
দুধসাগর জলপ্রপাত তো অবশ্যই দেখবেন, তবে সেই সঙ্গে ভগবান মহাবীর অভয়ারণ্যে জিপ সাফারি করতে ভুলবেন না। বন্যপ্রাণীদের এমনভাবে চাক্ষুষ করার সুযোগ সচরাচর পাওয়া যায় না। এই এলাকাতেই বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি মশলার চাষ হয়। ঘুরে আসতে পারেন সেই মশলা চাষের জায়গা থেকেও।
কীভাবে যাবেন: গোয়ার পঞ্জিম, কালাঙ্গুট, মুম্বই, বেঙ্গালুরু সহ ভারতের যে কোনও জায়গা থেকেই দুধসাগর জলপ্রপাতে যাওয়া যায়। আগে রেলপথে জলপ্রপাত সংলগ্ন স্টেশনে নামার ব্যবস্থা থাকলেও বর্তমানে সেই ব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়েছে ভারতীয় রেল। তাই এখন দুধসাগর জলপ্রপাত দেখতে যেতে চাইলে আগে পৌঁছে যেতে হবে গোয়ার মল্লেম কিংবা কুলেম গ্রামে। এখান থেকে জিপ ভাড়া নিয়ে যাওয়া যেতে পারে এখানে। তবে সেই গাড়ি আপনাকে নামিয়ে দেবে জলপ্রপাতের পাদদেশ থেকে এক কিলোমিটার আগেই। সেখান থেকে হেঁটে পৌঁছাতে হবে ঝর্নায়। প্রপাতের জলে স্নান করারও ব্যবস্থা রয়েছে।
কোথায় থাকবেন: দুধসাগর জলপ্রপাত এলাকার আশেপাশে সেভাবে থাকার ব্যবস্থা নেই। থাকতে হবে গোয়াতেই। ঝর্নার কাছাকাছি এলাকায় পানীয় জলও পাওয়া যায় না। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানীয় জল সঙ্গে রাখলে ভাল।
সেই ফুলের দল! শাপলার জঙ্গল যেন মায়াকানন, রিমঝিম বৃষ্টিতে নৌকাবিহার করবেন?