সিঙ্গাপুরে অর্চনার বাঙালি রান্না রীতিমত সাড়া ফেলেছে প্রবাসী বাঙালি মহল্লায়।
শেষ আপডেট: 21st May 2024 16:51
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পুঁচকে একচিলতে দ্বীপ। অথচ তাতেই পৃথিবীর অন্যতম পেল্লায় শহর! আজ দুনিয়ার অন্যতম তাবড় শহর ও বাণিজ্যকেন্দ্র বলে পরিচিত সিঙ্গাপুর। ভাবুন দিকি! বেড়াতে গিয়েছেন সিঙ্গাপুর। দিব্যি সেন্টোসা দ্বীপ, জুরং পাখিরালয়, মার্লিওন পার্ক ঘুরে-টুরে ক্লান্ত হয়ে হোটেলে ফিরে অর্ডার করলেন খাবার। কিন্তু সিঙ্গাপুরের মালয় বা চিনে খানাদানা নয়, একেবারে গরম গরম ধোঁয়া ওঠা খিচুড়ি-লাবড়া এসে হাজির হল আপনার সামনে!
স্বপ্ন নয় কিন্তু। এবার এমনটাই ঘটিয়ে ফেলেছেন বাঙালি শেফ অর্চনা চন্দক। এমনিতে সিঙ্গাপুরে ভারতীয় সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ। সে দেশের চারটি সরকারি ভাষার একটি তামিল। মান্দারিন ও মালয়ের পরেই তামিলভাষীদের আধিক্য। উপনিবেশের যুগে ভাগ্যান্বেষণে বেরিয়ে মাদ্রাজ, কোঙ্কন, সিংহল, গুজরাত ও সিন্ধু প্রদেশ থেকে বেনেরা দলে দলে ভিড় জমিয়েছিলেন এই দ্বীপে। সে অবশ্য বহুকাল আগের কথা। আজকের জাঁকজমকের ছিটেফোঁটাও তখন ছিল না। কিন্তু আজ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার খ্যাতনামা বাণিজ্যকেন্দ্র সিঙ্গাপুরে কার্যত সারা ভারত থেকেই লোকে চাকরি, ব্যবসা বা পড়াশুনার সূত্র যান। যার একটা বড় অংশ প্রবাসী বাঙালিরা।
তাঁদের জন্যই এবার একটা আস্ত ক্লাউড কিচেন খুলে ফেলেছেন অর্চনা। নাম রেখেছেন 'বাংলা-বন্ধু'। কলকাতার লেক গার্ডেন্সে জন্ম, বেড়ে ওঠা অর্চনার। পড়াশোনা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারপর প্রায় দুই দশক কাটিয়েছেন বিশ্বের নানা প্রান্তে। বরাবরই খাবার নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালাতে ভালবাসেন অর্চনা। বিদেশে থাকার অভিজ্ঞতার সুবাদেই বললেন, 'ভারতীয় খাবার কত বৈচিত্র্যময়। অথচ ভারতের বাইরে গেলেই যেন সেসব কতগুলো সাধারণ রেসিপিতে নেমে আসে। তার বাইরে ভারতীয় ফ্লেভার প্রায় সবই হারিয়ে যায়। আমি চেয়েছিলাম ওটাই বদলাতে। বিদেশে থাকার পরেও বাড়ির খাবার নিয়ে তো একটা নস্টালজিয়া থাকে। চেয়েছিলাম ওটাই যেন তৈরি করতে পারি।'
কী কী রাখছেন মেনুতে? অর্চনার 'বাংলা-বন্ধু'-তে পাওয়া যাবে একেবারে খাঁটি কলকাতা ধাঁচের কাঠি রোল। পাওয়া যাবে ভোগের খিচুড়ি-লাবড়া, শুক্তো, এঁচোড়ের তরকারি, বাসন্তী পোলাও, মাছের ঝোল, মোচার চপ, কষা মাংস, ছানার ডালনা আমের চাটনি। রয়েছে বিরিয়ানি। এমনকী শেষপাতে পাওয়া যাবে রসগোল্লা, কালাকাঁদ। এমনিতে জিআই ট্যাগ পাওয়ার দৌড়ে নেমে কিছুদিন আগে অবধিও রসগোল্লা নিয়ে দড়ি টানাটানি চলছিল বাংলা ও ওড়িশার। কিন্তু অর্চনার দাবি, তাঁর রসগোল্লা কলকাতার যে কোনও নামী মিষ্টির দোকানের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে। পাশাপাশি, ছুটকো আড্ডার রসদও আছে তাঁর দরবারে। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি, অর্চনার হেঁসেলে মিলবে ঝালমুড়ি, চপ, ফিশ ফ্রাই।
ইতিমধ্যেই অর্চনার রান্নার সুনাম সিঙ্গাপুরের প্রবাসী বাঙালি মহলে তুমুল সাড়া ফেলেছে। বিষুবরেখার ঠিক ওপরে অবস্থিত সিঙ্গাপুরের আবহাওয়া খুবই গুমোট। বছরের সারাক্ষণই একটা গরম থাকে, বিকেলে কয়েক পশলা বৃষ্টি হয়। সিঙ্গাপুরে নতুন কাজে আসা বা পড়তে আসা বাঙালিদের পক্ষে চট করে স্থানীয় খাবারের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া সহজ হয় না। বিদেশে এসে একটু বাঙালি খাবারের জন্য তো প্রাণ আইঢাই করবেই। সেদিক দিয়ে সিঙ্গাপুরের প্রবাসী বাঙালিদের কাছে অর্চনার 'বাংলা-বন্ধু' সাক্ষাৎ আশীর্বাদের মতো। অনেকেই নিয়মিত আহারাদি সারেন সেখানে। বাড়ির বড় অনুষ্ঠানেও খাবার যায় 'বাংলা-বন্ধু' থেকে। মাত্র আঠেরো মাসে গুগলে পাঁচে সাড়ে চার রেটিং আদায় করে নিয়েছেন অর্চনা। রিভিউ আছে চারশোর বেশি। সিঙ্গাপুরের বাঙালি মহল্লায় বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশনে সম্প্রতি রসগোল্লা খাওয়ার প্রতিযোগিতা আয়োজন করে হইচই ফেলে দিয়েছে বাংলা-বন্ধু।
তবে আর দেরি কেন? কথাতেই আছে, বাঙালির পায়ের তলায় সর্ষে। সেখানে সিঙ্গাপুর গিয়ে যদি পাতে পড়ে গরম গরম সর্ষে ইলিশ বা সর্ষেভাপা কাতলা, আর কিছু দরকার লাগে কি?